শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় – অতিক্রান্ত শতবর্ষের অনুভব (পর্ব – ১)

“পাখিরে দিয়েছ গান, গায় সেই গান,

তার বেশি করে না সে দান।

আমারে দিয়েছ স্বর, আমি তার বেশি করি দান,

আমি গাই গান।”

  • রবীন্দ্রনাথ, বলাকা

সালটা মনে আছে – ১৯৫৮। বাবা একটা রেডিও কিনলেন – আমাদের সংসারের প্রথম অলঙ্কার! সঙ্গে নিয়মিত আসতে লাগলো ‘বেতার জগৎ’। বাবা দাগ দিয়ে রাখতেন – কবে কোন শিল্পীর কী গান। বাড়িতে নিয়ম করে গান শোনার একটা পরিবেশ তৈরি হল। আমি তখন স্কুলের নীচু ক্লাসের ছাত্র। কিন্তু ওই বয়সেই আমি কলকাতা ‘ক’-এ অন্যান্য কিছু অনুষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত শুনতাম – অনুরোধের আসর, রম্যগীতি আর ছায়াছবির গান (চিত্রগীতি)। পরে হিন্দি গান শোনা শুরু হল ‘বিবিধ-ভারতী’-তে। যতদূর মনে পড়ছে, তখনও সরাসরি সম্প্রচার বা নির্ধারিত শিল্পীর অনুপস্থিতিতে স্টুডিওতে রেকর্ড করা গানের পরিবেশন ছাড়া রবীন্দ্রনাথের গ্রামাফোন ডিস্কের গান নিয়ে নিয়মিত কোনও অনুষ্ঠান ছিল না। সেটা আরও পরে। অবশ্য তখনও আমার ভাবনায় রবীন্দ্রনাথের গান অতিরিক্ত মুল্য পায়নি। বয়সটাই বা কী ছিল, গানের কথার থেকে সুরই তাড়িয়ে বেড়াত বেশি করে। তখন সব শিল্পীদেরই মনমাতানো গানগুলো আমাকে আকর্ষণ করতো, আবিষ্ট করে রাখত, যা এখনও করেই চলেছে; যেমন শচীনদেব বর্মনের ‘তুমি আর নেই সে তুমি’ বা ‘বধু গো ওই মধুমাস বুঝি বা বিফল হলো।’, মান্না দের ‘ও আমার মন যমুনার অঙ্গে অঙ্গে’, ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের ‘মাটিতে জন্ম নিলাম মাটি তাই রক্তে মিশেছে’, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘জীবনে যদি দীপ জ্বালাতে নাহি পার’, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের ‘ওগো মোর গীতিময়’ বা উৎপলা সেনের কণ্ঠে সলিল চৌধুরীর ‘প্রান্তরের গান আমার’ – যে গানটা প্রথমে অনেক আগ্রহ নিয়ে গাইবার পরেও কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর রেকর্ড করা হলো না। কিন্তু বিশেষ করে যাঁর গলায় গান, সে যে-গানই হোক, আমাকে তখন থেকেই আবিষ্ট করে রাখতো – তিনি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। হোক সে-গানগুলো সলিল চৌধুরীর ‘গাঁয়ের বধূ’, নিজের সুরে ‘ও আকাশ প্রদীপ জ্বেলো না’, সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সুরে ‘তোমার আমার কারো মুখে কথা নেই’, বা রবীন্দ্রনাথের ‘অরূপ তোমার বাণী’, ‘প্রাঙ্গণে মোর শিরীষ শাখা’ বা ‘যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন’ ইত্যাদি, ইত্যাদি।

বেতার জগতের প্রচ্ছদ

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কন্ঠই আমাকে আস্তে আস্তে সম্মোহিত করে প্রথম ভালোবাসতে শেখালো রবীন্দ্রনাথের গানকে! পরে অবশ্য অনেকেই এলেন রবীন্দ্রনাথের গানের ডালি সাজিয়ে, আমাকে মুগ্ধও করলেন। সেই গানের হাত ধরেই শুরু হল আমার রবীন্দ্র-রচনায় বিচরণ। সেখান থেকেই উৎসাহ জাগলো রবীন্দ্রনাথকে জানার; পরিচয় হল এক অফুরান, কর্মময় জীবনের সঙ্গে, যা তাঁর অতুলনীয় সৃষ্টির থেকেও মহৎ! আশ্রয় পেয়ে ধন্য হলাম ‘হে পূর্ণ তব চরণের কাছে’ আশ্রয় চাওয়া একটি মানুষের। কোন প্রসঙ্গ থেকে কোন প্রসঙ্গে চলে এলাম! যে-কোনো প্রসঙ্গেই রবীন্দ্রনাথে পৌঁছে যাওয়াটা একটা বদভ্যাস, জানি। কিন্তু কী আর করা, সেদিনকার আঁধারের যাত্রী এক অপরিণত বালকের হাতে সেই আশ্রয়টার খোঁজে মনে প্রথম আলোটা জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। তাই জীবনের উপান্তে এসে তাঁকে প্রণাম জানাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ আমার কাছে অনিবার্য। সেই গানের প্রসঙ্গ দিয়েই শুরু করা যাক।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তাঁর বাংলা আধুনিক গানের প্রথম সুরকার শৈলেশ দত্তগুপ্তের উপদেশেই রবীন্দ্রসংগীতের জগতে আসেন। কোনও গুরু নেই, নেই বিশ্বভারতীর কোনও ছাপ; সম্বল শুধু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা থেকে যোগাড় করা রবীন্দ্রনাথের গানের স্বরলিপি আর পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া গান, তাঁর গায়কী। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রথম দিককার আধুনিক গানেও পঙ্কজ মল্লিকের প্রভাব খুব স্পষ্ট। অবশ্য অচিরেই তার থেকে মুক্ত হয়ে নিজের ঘরানায় প্রতিষ্ঠিত হলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের গানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের বৈশিষ্ট্য একেবারে স্বতন্ত্র; শান্তিদেব ঘোষের কথায় ‘দরদী নিজস্বতা’; কিন্তু শৃঙ্খলাবিহীন বা কোথাও স্বেচ্ছা-আরোপিত নয় – বরং সেখানে আছে এক পরিমিতিবোধ নিয়ে নিজেকে সমর্পণ। নিজের বিচরণ-ক্ষেত্রের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন বলে তাঁর গায়নে কোনও সমস্যা সৃষ্টি নেই; যন্ত্রানুষঙ্গের বিরক্তিকর আধিক্য নেই, আছে সঠিক নির্বাচিত গানের সজীব পরিবেশনা। নিখুঁত উচ্চারণে সুডৌল স্বর যেন কোন গভীর গোপন থেকে উৎসারিত হয়ে আসে। সেখানে ‘হটাৎ’, ‘রিদয়’, ‘মিত্যু’ ইত্যাদি অনভিপ্রেত উচ্চারণের অনধিকার প্রবেশ নেই। রবীন্দ্রসংগীতের ভাবে জারিত এমন উপস্থাপনায় যখন যুক্ত হয় তাঁর কন্ঠের অনুপম লাবণ্য তখন রবীন্দ্রনাথের গানে তাঁর সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা অর্থ খুঁজে পায়।

তাই বলছিলাম, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসংগীত শিক্ষা আসলে একলব্যের সাধনা। এই সাধনাই তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। রবীন্দ্রসংগীতের ‘ভাব’-কে তিনি আত্মস্থ করতে পেরেছিলেন। সেই কারণে রবীন্দ্রসংগীত বিশেষজ্ঞ, গুণীজনদের কাছও তিনি পেয়েছেন সমাদর। শান্তিদেব ঘোষ যথার্থই বলেছিলেন –“গুরুদেবের বিভিন্ন পর্যায়ের বিভিন্ন গান যে সহজ-সরল আবেদন নিয়ে শ্রোতার কাছে পৌঁছে দিয়েছে – সে ওই হেমন্ত…আধুনিক বাংলা গানই শুধু নয় – অন্যান্য লঘু-সংগীত বা হিন্দি ছবির গানের পাশাপাশি ও রবীন্দ্রসংগীতকে নির্ভুলভাবে আয়ত্ত করে নিতে পেরেছে – আপন করে নিতে পেরেছে – এ বড় কম কথা নয়।”

লক্ষ করার বিষয়, রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য-গীতিনাট্যের ক্ষেত্রে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় একেবারে গোড়া থেকেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী। একটা সময়ে ‘শ্যামা’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘চন্ডালিকা’-র অনুষ্ঠানে সবার সব গান তিনি একাই গেয়ে গেছেন! রবীন্দ্রসংগীতের জগতে যোগ্য পুরুষ-কন্ঠের অভাব ছিল না; কিন্তু শ্যামা, শাপমোচন, বাল্মীকি প্রতিভা, চন্ডালিকা, ভানুসিংহের পদাবলী, চিরকুমার সভার ডিস্কে মূল পুরুষ-কন্ঠ সবই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের! ‘চিত্রাঙ্গদা’-তে প্রথমে হেমন্ত ছিলেন না। পরে গ্রামাফোন কোম্পানি বাধ্য হয়ে আবার ‘চিত্রঙ্গদা’ রেকর্ড করে, যেখানে অর্জুনের গানগুলো হেমন্ত একাই গাইলেন। সুর থেকে একটুও বিচ্যুত না হয়ে নাটকের দাবি কীভাবে মেটানো যায় তার নিদর্শন পাই এই গীতিনাট্যগুলোতে। বালকের বেশে চিনতে না পারা সখী-পরিবৃত চিত্রাঙ্গদাকে দেখে অর্জুনের সেই সকৌতুক অবজ্ঞার অভিব্যক্তি শোনার মতো হেমন্ত-কণ্ঠে –

“হাহাহাহা হাহাহাহা, বালকের দল,

মা’র কোলে যাও চলে – নাই ভয়।

অহো, কী অদ্ভুত কৌতুক।”

পঙ্কজকুমার মল্লিক গান্ধীজিকে ‘ওই ভুবনোমনোমোহিনী’ গানটি শুনিয়েছিলেন। এই দুর্লভ সৌভাগ্যের কথা স্মরণ করেও পঙ্কজবাবু আমাদের জানিয়েছেন যে, এই গানটা তিনি হেমন্তর মতো গাইতে পারেননি, বিশেষ করে ওই ‘মা’ ডাকটা! এমনই অনেক গান, ধরুন তাঁরই গলায় ‘নিশীথে কী কয়ে গেল মনে’, ‘চলে যায় মরি হায়’, ‘এপারে মুখর হল কেকা ওই’, ‘যৌবনসরসীনীরে’, ‘কেন যামিনী না যেতে’ বা ‘কাহার গলায় পরাবি গানের রতন হার’-এর মতো গানের পরিবেশনে সেই তৃপ্তির শিখরে তাঁরা আমাদের পৌঁছে দিতে ব্রতী হননি যাঁরা প্রশ্নাতীত দক্ষতায় ‘চিরসখা হে’, ‘বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী’, ‘এ মোহ আবরণ’, ‘এ পরবাসে রবে কে’, ‘মন্দিরে মম কে’ বা ‘কে বলেছে তোমায় বঁধু’-এর মতো ধ্রুপদী অঙ্গের গান নিখুঁত গেয়ে আমাদের শ্রদ্ধা এবং সম্ভ্রম কুড়িয়ে থাকেন। রবীন্দ্রনাথেরই সৃষ্টি করা অনেক ‘সাদামাটা’ গান যদি কারও কাছে তাচ্ছিল্যের সামগ্রী হয়ে থাকে তাহলে তর্ক করব না; কিন্তু এমন গানকে এমন এক ‘সাদামাটা’ শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের পক্ষে যে-ভাবে আত্মস্থ করা সম্ভব হয়েছে, আর কারও পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

পঙ্কজকুমার মল্লিক ও হেমন্ত

নিজের গানের শিল্পী নির্বাচনে মহিলাদের প্রতি রবীন্দ্রনাথের দুর্বলতা স্পষ্ট। স্বরলিপি তৈরির ক্ষেত্র ছাড়া পুরুষেরা স্বতন্ত্র গায়কের মর্যাদা সেখানে আর পেলেন কোথায়! তাঁদের মধ্যে অনেকেই নামী সংগীত-শিক্ষক হয়েছেন, এই পর্যন্ত! দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা স্মরণে রেখেও এই বাস্তবতাকে স্বীকার করতে হয়। তাও তো সেই স্বরলিপির ক্ষেত্রে ইন্দিরাদেবী এবং সরলা দেবীরও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। রবীন্দ্র-ভাবনায় গড়ে ওঠা শান্তিনিকেতনই বিগত প্রায় এক শত বছরে জন্ম দিয়েছে বহু স্মরণীয় এবং প্রণম্য মহিলা শিল্পীদেরই যাঁদের অনেকেই পরবর্তীকালে যথেষ্ঠ জনপ্রিয়তাও অর্জন করেছেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে শান্তিনিকেতনে কিছুকাল কাটালেও সুচিত্রা মিত্র অবশ্যই তাঁর স্বাতন্ত্র্য নিয়েই মহীয়সী! কিন্তু শান্তিদেব ঘোষ অথবা অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নিতান্তই দু’এক জন ছাড়া আমাদের হৃদয়ে ঠিক তেমন করে আর কোনো পুরুষ-কণ্ঠ তো আলোড়ন তোলেন না। সুবিনয় রায়ের প্রসঙ্গ অবশ্যই আসবে, কিন্তু তাঁকে সেই অর্থে শান্তিনিকেতনের ফসল বলা যাবে না।

শুধু পুরুষ-কণ্ঠ হিসাবে নয়, রবীন্দ্র-সংগীতের সামগ্রিক জনপ্রিয়তার পিছনে কৃতিত্বটা কিন্তু তিন স্মরণীয় ব্যক্তিত্বের – পঙ্কজকুমার মল্লিক-হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-দেবব্রত বিশ্বাস। এই সত্যটা চেষ্টা করেও অস্বীকার করা যাবে না, আর ‘জনপ্রিয়তা’ শব্দটি এখানে কোনো নেতিবাচক বা নিন্দনীয় বিশেষণ নয়। এই তিনজনই আমার প্রাণের শিল্পী, যদিও রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে গিয়ে এঁদের প্রত্যেকের গাওয়া বিশেষ বিশেষ গানের প্রতি আমার পছন্দ এবং আকর্ষণটা আমার অনুভব দিয়ে আলাদা করে বিচার সাপেক্ষ। এঁদের মধ্যে প্রথম দুজন মোটামুটি একই ঘরানার শিল্পী, তবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ তুলনায় তো অনেক refined । এই দুই শিল্পী রবীন্দ্রনাথের ধ্রুপদী অঙ্গের গানকে খুব স্বাভাবিক এবং সচেতন ভাবেই এড়িয়ে গেছেন। পঙ্কজ মল্লিকের গাওয়া গান নিয়ে কদাচিৎ কিছু প্রশ্ন উঠে থাকলেও, তাঁর নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে সচেতন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানে কিন্তু বিতর্কের কোনো ইন্ধন মনে পড়ে না। অবশ্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান সম্পর্কে পছন্দ-অপছন্দের প্রশ্নটি স্বতন্ত্র, যেখানে ব্যক্তিগত রুচির একটা কার্যকরী ভূমিকা থাকে। যুক্তি-তত্ত্ব দিয়ে তো ভাললাগার বিচার হয় না।

হেমন্ত ও দেবব্রত

দেবব্রত বিশ্বাস অবশ্যই বিশিষ্ট তাঁর গায়কীতে। দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া বেশ কিছু রবীন্দ্রনাথের গানে তাঁরই আধিপত্য স্বীকৃত। এমন বহু রবীন্দ্রনাথের গানের ক্ষেত্রে তিনি অবিকল্প। গায়ন-শৈলীতে স্বতন্ত্র আভিজাত্য রবীন্দ্রনাথের গানে দেবব্রত বিশ্বাসকে দিয়েছে এক অনন্য মর্যাদা! ভাবতে ভাল লাগে না যে, আমাদের হৃদয়ের পাশে পরম ভালবাসার নিবিড়তায় আশ্রিত এমন শিল্পী জড়িয়ে পড়লেন বিশ্বভারতীর সঙ্গে এক অনভিপ্রেত বিতর্কে। নিদারুণ অভিমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ঘরে বসে গাইলেন বটে অনেক গান, কিন্তু সেখানে কোথায় যেন আমাদের একটা অভাববোধ থেকে গেল! পঙ্কজ মল্লিক এবং বিশেষ করে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যে পথটাকে সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন দেবব্রত বিশ্বাস কিন্তু সেখানে কখনও কখনও সাহসী। এই মুহূর্তে দেবব্রত বিশ্বাসের গাওয়া দুটো গানের কথা মনে পড়ছে – ‘কিছুই তো হল না’ আর ‘নাচে শ্যামা তালে তালে’। কিন্তু কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে এমন দুটি গান শোনার পরে যে অনুপম অনুভূতিতে রোমাঞ্চিত হই, ঋদ্ধ হই এক অসীম তৃপ্তিতে তার তুলনা মেলা না! তখন বিশেষ এই ধরণের গানে এই দুজন শিল্পীর পরিবেশনার গুণগত তফাতটা ধরা পড়ে। তাহলে মানতে হয় যে, গুণী শিল্পীদের কণ্ঠেও রবীন্দ্রনাথের সব গান সবাইকে সমান ভাবে স্পন্দিত করতে পারে না। সব গান সবার জন্য নয়ও। রবীন্দ্রনাথের কোনো বিশেষ গান শোনার ইচ্ছায় কোনো বিশেষ পুরুষ কিংবা মহিলা শিল্পীর প্রতি সেই কারণেই আমার পক্ষপাতিত্ব আছেই। গানের নির্বাচনেও শিল্পীর নিজস্ব পছন্দ ও বিচারের ক্ষেত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভবত এই সব কারণেই চল্লিশ থেকে ষাঠের দশক পর্যন্ত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া রবীন্দ্রনাথের বহু গানকে রেকর্ড করার ক্ষেত্রে অন্য শিল্পীরা ওই সময়ে প্রায় এড়িয়েই গেছেন।

LP Record 1965

১৯৬৫ সালে রবীন্দ্রসংগীতের একটি L.P. প্রকাশ করার সময় তাঁর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়ন করে Columbia Gramophone Company লিখেছে – “Hemanta Mukherji is considered to be amongst the foremost exponents of Rabindra-Sangit in the country. He, himself a composer of no mean order, possesses that easy versatility whereby whatever type of songs he decides to sing, he does it in a manner as if born to it. It is this rare talent that gives him effortless mastery over the stylised form of rendering associated with Tagore songs.”

ক্রমশ … পর্ব – ২

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


4 2 votes
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
সৌরভ হাওলাদার
সৌরভ হাওলাদার
2 months ago

সমসাময়িক অন্য গুণী গায়ক গায়িকাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও, এটা বলা অত্যুক্তি হবে না, যে কয়েকজন শিল্পী রবি ঠাকুরের গান সাধারণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে দেবব্রত বিশ্বাস, সুচিত্রা মিত্র এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অন্যতম।