শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় – অতিক্রান্ত শতবর্ষের অনুভব (পর্ব – ২)   

 “…একদিন হেমন্তদা আমাকে একটা লাল ডায়েরি দিয়ে বললেন, এই নাও আমার মায়ের ডায়েরি। পড়ে দেখ, অনেক কিছু জানতে পারবে।‌ ডায়েরিটা বাড়ি নিয়ে এসে পুরোটা পড়ে ফেললাম। সবচেয়ে আশ্চর্য হল, একটা জায়গায় উনি লিখেছেন যে, সেদিন উনি একটা রেকর্ডের দোকানে পাশাপাশি পঙ্কজ মল্লিক আর শচীনদেব বর্মণের ছবি দেখেছেন। সেখানে লিখেছেন, একদিন এঁদের পাশে আমার হেমন্তর ছবিও থাকবে। সালটা বোধহয় ১৯৩৬ কি ১৯৩৭, মানে হেমন্তদা সবে গান শুরু করেছেন। ছেলের উপর মায়ের কি অসীম আস্থা ভেবে সত্যি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, কীভাবে মায়ের ভবিষ্যদ্বাণী ছেলের জীবনে ফলে যায়!”

– শঙ্করলাল ভট্টাচার্য (প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক)

গান তো অনেক শুনেছি, শুনছি – বাংলা, হিন্দি, বেশ কিছু ইংরেজি গানও। কিন্তু ওই রকম লাবণ্যময় কন্ঠে যে সুর আমরা শুনি তার তুলনা কোথাও নেই। কন্ঠের ঐশ্বর্যে আমার কাছে কিছুটা তুলনীয় একমাত্র ইংরেজি গানে Pat Boone! আর আধুনিক বাংলা রোম্যান্টিক গানে তিনি তো সম্রাট, অনন্য – কী কন্ঠ মাধুর্যে, কী স্বর-প্রক্ষেপণে, আর কী উচ্চারণের শুদ্ধতায়। গান সম্পর্কে আমার আদৌ কোনও পন্ডিতি নেই – এটা নিতান্তই একজন অকিঞ্চিৎকর অথচ গান-ভালবাসা মানুষের অনুভব।

নচিকেতা ঘোষ ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সংগীতের ক্ষেত্রে তাঁর যোগ্যতার পরিধিটা জানতেন। শাস্ত্রীয় সংগীতে নিজের অধিগত বিদ্যার পরিমিতি বোধ নিয়ে তিনি এতটাই সচেতন ছিলেন যে, ‘বন্ধু’ ছবির ‘মালতী ভ্রমরের করে ওই কানাকানি’ গানটির জন্য পরিবর্তিত এবং যোগ্য শিল্পী হিসাবে মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের মতো কাউকে মনোনীত করার অনুরোধ রেখেছিলেন সংগীত পরিচালক নচিকেতা ঘোষের কাছে। নচিকেতা ঘোষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এমন অনুরোধ তৎক্ষণাৎ প্রত্যাখান করেছিলেন। ভাগ্যিস করেছিলেন! তাই হেমন্তবাবু নিজেই আশ্চর্য হতেন যখন শুধু মেহেদী হাসান বা জগজিৎ সিং-এর মতো তাঁর অনুরাগীরাই নন, স্বয়ং পণ্ডিত রবিশঙ্করও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের মূল্যায়ন করতেন এইভাবে – “Simplicity of expression-এর একটা অবশ্যম্ভাবী আবেদন আছেই কারণ, তার মধ্যে কোনো pretention নেই। এই অকৃত্রিম আত্মবিভোর এবং স্বচ্ছন্দ পরিবেশনাই হেমন্তবাবুর গানের প্রধান আকর্ষণ।” সুনন্দা পট্টনায়কের কথায় – “হেমন্তবাবুর যে কোনো ধরনের গান শুনলেই আমার মনে হয় শুধু সেই গান নয়, তাঁর শ্রোতাদের সঙ্গেও তাঁর একটা understanding আছে; যার  জন্যই তাঁর গানের communicative power মনকে সোজাসুজি ছুঁতে পারে।” আর আমীর খান তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের এতই অনুরাগী  ছিলেন যে বাড়িতে প্রায়শই বন্ধু-সমাবেশে তাঁর ছিল বাধ্যতামূলক গান-পরিবেশন। খাঁ-সাহেব হেমন্তকে আশ্বস্ত করে বলেও ছিলেন – “গান গান। যার মধ্যে যে জিনিস মানুষকে আনন্দ দেয়, মনকে ছোঁয়, তাই তো গান। তাতে তোমার গলা দিয়ে তান বেরুলো কি বেরুলো না, আমার গলা দিয়ে ভাল বেরুলো – ইট ডাজ নট ম্যাটার। গানটা শুনছি, সেটা শুনে আনন্দ হচ্ছে – সেটাই তো সংগীত।” তাঁর গান শুনে আরও বলতেন, “ওই আওয়াজ, অভিব্যক্তির মাদকতা আমাকে মুগ্ধ করে।” আর লতা মঙ্গেশকর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি ‘শ্রদ্ধাঞ্জলি’তে তো বললেনই, ‘হেমন্তদার গান শুনলে মনে হয় মন্দিরে বসে কোনো সাধু ভজন গাইছেন।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও লতা মঙ্গেশকর

হেমন্ত জানতেন, কন্ঠই তাঁর সম্পদ। তাই পরে আর ক্ল্যাসিকাল না শেখার আপসোসটা তাঁর ছিল না। তাঁর নিজের উপলব্ধি – “আমার মনে হয় যে, ক্ল্যাসিকাল শিখতে গেলে আমার এই  গলাটা আর থাকত না। কারণ, ঘষা-মাজা, ঘষা-মাজা করতে করতে আমার গলার এই ব্যাপারগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারত।” তাই অহেতুক সুরের প্যাঁচ বা গিটকিরি দিয়ে কোনও ওস্তাদী নয় – কন্ঠের মাধুর্য, সরল-সুন্দর-মিষ্টি সুর, সহজ গায়কী আর ভাল কথা – ব্যাস, এখানেই লুকিয়ে আছে সংগীতের মেলডি আর রোম্যান্টিকতার ভ্রূণ। এই সত্যটা হেমন্ত মুখোপাধ্যায় বুঝেছিলেন। তাঁকে বুঝিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথই। তাই সফল সুরকার হিসাবেও তাঁকে ঋদ্ধ করেছে রবীন্দ্রনাথেরই গান। এটা তাঁর নিজেরই কথা। সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে অনেক কথাই তো বলার। কিছু কথা এখানে বলতে হয়।

সুর তো যথার্থই আশ্রয় খুঁজে পায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের স্বর্গীয় কণ্ঠে। তথাপি অনেক সংগীতবেত্তার কাছেই সুরকার হিসাবে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি পক্ষপাতিত্বটা তুলনায় বেশি। শ্রীকান্ত আচার্যের মতো একালের অনেক শিল্পীদের এমনই অভিমত; আর পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী তো হেমন্ত সুরারোপিত এবং কিশোরকুমার গীত ‘ও শ্যাম কুছ আজীব থি’ গাইতে বসে শুরুতেই বলে নিলেন, “হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গান তো বিশেষ শেখেন নি, কিন্তু আমার মনে হয় তাঁর মতো সুরকার ভারতবর্ষে আর জন্মায়নি।” তত্ত্ব দিয়ে সুরের শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করাটা আমার কাছে একেবারেই অনধিকারচর্চা। কিন্ত গানকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে তাকে ভালবাসার অধিকার আমার থাকেই। সেই অধিকারেই সুরকার এবং গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এক অখণ্ড সত্তার প্রতি আমার অস্তিত্বের সমর্পণ! এখানে কোনো তুলনা করতে আমি অপারগ। হ্যাঁ, এ-কথা সত্য, সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে চর্চা  হয় অনেক কম। এর দুটো কারণ। প্রথমত কথা, সুর এবং শিল্পীর যোগ্য পরিবেশনার মিলিত সম্ভারের মধ্যেই তো সাধারণ শ্রোতার কাছে গানের গ্রহণযোগ্যতা। গীতিকার তো বটেই, সুরকারকেও পিছনে ফেলে কৃতিত্বের সিংহভাগ দখল করেন শিল্পীই। দ্বিতীয় কারণটা এই যে, সুরকারের কৃতিত্ব এবং সুরের উৎকর্ষের যথার্থ নিরূপণে হৃদয়ের সঙ্গে মস্তিষ্কেরও প্রয়োজন হয় – প্রয়োজন পড়ে সংগীতের তত্ত্ব নিয়ে অ্যাকাডেমিক চর্চার । তাই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় এবং বাংলা গানের ক্ষেত্রে শচীনদেব বর্মন মূল চর্চার বিষয় হন গায়ক হিসাবেই। তাঁদের সুরসৃষ্টির কৃতিত্বটা অনেকটাই যেন আড়ালে চলে যায়।

বিশ্বজিৎ-হেমন্ত-লতা

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরসৃষ্টিতে আছে বৈচিত্র্য। অবশ্য বাংলা গানে, বিশেষ করে ছায়াছবিতে, সুরের মধ্যে দিয়ে রোম্যান্টিক আবহ তৈরিই তাঁর সুরসৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। এমন অজস্র বাংলা গানকে আমরা নিত্য স্মরণ করি। তবে এই ক্ষেত্রে একটি নাম তাঁর পাশে বিশেষ করে অবশ্যই রাখতে চাই – নচিকেতা ঘোষ। না, যে সলিল চৌধুরীকে আমি রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের শ্রেষ্ঠ সংগীত-ব্যক্তিত্ব বলে মনে করি, তিনিও এই রোম্যান্টিকতাকে তাঁর গানে প্রায় এড়িয়েই গেছেন। সবিতা চৌধুরীর কণ্ঠে ‘মরি হায় গো হায়’-এর সেই অসাধারণ রোম্যান্টিক আবেদন বাংলা গানে আর তাঁর কাছ থেকে পেলাম কই? অথচ তাঁর যোগ্যতা তো প্রশ্নাতীত! সলিল চৌধুরীর প্রতি এ আমার নিদারুণ অভিমান।

তরুণ মজুমদার ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গে সুর নির্মাণের বিভিন্ন ধারার কথাও তো উল্লেখ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ছায়াছবির নাছোড় প্রযোজক-পরিচালকের বিভিন্ন দাবির কাছে নিজের সংগীত শাস্ত্রের সীমাবদ্ধ জ্ঞান নিয়ে আপত্তি পেশ করেও হার মানতে হয়েছে তাঁকে। কিন্তু গান শোনার পর আমরা তো দেখলাম, বুঝলাম তিনি সার্থক এবং জয়ী। দু-একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। ‘পলাতক’ ছবির জন্য ‘যাত্রিক’-এর পক্ষ থেকে তরুণ মজুমদারের তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছাড়া চলবেই না। অথচ ছবিটি পুরপুরি লোকসংগীত নির্ভর, যেখানে তাঁর  অভিজ্ঞতা সীমিত বলে কুণ্ঠিত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। বাধ্য হয়ে সুর করলেন, তাঁর সুরসৃষ্টির অফুরান সম্পদের পরিচয় থেকে গেল এই ছবিতে। ‘মণিহার’ ছবির প্রযোজক প্রসাদ সিংহ, সংগীত পরিচালক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। প্রসাদবাবুর চাইলেন আধুনিক গান হলেও তাতে যেন শুদ্ধ রাগ-রাগিণীর ছোঁয়া থাকে। এখানেও আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু সে আপত্তি টেকেনি। ‘আমি হতে পারিনি আকাশ’, ‘কে যেন গো ডেকেছে আমায়’ এবং ‘কেন গেল পরবাসে’-এর মতো গানে হেমন্তবাবুকে শেষ পর্যন্ত সুর করতেই হল। ‘মিনার’, ‘বিজলি’, ‘ছবিঘর’-এ একটানা প্রায় ছিয়াশি সপ্তাহ চলেছিল ‘মণিহার’। রেকর্ড বিক্রিতেও রেকর্ড করল ‘মণিহার’। আর একটি ক্ষেত্রে সুরকার এবং গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী, সেটা স্তোত্রতে সুরারোপ এবং পাঠ। ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ এবং ‘আলোর পিপাসা’ ছায়াছবি দুটি তার উজ্জ্বল উদাহরণ। ছায়াছবিতে অন্য ধরণের সুরের কথা বলতে গিয়ে এই মুহূর্তে মনে পড়ছে ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবিতে শম্ভু কাওয়াল গীত একটি কাওয়ালি, ‘দীপ জ্বেলে যাই’ ছবিতে মান্না দে-র গাওয়া ‘তোমার মতো সিস্টার’ এবং ‘লুকোচুরি’ ছবিতে কিশোরকুমারের গাওয়া ‘সিং নেই তবু নাম তার সিংহ’-এর মতো বেশ কিছু গান।

সুচিত্রা সেন (সপ্তপদীর রিনা ব্রাউন)

আর একটি গানের কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। ‘সপ্তপদী’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের লিপে ইংরেজি গান ‘On the merry go round’, গেয়েছিলেন সুজি মিলার। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের লেখা গানে ব্যতিক্রমী সুর দিয়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। শেষের দিকে তাঁর ইচ্ছা হয়েছিল কালিদাসের ‘মেঘদূত’-এর নির্বাচিত অংশে সুর সংযোজনা করে পাঠ করা এবং একটি LP প্রকাশ করা। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ইস্, আরও আগে তাঁর এমন ইচ্ছা হল না কেন?

নিজের গান ছাড়া বাংলা গানের বেসিক রেকর্ডে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সুর দিয়েছেন কম, কিন্তু বাংলা সিনেমায়? প্রখ্যাত সুরকার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় লিখছেন, “হেমন্ত মুখোপাধ্যায় গায়ক হিসাবে পাঁচজনের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ, কিন্তু বাংলার চিত্রসংগীত জগতে তিনি সম্রাট, সুরস্রষ্টা হিসাবে। চলচ্চিত্রে গান করতে গেলে দৃশ্যের অনুভবকে পরিস্ফুটিত করাই হচ্ছে প্রাথমিক শর্ত – যা নির্মাণ আঙ্গিক বুদ্ধি থেকেও হৃদয় সম্পৃক্ত হওয়ার উজ্জ্বলতায় সার্থক হতে হবে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ছায়াছবির সুরে গান নির্মাণ করেননি – তিনি গানকে ছবির সংলাপ করে দিয়েছেন।… আবার বলব হেমন্তদা’র সৃষ্টি করা গান – তা নির্মাণ ছিল না, ছিল প্রসব।… রবীন্দ্রনাথকে হেমন্তদা’ কত আন্তরিক নিষ্ঠভাবে আত্মীকরণ করেছিলেন, তা ‘মন নিয়ে’ ছবিটির ‘ওগো কাজল নয়না হরিণী’ শুনলে বোঝা যায়। গানটির মধ্যে যে opera style ব্যবহার করেছেন তার সুরের চলনে, একেবারে রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য থেকে আয়ত্ত। আবার ‘সুরের আকাশে তুমি যে গো শুকতারা’ – গানটির অন্তরায় ‘অরুণাচলের বুকে/ তুমি জাগালে দীপ্তমুখে’ – একেবারে রবীন্দ্রসংগীতের আঙ্গিকে নির্মিত।”

হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

একটি হিন্দি ছবিতে সংগীত পরিচালনার প্রয়োজনে প্রযোজক-পরিচালক ভি শান্তারামকে আশ্বস্ত করতে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নিজের গলায় সম্পূর্ণ ‘শ্যামা’র গান শুনিয়ে তাঁকে বলেছিলেন, “আমার কাছে খনি আছে”। তাই সুর নির্মাণে তাঁকে কখনও হিন্দুস্তানি সংগীতের দ্বারস্থ হতে হয়নি। ধুতি-শার্ট পড়া হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সহজ, স্বাভাবিক, অকৃত্রিম জীবনবোধ এবং ব্যক্তিত্বেরই প্রতিফলন ঘটেছে তার সুর-সৃষ্টিতে। বাংলা গানের সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে এই প্রসঙ্গটা শেষ করলাম। হিন্দি গানের সুরকার হিসাবে তাঁর অবদান নিশ্চয় স্বতন্ত্র আলোচনার দাবি করে।

সলিল চৌধুরী ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে সব থেকে যিনি বেশি চিনেছিলেন, সেই সলিল চৌধুরীর কথায় – ১) হেমন্তদা বা লতা যখন আমার গানের শিল্পী তখন কল্পনা আমার দিগন্ত ছাড়িয়ে যায়। Sky is my limit. ২) ভগবান যদি গান গাইতেন তবে তা হেমন্তদার গলায়! এখানে একটা প্রসঙ্গ না এনে পারছি না। আনন্দবাজার পত্রিকায় অনিন্দ্য জানা, ওই পত্রিকারই সাংবাদিক,‌ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পর্কে একটি লেখায় (‘ওস্তাদ থামতে  জানে?’/২০।৫।২০১২) হঠাৎই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়-মান্না দের প্রসঙ্গ আনলেন! তারপরে আরও এগিয়ে গিয়ে  অহেতুক এবং অপ্রাসঙ্গিকভাবে  কটাক্ষ করলেন – “অমন ক্ল্যাসিকাল বেস ছিল হেমন্তর? স্রেফ উত্তমের লিপে গেয়েছিলেন বলে পপুলারিটি নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।” বুঝুন! সমালোচনার এমন কিম্ভুত নিদর্শন শুনেছি আর কারও কাছে? তথ্য সাজিয়ে প্রতিবাদ করে চিঠি পাঠিয়েছিলাম ‘সম্পাদক সমীপেষু’ কলমে, ওরা ছাপেনি!  কিন্তু দেখা তো দরকার ‘শাপমোচন’ ছায়াছবির আগে উত্তমহীন হেমন্তর অবস্থানটা আসলে কোথায় ছিল, কী ছিল, কতটুকু ছিল?  প্রকৃতপক্ষে ১৯৫৫তে এই  জুটির যাত্রা শুরু। কারণ, ১৯৫১ সালে ‘সহযাত্রী’ ছবিতে উত্তমকুমারের লিপে দুটি গান (কথা – শৈলেন রায়, সুর – রবীন চট্টোপাধ্যায়) গেয়েছিলেন; কিন্তু আদৌ  জনপ্রিয়তা পায়নি বলে গান দুটো বোধহয়  হারিয়েই গেছে। তবে একটা কথা তো সবাইকে অবশ্যই মানতে হবে, ‘শাপমোচন’ থেকে নায়ক উত্তমকুমার আর গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় যেন একে অন্যের পরিপূরক – যেন মধ্যবিত্ত বাঙালির অমলিন রোম্যানটিকতার চূড়ান্ত এবং অবিকল্প ছবি! কিন্তু ১৯৫৫ সালের পরে তো আরও অনেক দূর যাওয়া! তাই শুধু প্রাক হেমন্ত-উত্তম পর্ব সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোই এখানে রাখছি।সামনে অপেক্ষায় থাকল আরও চৌত্রিশ বছর ধরে এক বর্ণময় সংগীত-জীবনের পথ চলাটা !

  • ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউশনের সহপাঠী কবি-বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আগ্রহে এবং তাঁরই কথায় ১৯৩৫/৩৬ সালে বেতারে প্রথম সংগীত পরিবেশন। সাহায্য পেয়েছিলেন আকাশবাণীর তবলাবাদক সুভাষেরই প্রিয়জন কালোদার, পরবর্তীকালে যিনি অভিনেতা অসিতবরণ।
  • ১৯৩৭ সালে বাংলা আধুনিক গানের প্রথম রেকর্ড (শৈলেশ দত্তগুপ্তের সুরে, কথা – নরেশ্বর ভট্টাচার্য) – জানিতে যদি গো তুমি/বলোগো বল মোরে। তারপর এক দশকে অনেক স্মরণীয় গান।
  • নিজে প্রথম সুর দেন ১৯৪৩ সালে – কথা কয়ো নাকো / আমার বিরহ আকাশে। এই গানগুলো যথেষ্ঠ জনপ্রিয় হয়েছিল।
  • এর পরেই তিনি আমাদের পরপর গানে ভাসিয়ে দিলেন – গাঁয়ের বধূ(১৯৪৯), অবাক পৃথিবী(১৯৫০), রানার(১৯৫১), পাল্কীর গান(১৯৫২), শান্ত নদীটি/জোয়ারের গান(১৯৫৩), কে যায় সাথীহারা(১৯৫৪), ধিতাং ধিতাং বোলে/পথে এবার নামো(১৯৫৫), পথে যেতে যেতে/১৯৫৬, আর কত রহিব/তোমার আমার কারো মুখে কথা নেই(১৯৫৬) এবং আরও অনেক জনপ্রিয় গান।
  • বাংলা চলচ্চিত্র (অন্য সুরকারের সুরে) – ১৯৪০-১৯৫৫, ২৫টি ছবিতে ৫০টির মতো গান।
  • নিজের সুরে – ১৯৪৭(অভিযাত্রী) – ১৯৫৫(শাপমোচন), ১১টি ছবি। ‘শাপমোচন’-এর কথা ছেড়ে দিলেও ১৯৫৫ পর্যন্ত এই সমস্ত ছবির অনেক জনপ্রিয় গান এখনও আমরা শুনি। বিশেষ করে মনে পড়ছে – স্মরণের এই বালুকাবেলায় (প্রিয়তমা/১৯৪৮), লিখিনু যে লিপিখানি (তুলসীদাস/১৯৫০), ও বাঁশিতে ডাকে সে (সূর্যমুখী/১৯৫৫), কান্দো কেনে মন রে (অসমাপ্ত/১৯৫৬)।    
  • রবীন্দ্রসংগীত (ছায়াছবি) – ১৯৪২-১৯৫৫, ৫৩টি গান। প্রথম ননফিল্ম রেকর্ড – কেন পান্থ এ চঞ্চলতা / আমার আর হবে না দেরি (১৯৪৪)। ‘অপরাধ’ ছায়াছবিতে (১৯৪২) সুপ্রভা সরকারের সঙ্গে – ওই যে ঝড়ের মেঘের। ‘প্রিয় বান্ধবী’ ছায়াছবিতে(১৯৪৩) – পথের শেষ কোথায়, সুপ্রভা সরকারের সঙ্গে।
  • ১৯৪৪ সালে বয়স যখন মাত্র চব্বিশ, পঙ্কজ মল্লিকের অনুপস্থিতিতে আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি-আলেখ্যতে সংগীত পরিচালনা করেন। ওই অনুষ্ঠানে ১৯৪০-১৯৫০ একটানা অংশগ্রহণ। ওই সময় ‘জাগো দুর্গা’ গানটি হেমন্তই গাইতেন।
  • হিন্দি ছায়াছবি (অন্যের সুরে) – ১৯৪২-১৯৫৫, ১০২টি ছায়াছবি। প্রথম ছবি –মীনাক্ষী/১৯৪২, পঙ্কজ মল্লিকের সুরে। নিজের সুরে – ১৯৫২-১৯৫৫, ১১টি ছবি। প্রথম ছবি –  আনন্দমঠ, তারপর উল্লেখযোগ্য–নাগিন/১৯৫৪, শর্ত/১৯৫৪, জাগৃতি/১৯৫৪, এক হি রাস্তা/১৯৫৬।
  • এ-ছাড়াও আছে নিজের এবং অন্যের সুরে প্রায় নব্বইটার মতো ননফিল্ম হিন্দি গান। উল্লেখযোগ্য গান – কিতনা দুখ তুমনে ভুলায়া(১৯৪৩), ভালা থা কিতনা আপনা বচপন(১৯৪৬)। দুটোতেই সুর দিয়েছিলেন কমল দাশগুপ্ত।
  • মনে রাখতে হবে, সেই সময় দেবানন্দের লিপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় অনেক গান গেয়েছেন। সব গানই যাকে বলে সুপার হিট! যেমন – ইয়ে রাত ইয়ে চাঁদনি (জাল/১৯৫২), ইয়াদ কিয়া দিল নে (পতিতা/১৯৫৩), চুপ হ্যায় ধরতি এবং তেরি দুনিয়া মে জীনে সে (হাউস নং 44/১৯৫৫), হায় আপনা দিল (শোলভা সাল/১৯৫৮)। না তুম হামে জানো (বাত এক রাত কী/১৯৬২)।

এইটা হল মোটামুটি ১৯৫৫-৫৬ সাল পর্যন্ত অতি সংক্ষেপে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সংগীতজীবন, যা যে-কোনো একজন শিল্পীর সারা জীবনের সম্পদ হতে পারে! এর পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত (১৯৮৯) সংগীতজগতে তাঁর অবস্থানের উজ্জ্বল ইতিহাসটা তো আর এই পরিসরে স্মরণ করা সম্ভব নয়।

এখানে আমার একেবারে ব্যক্তিগত পছন্দের কথাটা বলতে চাই। চল্লিশের মাঝামাঝি থেকে বড়জোর সত্তর পর্যন্ত গাওয়া গানগুলোর মধ্যেই আমি আমার আদর্শ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়কে খুঁজে পাই। আমি সেই সময়টার কথাই বলছি যখন গানকে তাঁর কণ্ঠের স্পন্দিত লাবণ্য পৌঁছে দেয় সুরের অনুপম শিখরে। এই বিশেষ ক্ষেত্রে তাঁর কণ্ঠের এই অনায়াস অধিকারকে মান্যতা দিয়েছেন অনেক গুণী সঙ্গীতবেত্তাই। ঠিক এই প্রসঙ্গেই তাঁর সাম্প্রতিক একটি লেখায় কবির সুমন বলছেন – “কণ্ঠ প্রক্ষেপ, স্বর-প্রক্ষেপের ক্ষেত্রে উচ্চারণে প্রয়োজনীয় তিক্ষ্ণতা, সেটার সঙ্গে স্বরের পরিমিতি বোধ, গলা ছেড়ে বা প্রয়োজনে চেপে, ভয়েস মডিউলেট্ করে হেমন্তবাবু এক নতুন গায়কি আনলেন। ওঁর একটা গান আছে ওপরে সুরে – ‘জীবনপুরের পথিক রে ভাই’-এর অন্তরা যখন গাইছেন, ‘বন্ধুরে’ গাওয়ার সময় একদম চড়ার শুদ্ধ গান্ধারে গাইছেন খোলা গলায়, কিন্তু একবারও চিৎকার মনে হচ্ছে না।এই উচ্চগ্রামে না গিয়ে তার-সপ্তকে অনায়াস যাতায়াত হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানের বৈশিষ্ট্য ছিল।” সত্তর দশকের শেষ থেকেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠের সেই দ্যুতি ক্রমশই যেন ম্লান!  তারপরে ক্রমশই তাঁর স্বরভঙ্গের অস্বস্তি আর শ্বাস-প্রশ্বাসের অসুবিধাজনিত তার-সপ্তকে অস্বাচ্ছন্দ্যে আমরাও তাঁর অসহায় বেদনার  শরিক হয়েছি !

শেষে একটা কথা বলতেই হয়।  মান্না দে-র প্রসঙ্গ এনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রতি এ-ধরণের বিচারহীন এবং অমার্জিত কটাক্ষ যে এই দুই মহান শিল্পীরই স্ব-স্ব ক্ষেত্রের অবদানকে আসলে অসম্মান করা সেটা আমাদের বোঝা দরকার। যে যাঁর নিজস্ব কৃতিত্বেই তো মহান। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে মান্না দে তাঁর বেশ কিছু মূল্যবান অনুভবকে স্পষ্টই ব্যক্ত করেছেন। যে কোনো অনুষ্ঠানে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে গান গাইতে বসেই এই বরেণ্য শিল্পী সম্বোধন করতেন, ‘মিষ্টি সুরকার, মিষ্টি গায়ক আর মিষ্টি মানুষ।’ তাঁর আরও বিনয়ী মন্তব্য, ‘হেমন্তবাবু মানুষ খুব বড়। অমন যাঁর গলা তিনি সব গান তো নিজেই গাইতে পারতেন। কী দরকার আমাদের সুযোগ দেওয়ার। আমাদের খেটে গাইতে হয়, উনি কথা বললেই গান হয়ে যায়।’ মনে পড়ে কবি-বন্ধু সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কথা, ‘ও সুর করে খবরের কাগজ পড়লেও সেটা গান হয়ে যায়।’ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে মান্না দে ‘আনন্দলোক’-কে জানালেন –“…বিশ্বাস করুন, সারাটা বছর ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম কবে পুজো আসবে। আর পুজো মানেই তো হেমন্তবাবুর কন্ঠ মাধুর্যে ভরা নতুন নতুন বাংলা গানের সম্ভার।

হেমন্ত ও মান্না দে

“শ্রী মুখোপাধ্যায়ের যে রেকর্ডগুলি বেরুতো সেই গানগুলো আমি নিজের মনে গুনগুন করে গাইতাম। দেখতাম, সকলের চেয়ে কত স্বতন্ত্র তাঁর গায়নভঙ্গী। এত সোজা সরল মিষ্টি গলা ঈশ্বর খুব কম লোককেই দেন।…২৬ সেপ্টেম্বর রাত দেড়টায় টেলিফোনে যখন তাঁর প্রয়াণের সংবাদ পেলাম, মনে হল আমাদের চোখের সামনে যেন এক মহীরুহ ভূপতিত হলো। শেষ হয়ে গেল এক স্মরণীয় যুগ।

“সুরের আকাশ থেকে বিলীন হল এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। শুধু অক্ষয় অমর হয়ে থাকবে হেমন্তবাবুর গানের স্টাইল, যা তার নিজস্ব ঘরানা।” এ তো হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে মান্না দের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া, যেখানে আবেগটা বড় হয়ে আসে! কিন্তু কালের দূরত্ব পেরিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় সম্পর্কে এই মহান শিল্পী তাঁর স্থিতধী অনুভবের উচ্চারণ আমাদের  শুনিয়ে গেলেন আনন্দবাজার পত্রিকার পাতায় – “বাংলা আধুনিক গানের আইকন বলতে দু’জনই থাকবেন। হেমন্তবাবু আর সন্ধ্যাদি। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আমার চেয়ে অনেক ছোট। কিন্তু ওঁকে আমি সন্ধ্যাদিই বলি। হিন্দিগানে মহম্মদ রফি আর লতা মঙ্গেশকরকে আমার ইনস্টিটিউশন বলে মনে হয়। বাংলা গানে ওই দু’জন। হেমন্তবাবুর ওই ঐশ্বরিক কন্ঠের তুলনা হয় না।”

বাংলা গানের সেই গর্বিত ইতিহাস, যেটা ‘স্বর্ণযুগ’ বলে প্রায়শই সংজ্ঞিত,‌ তার সময়কাল আমার বিচারে ১৯৪০ থেকে বড়জোর ১৯৭৫-৮০ সাল পর্যন্ত। এর পরের দশ-পনেরো বছরের মধ্যে আমরা  কিছু ভাল বাংলা গান যে পাইনি তা নয়, কিন্তু তার অত্যল্প উদাহরণ সময়ের নিরিখে ‘স্বর্ণযুগ’-এর প্রতিনিধিত্ব করে না। মোটামুটি এই চল্লিশটা বছর জুড়ে বহু বরণীয় শিল্পীর স্মরণীয় সৃষ্টিতে আমরা আজও প্রাণিত। আর এটা ইতিহাসেরই মান্যতা যে, সেই স্বর্ণালী যুগটার প্রতিনিধিত্বের প্রধান কৃতিত্বটা রয়েছে শাস্ত্রীয় সংগীতে অনভিজ্ঞ, অচর্চিত এবং বহু রক্ষণশীল মানুষের বিচারে সেই নেহাতই ‘সাদামাটা’ এক শিল্পীরই – যাঁর নাম  হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ভেবে আশ্চর্য লাগে, কোন মায়াজালে অতিক্রান্ত একশ’পাঁচ-তম জন্মদিনেও এমনই একটি মানুষ, তাঁর সৃষ্ট সুর এবং গীত নানা গানের সম্ভার নিয়ে, আজও আমাদের হৃদয়ের নিবিড় প্রতিবেশী!

সূত্র –

১) আমার গানের স্বরলিপি / হেমন্ত মুখোপাধ্যায়

২) বাংলা গানের পথ চলা / অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

৩) সুরের আকাশে হেমন্ত / সংকলক – জয়দীপ চক্রবর্তী

৪) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় – শতবর্ষে শতস্মৃতি/ সম্পাদনা – জয়দীপ চক্রবর্তী

৫) আনন্দলোক / বিশেষ সংখ্যা – ২৮।১০।১৯৮৯

৬) সুবর্ণকণ্ঠ হেমন্ত / অভীক চট্টোপাধ্যায়

৭) হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ১০০/ অশোকনগর

৮) আনন্দবাজার পত্রিকা, ১৪।৪।২০১২

৯) সাক্ষাৎকার / কবীর সুমন, মাসিক কৃত্তিবাস, ফেব্রুয়ারি ২০২০

১০) Hemanta Mukhopadhyay / Wikipedia, The Free Encyclopedia.

[পর্ব – ১]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Sulata Bhattacharya
Sulata Bhattacharya
2 months ago

আপনার লেখার এক ভক্ত পাঠক হিসেবেই নিজেকে গণ্য করতেই ভাল বাসি তার ওপরে কোন মন্তব্য করার যোগ্যতা আমার কোন ক্ষেত্রেই থাকে না তবু ভালবেসে লেখাটা পড়েছি এই কথাটাও তো জানানোর মতো। আপনার কলমথেকে যাই পাই তাই ” অমৃতায়তে।”
(অমৃতের মতো মনে হয়।)

Himadri Kumar Das Gupta
Himadri Kumar Das Gupta
Reply to  Sulata Bhattacharya
2 months ago

কী যে বলেন! সত্যি লজ্জা দিলেন আমাকে।