“The important thing is not to stop questioning. Curiosity has its own reason for existing. One cannot help but be in awe when one contemplates the mysteries of eternity, of life, of the marvelous structures of reality. It is enough if one tries to comprehend a little of the mystery every day. Never lose a holy curiosity.”
- EINSTEIN
“কান পেতেছি, চোখ মেলেছি, ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান ।”
- রবীন্দ্রনাথ
সত্য ও সুন্দর মানব-নির্ভর কি না – এই নিয়ে আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথের যুগলবন্দী সংলাপ যারা শোনেননি তাঁদের জন্য আপসোস হয়। কারণ, এমন সংগীতের সত্যিকারের সমঝদার হওয়ার আদৌ যোগ্যতা না থাকলেও এবং বিজ্ঞানের ছাত্র না হওয়া সত্ত্বেও, বারবার তাঁদের দুজনের আলাপ দরজার বাইরে থেকে উঁকি দিয়ে শুনেই শিহরিত হই।
“আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেলালুম আকাশে,
জ্বলে উঠলো আলো
পুবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’,
সুন্দর হল সে।”
‘শ্যামলী’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত এই কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ লেখেন ১৯৩৬ সালের ২৯ মে তারিখে। ১৯২৬-এর পরে ১৯৩০ সালে আইনস্টাইনের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ হয়েছিল চারবার। ১৪ জুলাই তারিখে বার্লিনের কাছে কাপুথ শহরে আইনস্টাইনের বাড়িতেই তাঁর সঙ্গে এবারের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। এই সাক্ষাতের পর, এমনকি এই কবিতাটি লেখার সময়েও, পদার্থ বিজ্ঞানের ‘কোয়াণ্টাম’ তত্ত্ব সম্পর্কে কবির কোনো ধারণা ছিল কিনা জানি না। কবি জানতেন কি, এ-বিষয়ে তাঁর ভাবনা বিজ্ঞানের দর্শনের উপরই একটা উজ্জ্বল আলো ফেলছে? বস্তুত নিলস্ বোর, হাইজেনবার্গের মতো বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক এবং কোয়াণ্টাম তত্ত্বের উদ্ভাবকদের সওয়াল সম্পর্কে সেদিন প্রশ্ন তুলেছিলেন বটে আইনস্টাইন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানাচার্যের সেদিনকার সেই সন্দেহের নিরসনও ঘটেছে।
দুজনের আলাপ পড়লে ভাবতে খুব অবাক লাগে। বিজ্ঞানের মতো দুরূহ জ্ঞানতত্ত্বের এই গভীর আলোচনায় কখনও মনে হয় না রবীন্দ্রনাথ লেশমাত্র অনুপযুক্ত। মনে হচ্ছে, রবীন্দ্রনাথ যা নিয়ে বলছেন তার উপর তাঁর সম্যক অধিকার। নিজের বক্তব্যের প্রতি এত আত্মবিশ্বাস কী করে অর্জন করলেন তিনি? বুঝি না। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, বিশ্বের যা কিছু সত্য সবই মানবিক সত্য তখন বুঝতে আমার একটু অসুবিধা হয়ই; কিন্তু তাই বলে সত্য মানব-নিরপেক্ষ এই মতে বিশ্বাসী আইনস্টাইন যখন উত্তর দেন, “আমি প্রমাণ করতে পারব না যে আমার ধারণা সঠিক, কিন্তু এটাই আমার ধর্ম” তখন সত্যি বড় বিপদে পড়ি। আইনস্টাইন যা প্রমাণ করতে পারছেন না তা তাঁর বিশ্বাসের বিষয়। এই বিশ্বাসটা তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই তাকে তাঁর নিজের ধর্মের অঙ্গ বলে মনে করছেন। আইনস্টাইন কোনো ধর্মে বিশ্বাস করতেন না। কিন্তু এমন কিছু সত্য আছে যা মানব-নিরপেক্ষ, আমাদের দেখা বা না দেখার উপর যার অস্তিত্ব নির্ভর করে না, এমনটা অবশ্যই তিনি বিশ্বাস করতেন। আর একটা কথা এই অবসরে বলে নিই। কিটস্ কবিতায় truth আর beautyকে মিলিয়েছেন বটে, Dr. Radhakrishnan তাঁর ‘The Philosophy of Rabindranath Tagore’ বইতে কবিতা এবং দর্শনের তুলনা করতে গিয়েও সত্য আর সুন্দরকে এক করে দেখেছেন বটে, এমন-কী স্বয়ং রবীন্দ্রনাথও সত্য আর সুন্দরকে পাশাপশি নিয়েই চলতে চাইতেন বটে, কিন্তু তাতে কি এমন সিদ্ধান্তে আসা যায়, সত্য মাত্রই সুন্দর? হ্যাঁ, সুন্দর মাত্রই সত্য – এ’ তো চিরন্তন সত্য; কিন্তু তাই বলে সত্য কি সব সময় সুন্দর হয়? কী জানি, হতে পারে সত্যের মধ্যে সুন্দরের চিরায়ত রূপ পর্যবেক্ষণের শক্তি সবার থাকে না, হয়তো অসুবিধাটা সেখানেই।
মূল প্রসঙ্গে ফেরা যাক। আইনস্টাইন যখন প্রশ্ন করেন, “তা হলে সত্য কিংবা সুন্দর মানব-নিরপেক্ষ নয়?”
রবীন্দ্রনাথ – না।
আইনস্টাইন – কোথাও মানুষের অস্তিত্ব যদি না থাকে, তবে বেলভিডিয়ারের অ্যাপেলো আর সুন্দর থাকবে না?
রবীন্দ্রনাথ – না।
আইনস্টাইন – সৌন্দর্যের ধারণার সঙ্গে আমি একমত, কিন্তু সত্যের ক্ষেত্রে এটা আমি মানি না।
রবীন্দ্রনাথ – কেন নয়? সত্য তো মানুষের মারফতেই উপলব্ধ হয়।
আইনস্টাইন – আমি প্রমাণ করতে পারব না যে আমার ধারণা সঠিক, কিন্তু এটাই আমার ধর্ম।
ঠিক একই কথা পরে যখন রবীন্দ্রনাধ আবার বলেন, “মানুষের সঙ্গে সম্পূর্ণ অসম্পর্কিত কোনো সত্য যদি থাকে, তবে আমাদের কাছে তা সম্পূর্ণ অস্তিত্বহীন।” শুনে আইনস্টাইনের সেই একই উত্তর –“তা যদি হয় তবে আমি আপনার চেয়ে বেশি ধর্মবিশ্বাসী।” এরপর আর ঠিক এই বিষয়ে আলোচনা অগ্রসর হতে পারে না।
তা হলে সুন্দর নিয়ে দ্বন্দ্ব নেই, দ্বন্দ্ব সত্যের অস্তিত্ব নিয়ে। এখানে একটা ধন্দ লাগে বটে। সুন্দর মানব-নির্ভর নিশ্চয়, কিন্তু সত্যও কি তাই ? তাকিয়ে দেখার মতো কেউ না থাকলে কোনো কিছুকে সুন্দর বলাটা নিরর্থক, নয় কি? তাই তো আইনস্টাইন সত্য আর সুন্দরকে আলাদা করে দেখেন। অথচ রবীন্দ্রনাথের কাছে সত্য এবং সুন্দর দুটোই মানব-নিরপেক্ষ নয়। এরপর রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন, “Beauty is in the ideal of perfect harmony, which is in the universal being; truth is the perfect comprehension of the universal mind.” অস্বীকার করতে পারি না যে, এই দুই মহান মানুষের আলাপের সূক্ষ্ম ব্যঞ্জনা আমাকে আরও ভাবনার রসদ যোগায়। বুঝি, আরও ভাবনার অবকাশ আছে যখন দেখি নোবেলজয়ী পদার্থবিদ ব্রায়ান জোসেফসন কবি ও বিজ্ঞানীর এই আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, “আমার মনে হয়, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন যে আইনস্টাইন যা ভাবছেন, সত্যের ধারণাটা তার চেয়েও সূক্ষ্ম ব্যাপার।
আইনস্টাইনের সঙ্গে কবির সাক্ষাৎকার ধরে রেখেছিলেন আইনস্টাইনের পালিতা কন্যা (বস্তুত তাঁর স্ত্রীর প্রথম পক্ষের সন্তান) মার্গটের স্বামী সাংবাদিক দিমিত্রি মারিয়ানফ। বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে আইনস্টাইন এবং কবির যখন ভাব বিনিময় হচ্ছে তা শুনে মারিয়ানফ বলেছেন, “…শ্রোতা হিসাবে মনে হচ্ছিল, দুটি গ্রহ যেন গল্প করছে।” (It seemed to an observer as though two planets were engaged in a chat.) যাইহোক এটুকু অন্তত বুঝেছি যে, ১৯২৫-২৬ সালে পদার্থবিদ্যায় কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নামে নতুন এক ধারণা জন্ম নিল। সেই অনুসারে বস্তুগত বিশ্ব সম্বন্ধে সেইসব উক্তিই অর্থবহ, যার মূলে আছে পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞান। সুতরাং বাস্তবতা বলতেও বোঝায় মানুষের জ্ঞাত বিশ্বকে। কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বে আইনস্টাইনের তো বিশ্বাস নেই। কারণ, প্রকৃতি কেমন, তার স্বরূপ কী, তা এমন তত্ত্বের আলোচনার বিষয় হতে পারে না। সুতরাং এইটুকু প্রাপ্ত জ্ঞানের নিরীক্ষণেই এ-কথা সহজে উপলব্ধ, আলোচ্য বিষয়ে নিজেদের ভাবনায় কেন দুজনে অবিচল। বিজ্ঞানের দর্শন নিয়ে এই আলোচনার তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় এই যে, আলাপটা একজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে একজন কবির। আলোচনা এগিয়েছে কিন্তু প্রত্যাশিত ভাবে নয়, ভাবনার একেবারেই উলটো পথে। কবি এখানে বলেছেন বিজ্ঞানের কথা, যেখানে সাধনার মধ্যে দিয়ে, জাগ্রত চৈতন্যের মধ্যে দিয়ে মানুষই জানতে চেয়েছে প্রকৃতিকে – সত্য ও সুন্দরের স্বরূপকে। অথচ বিজ্ঞানী আমাদের শোনাচ্ছেন প্রমাণহীন বিশ্বাসের কথা – সত্যকে মানুষের চৈতন্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখার কথা। সত্যি বড় বিচিত্র এই আলোচনা।
স্বীকার তো করেছিই, এই আলোচনার তল পেতে আমার আরও অনুধ্যানের অবকাশ আছে। বুঝি না, এই অযোগ্য আমি, তবু কেন বারবার ছুটে যাই এই দুই মহান মানুষের পদপ্রান্তে; শুনতে চাই সেই আলাপ, বুঝতে চাই সত্য আর সুন্দরের স্বরূপ, নিজের মতো করেই একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাই – কোন ভাবনার পথ ধরে এগিয়ে যাবে মানুষ। হঠাৎই চোখে পড়ে গেল একটি লেখা। ১৯৭৭ সালে পদার্থবিদ্যায় ক্রান্তিকারী গবেষণার জন্য নোবেল প্রাপ্ত বিজ্ঞানী ইলিয়া প্রিগোজিন (Ilya Prigogine) লিখছেন –
“The question of meaning of reality was the central subject of a fascinating dialogue between Einstein and Tagore. Einstein emphasized that science had to be independent of the existence of any observer…. Tagore maintained that even if absolute truth could exist, it should be inaccessible to the human mind. এই পর্যন্ত পড়ার পর শেষে এসে চমকে যেতে হয় – “Curiously enough, the present evolution of scince is running in the direction stated by the great Indian poet.” বিজ্ঞান বর্তমানে বিবর্তিত হচ্ছে ভারতের এক মহান কবির প্রদর্শিত পথে!
আরও একটু কথা রয়ে গেছে। Quantum mechanics খায় না মাথায় মাখে, প্রায় এমন শিক্ষা নিয়ে আমার লেখাটা যে কিছুই-তো-হলো-না গোছের হবে সে আগাম আন্দাজ ছিলই। তাহলে তো প্রশ্ন ওঠেই, আমি এই নিয়ে কথা বলতে গেলাম কেন? আসলে বহুদিন ধরে বহুবার আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথের এই সাক্ষাৎকার পড়তে পড়তে কবি ও বিজ্ঞানীর অসম দ্বন্দ্বের রহস্যটা আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে, আর সেই থেকে একটা বোধ আমার মনের মধ্যে ক্রমশ দানা বেঁধেছে। একটা ব্যাপার ভালো করেই লক্ষ করেছি যে, রবীন্দ্রনাথ তো বটেই এমনকি স্বয়ং বিজ্ঞানাচার্য পর্যন্ত কেউই বিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে আলোচনাকে ভারাক্রান্ত করেননি। তাঁরা নিজেদের বিচারে যা বলেছেন যেটুকু বলেছেন, তা বলেছেন বিজ্ঞানের বিশুদ্ধ দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে। তাঁরা কোনো কালের বিচার না করে নিজেদের বিজ্ঞান-ভাবনায় যেটা মনে হয়েছে শাশ্বত তাই বলেছেন। কোনো তর্ক-বিতর্ক নেই, প্রত্যেকে প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে বলার সুযোগ দিচ্ছেন, একে অপরকে শুনছেন শ্রদ্ধার সঙ্গে – যা সত্যিই দুটি গ্রহের মধ্যে আলাপের সমতুল্য। তাঁদের সেই বিশ্বাস অথবা বিচারকে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের প্রমাণিত তত্ত্ব কতটা মান্যতা দেবে এমন উৎকণ্ঠা সেদিন তাঁদের ছিল বলেও তো মনে হয় না।
সত্যি কথা বলতে কি, আধুনিক বিজ্ঞান আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথের সেদিনের কোন কথাটাকে মান্যতা দিল সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছাড়াই তাঁদের দার্শনিক ভাবনার উত্তাপই আমাকে বেশ আলোড়িত করেছে। বিশেষ করে বুঝতে চেয়েছি, কোন চেতনার সঞ্চারে একজন কবি এতটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে একজন যুগশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর সামনে নিজেকে এমন করে মেলে ধরতে পারেন। সেই কিশোর বয়সেই পিতা মনের মধ্যে যে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বীজ বপন করে দিয়েছিলেন তারই ফলে আমৃত্যু বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আন্তরিক অনুসন্ধিৎসা বর্তমান ছিল। তাঁর বিপুল সাহিত্য ভাণ্ডারে এর প্রমাণ লক্ষ করা গেছে। সমৃদ্ধ চিন্তন নিয়ে একজন কবিই পারেন ‘বিশ্বপরিচয়’-এর বিজ্ঞানকে কাব্যের মর্যাদা দিতে। আধুনিক বিজ্ঞানের যে তত্ত্ব ও গবেষণালব্ধ ফল, যার সঙ্গে আইনস্টাইনের নিবিড় পরিচয়, তা তো রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে আশা করা যায় না। রবীন্দ্রনাথের পুঁজি তাঁর অসাধারণ কল্পনাশক্তি, মানব-জীবন ও প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করার অচিন্তনীয় ক্ষমতা আর বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা – যা থেকে জন্ম নিয়েছে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস। আমরা ভুলে যাব না, ১৯৩০ সালেই তিনি দিচ্ছেন তাঁর Hibbert Lectures – The Religion of Man । বই হিসাবে ছাপা হবার সময় এরই পরিশিষ্টতে সংযোজিত হয়েছিল আইনস্টাইনের সঙ্গে এই কথাবার্তার বিবরণ। লেখার শুরুতে আমি ‘আমি’ কবিতাটির উল্লেখ করেছি। সেখানে ‘আমি’ তো নিছক আমি নয় – সেটায় আছে সর্বজনীন মানুষের চেতনার প্রতিনিধিত্ব; যার মধ্যে শুধু ভাবনা নয়, নিহিত আছে মানুষের অহংকার দিয়ে সৃষ্টির ইতিহাস। –
“গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম,
সুন্দর, সুন্দর হল সে।
তুমি বলবে, এ যে তত্ত্বকথা,
এ কবির বাণী নয়,
আমি বলব, এ সত্য,
তাই এ কাব্য।
এ আমার অহংকার,
অহংকার সমস্ত মানুষের হয়ে।
মানুষের অহংকার-পটেই
বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প।”
এখানে আইনস্টাইনের সঙ্গে কবির সেই অমূল্য আলাপ দিয়েই নিজের ভাবনাকে জারিত করতে চেয়েছি মাত্র ।
——————————————————–
ঋণ স্বীকার :
রবীন্দ্ররচনাবলী /৩ / প.ব. সরকার (১৯৮৩)
রবীন্দ্রনাথ ও বিজ্ঞান / দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়
রবীন্দ্রনাথ ও আইনস্টাইনঃ দুই শীর্ষ বক্তিত্ব / প্রসাদ রঞ্জন রায়
The Religion of Man / Rabindranath Tagore
[লেখকের অন্য রচনা]
আমাদের সত্যি ও সুন্দরের ধারণা এতটা উচ্চ ডালে উঠতে পারে না। কিন্তু অনুভবের আয়নায় তার ছায়া পড়ে। দুটি গ্রহের ভব বিনিময় আগে কখনও পড়েছিলাম। আবার তার ছোঁওয়া পেলাম, মুদ্ধ হল। জটিল বিষয়কে লেখক তার প্যান্ডিত্য দিয়ে ঢেকে ফেলেন নি … আমাদের মত গোলা লোকের কথা ভেবে সাধ্যমত পথ সোজা করে দিয়েছেন। তার জয় হোক।
যথার্থ বলেছেন।
ধন্যবাদ।
এমন একটি নিবন্ধের ওপর মন্তব্য করা আমার কাছে বেশ
কঠিন।তবে নন্দনতত্ত্ব নিয়ে এমন আনন্দজনক লেখা পড়ে প্রভূত আনন্দ পেয়েছি সে কথাটা জানাতে কসুর করবো না। আর একটি কথা জানানো আমার কাছে সহজ সেটা হল রবীন্দ্রনাথের গানে তাঁর এই বিশ্বাসের কথা কতভাবেই না পেয়েছি –যেমন ” আমি এই আলোতে চোখ মেলব যবে
তোমার এই চেয়ে দেখা সফল হবে।
এ আকাশ দিন গুণিছে তারই তরে।”
বা –“আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর তোমার প্রেম হতো যে মিছে।”
আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।
আপনাকে আমার নমস্কার জানাচ্ছি।
যে অগণিত গ্রহ তারার মধ্যে আমাদের অস্তিত্ব, একদিক দিয়ে এ যেমন অকিঞ্চিৎকর, আবার অন্যদিকে এই অস্তিত্বটি সেই ‘বৃহৎ’এর অংশমাত্র, তা সে যত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র-ই হোক না কেন। পেয়ালার জলে পড়া সূর্যের প্রতিবিম্বে, সূর্যের বৈশিষ্ট্যই প্রতিফলিত হয়। তাই সেই ছোট প্রতিফলনের অস্তিত্বটি না থাকলে, মূলটিও না থাকার সম্ভবনা, বাতিল হয়না। তার একমাত্র কারণ, সেও সেই অসীমেরই অংশ। ভারতীয় দর্শনের এই কেন্দ্রীয় তত্ত্ব, রবীন্দ্রনাথ বারে বারে তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টিতে প্রকাশ করেছেন, নিজের জীবনেও তা পালন করে, মৃত্যুকে অতিক্রম করে গিয়েছেন, অনায়াসে।
ঠিক কথা।
হিমাদ্রি বাবু যে বিষয়ের ওপর লিখেছেন তার ওপর মন্তব্য করার বিষয়ে নিজেকে একেবারেই যোগ্য মনে করিনা, কিন্তু দর্শনের(বিজ্ঞানেরও) একটা তাত্বিক বিষয়কে যে কথন ভঙ্গিমায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন তিনি সেটি আমাকে খুব আনন্দ দিয়েছে।গোটা লেখাটার মধ্যে কাউকে কিছু বোঝাবার চেষ্টা নেই,একটা দার্শনিক ধারণার সঙ্গে নিজের বোঝাপড়ার গল্পই যেন লেখক শুনিয়ে গেলেন, তত্বের গাম্ভীর্য কে দূরে সরিয়ে রসের মাদকতার সঙ্গে।
লেখাটা পড়তে পড়তে একটা বাংলা আধুনিক গানের কথা মনে হচ্ছিল,”রূপের ঐ প্রদীপ জ্বেলে কী হবে তোমার/কাছে কেউ না এলে এবার..”(গীতিকার শ্যামল গুপ্ত). আমরা চেতনে বা অবচেতনে বোধ হয় রবীন্দ্র চিন্তারই অনুসারী।