শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

আকাশে আকাশে…

রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি, বিশেষত তাঁর গান জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে, বিভিন্ন পাঠক শ্রোতার কাছে যে আবেদনবৈচিত্র্য নিয়ে ধরা দেয়, অন্তহীন সেই পরিব্যাপ্তির তুলনা চলে শুধুমাত্র আকাশেরই সঙ্গে। রবীন্দ্রসৃষ্টিরসধারায় অবগাহনে মহাকাশ পরিক্রমার আনন্দ। রবীন্দ্রনাথের দূরবিস্তৃত আনন্দগানের যাত্রাপথের শুরুতেও আকাশ, শেষেও আকাশ। কথাটা আলঙ্কারিক অর্থে নয়, পুরোপুরি আক্ষরিক অর্থেই সত্য। রবীন্দ্রনাথের প্রথম গানের প্রথম কথা “গগন” এবং শেষ গানের শেষ কথা “মহাকাশ’’। তবে বিষয়টি বিতর্কসাপেক্ষ কেননা তাঁর গানের কোথায় শুরু কোথায় শেষ সেই ব্যাপারে মতভেদ আছে। তাই প্রথমে আমরা প্রাপ্ত তথ্যসমূহ পর্যালোচনা করব এবং তারপর কোন সিদ্ধান্তে আসার চেষ্টা করব।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের বিবরণ অনুসারে রবীন্দ্রনাথের প্রথম গান :
গগনের থালে রবিচন্দ্র দীপক জ্বলে ( পূজা ও প্রার্থনা / ১)
এই গানটির রচনাকাল ১৮৭৩ সাল ; রবীন্দ্রনাথের বয়স তখন ১১। তবে এটি কোন মৌলিক রচনা নয় ; এটি গুরু নানকের একটি ভজনের প্রথম অংশের অনুবাদ : গগনমৈ থাল, রবি চন্দ্র দীপক বনে।
এই গানের প্রকৃত রচয়িতা (বা সেই ভজনের প্রকৃত অনুবাদক) কে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। আদি ব্রহ্মসমাজ প্রকাশিত “ব্রহ্মসঙ্গীত স্বরলিপি” দ্বিতীয় ভাগে গানটি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের রচনা বলে উল্লিখিত হয়েছে। শনিবারের চিঠিতে বলা হয়েছে “রবীন্দ্রনাথ মনে করেন এটি তাঁর রচনা।”

ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী এই গানটি সম্বন্ধে লিখেছেন “ …জ্যোতিরিন্দ্রনাথ একেবারে প্রায়
অক্ষরে অক্ষরে অনুবাদ করেছেন। … কেউ কেঊ ভুল করে ভাবেন এটি রবীন্দ্রনাথের।”
পরবর্তীকালে তাঁর প্রবন্ধটি যখন গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় তখন উদ্ধৃতির এই অংশটি বাদ
দিয়ে পাদটীকায় মন্তব্য করা হয় “কে রচয়িতা, এ বিষয়ে বিতর্ক আছে”।
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের মত প্রশান্তকুমার পালও মনে করেন এটি রবীন্দ্রনাথের অনুবাদ।

তাঁর বক্তব্য রবীন্দ্রনাথ এই গানটির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত ছিলেন। দেবেন্দ্রনাথ ১৮৫৭ সালে যখন অমৃতসরে যান তখন তিনি স্বর্ণমন্দিরে গুরু নানকের এই ভজনটি শোনেন, তাঁর আত্মজীবনীতে তার উল্লেখ আছে। ১৮৭২ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার ফাল্গুন সংখ্যায় এই ভজনটি বাংলা গদ্যানুবাদ সহ প্রকাশিত হয়। তার কিছুদিন পর রবীন্দ্রনাথ দেবেন্দ্রনাথের সঙ্গে অমৃতসর যান। প্রশান্ত পালের বক্তব্য অমৃতসরে গুরু-দরবারে অন্যান্য ভজনের সঙ্গে ইতিপূর্বে পরিচিত এই গানটিও তিনি শুনেছিলেন। “আর এই যোগাযোগের অভিঘাতে রবীন্দ্রনাথ ভজনটির বঙ্গানুবাদ করেন।”
আশ্বিন ১৩৫৭ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের তৃতীয় খণ্ডে গানটি রবীন্দ্র-রচনা রূপেই গৃহীত হয়। উল্লেখ্য এই গ্রন্থসঙ্কলনে ইন্দিরা দেবী স্বয়ং ছিলেন অন্যতম উপদেষ্টা।
আমাদের মত সাধারণ পাঠকদের পক্ষে এই বিতর্কের মীমাংসা করা সম্ভব নয়। যেহেতু গানটি গীতবিতানের অন্তর্ভুক্ত এবং উল্লিখিত সময়ের আগে রবীন্দ্রনাথের অন্য কোন গান রচনার কথা আর কোন বিশেষজ্ঞ বলেন নি, তাই এই গানটিকেই রবীন্দ্রনাথের প্রথম গান বলে মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই। তাহলে এ কথাও বলতে হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম গানের প্রথম কথা “গগন”।

আমরা প্রথমার্ধের আলোচনা শেষ করব অনূদিত এই গান এবং মূল ভজনটির একটি অতি
সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক পর্যালোচনা দিয়ে। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী গুরু নানকের মূল ভজনের
প্রাসঙ্গিক অংশটি অনুবাদ সমেত পাশাপাশি তুলে ধরেছেন।

মূল ভজন

গগনোমে থাল রবিচন্দ্র দীপ বনি
তারকামণ্ডল জনক মোতি রে
ধুপ মলয়ানিল পবন চঙর করে
সগল বনরাজি ফুলন্ত জ্যোতি রে
ক্যয়সি আরতি হুয়ি হো ভবখন্ডন তেরি আরতি আরতি
অনাহত শব্দ বাজন্ত ভেরী রে।।

বাংলা রূপান্তর

গগনের থালে রবিচন্দ্র দীপক জ্বলে
তারকামণ্ডল চমকে মোতি রে।।
ধুপ মলয়ানিল পবন চামর করে
সকল বনরাজি ফুলন্ত জ্যোতি রে।
কেমন আরতি তব হে ভবখণ্ডন, তব
অনাহত শব্দ বাজন্ত ভেরী রে।।

দেখা যাচ্ছে মূল ভজনটির প্রায় আক্ষরিক অনুবাদ করা হয়েছে। এর ভাষা ঠিক রাবীন্দ্রিক
নয়।“ফুলন্ত” “বাজন্ত” এই জাতীয় বিশেষণ রবীন্দ্রনাথের পরবর্তী আর কোন গানে পাওয়া যায় না। তাছাড়া ‘চামর’ শব্দের ব্যবহারও গীতবিতানে এই একবার।

প্রথমের পর এবার শেষের গান। আমরা রবীন্দ্রনাথের শেষ গান বলে ধরে নিচ্ছি বহুপরিচিত গানটি “ওই মহামানব আসে” (আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত /১৬)। ধরে নিচ্ছি কারণ এখানেও বিতর্কের অবকাশ আছে। তবে এই গানকে ঘিরে বিতর্ক প্রথম গানের বিতর্কের থেকে প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন। বলাই বাহুল্য এই গানটির রচয়িতা কে এই নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশই নেই। এবারের বিতর্কের কারণ প্রাপ্ত তথ্যের অপ্রতুলতা নয়, বা প্রাপ্ততথ্যসমূহের পরস্পরবিরোধী চরিত্র নয়। এখানে প্রশ্নটা দৃষ্টিভঙ্গীর। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের কালানুক্রমিক বিবরণ অনুসারে রবীন্দ্রনাথের শেষ গান হল শান্তিদেব ঘোষের অনুরোধে রচিত জন্মদিনের গান “হে নূতন / দেখা দিক আরবার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ”। এই গানের রচনাকাল ২৩ বৈশাখ ১৩৪৮ (৬মে ১৯৪১ ), কিন্তু “ওই মহামানব আসে” গানটি রচিত হয় ১লা বৈশাখ ১৩৪৮ (১৪ এপ্রিল ১৯৪১) অর্থাৎ “জন্মদিনের গান” লেখার বাইশ দিন আগে। এখন প্রশ্ন হল গান রচনা বলতে ঠিক কি বুঝব ? কবি কিন্তু ২৩শে বৈশাখ নূতন কোন কবিতা লিখে তাতে সুরারোপ করেন নি। তিনি ঊনিশ বছর পূর্বে রচিত “পূরবী” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত “পঁচিশে বৈশাখ” কবিতাটির শেষের স্তবকটির সামান্য পরিবর্তন করে তাতে সুর দেন। অপরদিকে “ওই মহামানব আসে” গানটি তিনি গানরচনার উদ্দেশ্য নিয়েই লেখেন। এর মূলেও ছিল শান্তিদেব ঘোষ এবং সেইসঙ্গে সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুরোধ — সেই প্রসঙ্গে আসছি। তার আগে বলা চলে এই গানটিকে রবীন্দ্রনাথের শেষ গানরূপে অভিহিত করা অযৌক্তিক হবে না। এই বিষয়ে আলোচনা শেষ করার আগে গানটি রচনার ইতিহাস পর্যালোচনা করা যাক।

এই গানটি রচনার উৎসের সন্ধান পাওয়া যায় মৈত্রেয়ী দেবীর এবং শান্তিদেব ঘোষের রচনায়। ৩০এ মার্চ ১৯৪১এ লেখা রবীন্দ্রনাথের চিঠিতে তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে মৈত্রেয়ী দেবী এপ্রিলের প্রথমে শান্তিনিকেতনে চলে আসেন। একদিন সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর এসে উপস্থিত হন। তার পরবর্তী ঘটনা মৈত্রেয়ী দেবীর বয়ানে তুলে দিচ্ছি। “কবি আচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন। ‘রবিদা রবিদা’ করে ডাকতে চোখ খুললেন — কে সৌম্য ? এখন যাচ্ছো
নাকি! সৌম্য বললেন , রবিদা , তুমি যন্ত্রের বন্দনা করেছ — ‘নমো যন্ত্র’ ‘নমো যন্ত্র’ লিখেছ এবার মানুষের বন্দনা কর। মানুষের জয়গান গাও।
(……) পরদিন সকালে আমাকে কাগজ কলম আনতে বললেন ও আমাকে dictate করলেন সেই আশ্চর্য গানটি –ঐ মহামানব আসে। ১লা বৈশাখ কবির জন্মোৎসবের দিন। ‘সভ্যতার সংকট’ পড়া হবে, তারপরে গাওয়া হবে এই গানটি।
শান্তিদেবকে ডেকে আনা হলো সন্ধ্যায়। তাওপর তাঁর সঙ্গে গলা রেখে সুর সংযোজনা করলেন। শরীরের ঐ অবস্থায় কি রকম অনায়াসে এই সুর সৃষ্টি হলো দেখে বিস্মিত হলাম। গানটান শিখিয়ে তারপর বলেছেন, আমার জন্মদিনের উৎসবে গানটা গাওয়া হবে, তারপর এই বোকার দেশে সকলে বলবে না তো যে নিজেকেই মহামানব বলছে। এরপর শান্তিদেব ঘোষের জবানিতে গানটির জন্মকথা শোনা যাক।

“মনে ভাবলুম গুরুদেব লিখে দেশকে নববর্ষের বাণী পাঠাচ্ছেন অথচ গানে কোনো বাণী দেবেন না তা হতে পারে না। পরের দিন গিয়ে বললাম, ‘নববর্ষের প্রভাতে বৈতালিকের জন্য একটা নতুন গান রচনা করতে কি আপনার কষ্ট হবে?’ প্রথম আপত্তি করলেন, কিন্তু আমার আগ্রহ দেখে তা বন্ধ করতে পারলেন না। বললেন সৌম্য (সৌমেন্দ্রনাথ ঠাকুর) আমাকে বলেছে মানবের জয়গান গেয়ে একটা কবিতা লিখতে। সে বলে আমি যন্ত্রের জয়গান গেয়েছি, মানবের জয়গান করি নি। তাই একটা কবিতা রচনা করেছি সেটাই হবে নববর্ষের গান ।” কাছে ছিলেন শ্রীযুক্তা মৈত্রেয়ী দেবী, তিনি গুরুদেবের খাতা খুলে পুরো কবিতাটি কপি করে আমাকে দিলেন। কবিতাটি ছিল একটু বড়ো, দেখে ভাবলাম এত বড়ো কবিতায় সুরযোজনা করতে বলা মানে তাঁকে কষ্ট দেওয়া। পরের দিন সেই কবিতাটি সংক্ষেপ করতে করতে শেষপর্যন্ত, বর্তমানে “ওই মহামানব আসে” গানটি যে আকারে তাকে পেলাম।”

সম্পূর্ণ গানটি এবার দেখা যাক

ওই মহামানব আসে । 
দিকে দিকে রোমাঞ্চ লাগে 
মর্তধূলির ঘাসে ঘাসে ।। 
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ,
নরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক–
এল মহাজন্মের লগ্ন । 
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত 
ধূলিতলে হয়ে গেল ভগ্ন । 
উদয়শিখরে জাগে ‘মাভৈ: মাভৈ:’
নবজীবনের আশ্বাসে । 
‘জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়’
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে ।।

সুতরাং আমরা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারি রবীন্দ্রনাথের প্রথম গানের প্রথমে এবং শেষ গানের শেষে আছে “আকাশ” (গগন / মহাকাশ)। কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন রবীন্দ্রনাথের গানের মানচিত্রে “আকাশ”এর এমন অবস্থানের মূলে তো তাঁর কোন সচেতন প্রয়াস নেই। এ তো নিছকই সমাপতন। অকাট্য যুক্তি। তবু বিশ্বাস করতে ইচ্ছা
হয় এ শুধুই আকস্মিক ঘটনা নয় — মনে হয় …… “কী ছিল বিধাতার মনে”। যেন বিশ্ববিধাতা স্বয়ং বিশ্বকবির সৃষ্টির ধারাভাষ্যরচনার ভার নিয়েছেন —- শুরুতে “আকাশ” শেষেও “আকাশ — এ যেন অন্তরাল থেকে অলক্ষ্যচারী বিশ্ববিধাতার দিকনির্দেশঃ

বাণী তব ধায় অনন্ত গগনে লোকে লোকে

শুরুর আকাশ, শেষের আকাশ। শুরুর আকাশে দেখি “মহিমা তব উদ্ভাসিত মহাগগন মাঝে”, আকাশ জুড়ে ভবখণ্ডনের আরতি। শেষের আকাশ শুধু মহামানবের বন্দনায় মুখর। এমন কি সুরলোকেও শুধু তাঁরই অভ্যর্থনার আয়োজন। সমাপতন ? সম্ভবত না। জীবনের শেষ বেলায় রবীন্দ্রনাথের “পূজা” পর্যায়ের গানের সংখ্যা ক্রমশঃ হ্রাস পেয়েছে। ৭৫ থেকে ৮০ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ জীবনের শেষ পাঁচ বছর তিনি ২৭৫টি গান লিখেছিলেন; এর মধ্যে পূজা পর্যায়ের গান মাত্র ৫টি। যেখানে তাঁর “পূজা” এবং “পূজা ও প্রার্থনা” পর্যায়ের গানের সংখ্যা যথাক্রমে ৬১৭ ও ৮৩। কবির দৃষ্টি সৃষ্টিকর্তাকে ছেড়ে ক্রমশ তাঁর সৃষ্টির প্রতি — মানুষের প্রতি, প্রকৃতির প্রতি নিবদ্ধ হয়েছে। তাই জীবনের দিনান্ত বেলায় তাঁর সৃষ্টিসম্ভারে দেখা যায় প্রেম, প্রকৃতি, আনুষ্ঠানিক সঙ্গীত ও নাট্যগীতির প্রাধান্য।

এ তো সেই রবীন্দ্রনাথ সভ্যতার সঙ্কটমুহূর্তেও যিনি উচ্চারণ করেন , “মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ।”

তথ্যসূত্র
প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : গীতবিতান কালানুক্রমিক সূচী, টেগোর রিসার্চ ইনষ্টিটিঊট,
কলকাতা,২০০৩, পৃ ১
ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী : রবীন্দ্রসঙ্গীতের ত্রিবেণীসঙ্গম, বিশ্বভারতী পত্রিকা, ১৩৬৫ ৮ম
বর্ষ, ৩য় সংখ্যা,পৃ ২০৫
ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী : রবীন্দ্রসঙ্গীতের ত্রিবেণীসঙ্গম, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলিকাতা, ১৪১৪, পৃ ১০-১১
প্রশান্তকুমার পাল : রবীন্দ্রজীবনী, প্রথম খণ্ড , ভূর্জপত্র, কলিকাতা,
১৩৮৯, পৃ ১৮৫-১৮৬
মৈত্রেয়ী দেবী, স্বর্গের কাছাকাছি, কলকাতা, প্রাইমা পাবলিকেসনস, ২০০৭, পৃ ৩১৪- ৩১৫
শান্তিদেব ঘোষ, রবীন্দ্রসঙ্গীত, কলিকাতা, বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, ১৪১৫, পৃ ২২৪
টীকা
১) মূল ভজনটি রচনার উপলক্ষটি দেখে নেওয়া যেতে পারে। শোনা যায় একবার গুরু নানক অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষদের নিয়ে কোন মন্দিরে আরতির অনুষ্ঠানে প্রবেশ করতে গেলে তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। তখন তিনি তাচ্ছিল্যভরে বলেন বিশ্বব্রহ্মাণ্ডব্যাপী যে মহা আরতি চলছে তার সঙ্গে মন্দিরের এই আরতির কোন তুলনাই হয় না। সেই পটভূমিতে
ভজনটি রচিত হয়।
২)গানটির প্রাথমিক রূপ এবং প্রথম সংশোধিত রূপটি তুলে দিচ্ছি
১. ঐ মানব আসে
মহামানব আসে
দিকে দিগন্তে রোমাঞ্চ লাগে
সারা ধরণীর ঘাসে ঘাসে।
আজিকে বাতাসে ঘোষণা উঠিল
মহাজন্মের লগ্ন
অমাবস্যার নিবিড় আঁধারে
আকাশ আজিকে মগ্ন।
দানবপক্ষী অম্বরপথে
চালনা করিছে পক্ষ
মৃত্যুর বীজে কৃষির ক্ষেত্রে ভরি দিবে ছিল লক্ষ্য ।
আজি জন্মের দিন,
স্বর্গলোকের বিজয়পতাকা
ঐ হল উড্ডীন।
থর থর করি ধরণী যখন
কাঁপিয়া উঠিল ত্রাসে
উঠিয়াছে রব মাভৈঃ মাভৈঃ

মহামানব আসে।
মন্ত্রমুগ্ধ যন্ত্রের দল
তার চরণের কাছে
মহামানব আসে
তিমির ভেদিয়া বিজয়পতাকা
উড্ডীন মহাকাশে।
কোথায় বাজিল শঙ্খ
কোথায় বাজিল ডঙ্ক
জয় মানবের জয় মানবের
বাজে কন্ঠে অসংখ্য।।

২. ঐ মহামানব আসে আসে রে
ঐ মহামানব আসে ।
দিকে দিগন্তে রোমাঞ্চ লাগিল
ধরণীর ঘাসে ঘাসে।
বাতাসে বাতাসে ঘোষণা উঠিল
এল মহাজন্মের লগ্ন
আকাশে আজিকে মগ্ন
মৃত্যুর বাহন দানবপক্ষী
পক্ষ হয়েছে আজ ভগ্ন
এল শুভজন্মের দিন
দিবালোকের আজি জয়যাত্রার পথে কিরণপতাকা উড্ডীন
উদয়শিখরপথে মাভৈঃ মাভৈঃ রব ঐ মহামানব আসে
দ্যুলোক ভূলোক আজি জ্যোতিবিভাসিত
নবজীবনের আশ্বাসে
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ
নরলোকে বেজে ওঠে ডঙ্ক
জয় জয় মানবের জয় মহামানবের
বেজে ওঠে কন্ঠে অসংখ্য ।।

[লেখকের অন্যান্য রচনা]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
SHOUVIK DE
SHOUVIK DE
4 months ago

এখনও কত ইতিহাস জানার বাকি আছে। এই দুটি গানের তথ্য জানাছিল কিন্তু এত বিশদ আলোকপাত …. নাহ। রবিচক্রের ঘুর্ণি সক্রিয় থাকুক। আমরা সেই রথের চাকায় মাথা ঠেকাই।