রসাত্মক খেউড় থেকে রূপান্তরের গল্প এবং
এক ডজন লিমেরিক
লিমেরিক বলা যেতে পারে একধরণের চুটকি ছড়া মুখ্যত হাস্য এবং ব্যঙ্গরসাত্মক। পাঁচটি লাইনে গড়া এই পঞ্চপদীর প্রথম , দ্বিতীয় এবং পঞ্চম লাইনে একই অন্তমিল এবং তৃতীয় ও চতুর্থ লাইনে আলাদা অন্তমিল এবং তারা আকারে এবং মাত্রায় কিছুটা ছোট। অর্থাৎ মিলের বিন্যাস ক ক খ খ ক । এর উদ্ভব ১৮ শতকে আয়ারল্যান্ডের একটা কাউন্টি Limerick এর সেনা ছাউনিতে ব্রিগেডিয়ারদের মদ্যপান করতে করতে খেউড়ের উল্লাস থেকে , বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যা শ্লীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে যেত এবং শেষ হত ‘Won’t you come to Limerick? ” এই বাক্যটি দিয়ে। ১৯ শতকে এডোয়ার্ড লীয়ার একে পরিমার্জিত এবং শিল্পিত করে তোলেন তাঁর ননসেন্স কবিতায়। পরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এর প্রচলন শুরু হয়ে যায় । বাংলা সাহিত্যেও রবীন্দ্রনাথ থেকে আজ অবধি বহু কবিই এই আঙ্গিকটিকে ব্যবহার করেছেন। একটা বিখ্যাত উদাহরণ:
“There was a young woman named Bright,
Whose speed was much faster than light .
She set out one day,
In a relative way,
And returned on the previous night.”
(Arthur Henry Reginald Buller)
রবীন্দ্রনাথের একটা লিমেরিক:
“ডাকাতের সাড়া পেয়ে তাড়াতাড়ি ইজেরে
চোখ ঢেকে মুখ ঢেকে ঢাকা দিল নিজেরে ।
পেটে ছুরি লাগালো কি ,
প্রাণ তার ভাগালো কি ,
দেখতে পেল না কালু হল তার কী যে রে !”
ll লিমেরিক এক ডজন – শ্রী চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্যর কলমে ll
(১)
জষ্টির ষষ্টিতে মহা হৈ চৈ ,
জামাই এলেন নিয়ে দই ভুলে বই ,
মস্ত সে জমিদার ,
কথা নিয়ে কারবার ,
শাশুড়ির হাতে খান চৈ দিয়ে কৈ ।
(২)
লাল নীল হাসি হয়ে আজও ওড়ে পায়রা ,
কবেই উড়িয়েছিল গড়পারের রায়রা ,
ঝাঁসি থেকে ফালাকাটা ,
দমদমে দমফাটা ,
শ্যালদার পেট ফুঁড়ে হাসি ছোটে হাওড়া ।
(৩)
বই পড়ে চোর ধরে ফেলুরাম মিত্তির ,
ঘুম পেলে এঁকে ফেলে চোরের চরিত্তির ,
ডাম্বেল ভাঁজে নাকো ,
নেই কোনো হাঁকডাকও ,
বারো গাঁ-র দারোগার রাগে জ্বলে চিত্তির।
(৪)
সোদপুরে সুদখোর গালফোলা ভোম্বল ,
টাকা গুনে হাত কালো ধুতে গেল চম্বল ,
সাথে নিল বদ্যি ,
বলে বুকে সদ্দি ,
খেতে হবে জ্যোছনার আলো গুলে দম্বল।
(৫)
পেনেটির পেটমোটা মহাজন নন্দ
হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে নাক কেন বন্ধ?
নিয়ে এসো চাবিওলা ,
সিঁথি থেকে যাও ঘোলা ,
এনে দাও কালো কালো টাকা টাকা গন্ধ।
(৬)
চোখ ঢাকা কান ঢাকা এক হাঁড়ি বদ,
নাক ঘষে খুঁজে পান ধন সম্পদ ,
মাটি নদী বালি খান,
ভোটরঙ্গে দাঁড়ান,
জিতে গিয়ে পান দেশ-সেবকের পদ ।
(৭)
কানে হাত ওস্তাদ গাইছেন গান ,
বিদ্যুৎ ছোটে সুরে চমকায় প্রাণ ,
রাত দুপহর পার,
গাইছেন মল্লার,
শ্রোতাদের নাক ডাকে যেন মেঘে তান।
(৮)
গলায় ছুটছে তান সুরে যন্ত্ররা , ,
দু প্রহর শেষ হল সবে অন্তরা ,
ভোর হয়ে যায় রাত,
রসে বশে সব কাত,
নাক ডাকে তালে তালে চোখ ছানাবড়া ।
(৯)
সারি সারি হাত ওঠে মুখে ফোটে খই ,
ভেঙে দাও সামাজিক বৈষম্যই ,
শ্মশান ঘাটের দাশু
পায়ে ছেঁড়া পাম্প শু
ছায়া তার হেঁটে যায় অস্পৃশ্যই ।
(১০)
ভ্যাবাচ্যাকা থতমত দাশু ডোম, হায় ,
ভাবে কেন কাছে গেলে লোকে ধমকায় ,
তার হাতে সৎকার
সে বেশ চমৎকার
তবু তার ছায়া দেখে কেন চমকায় ।
(১১)
সোমবারে সোমবাবু হেঁটে যান ধীরে ,
কী যে হলো মনে নেই চূর্ণীর তীরে,
ছিল বুঝি এলিয়েন,
কোথায় নিয়ে গেলেন ,
ফেরান আগের দিন মাঝ রাত্তিরে।
(১২)
যে কোনো পেন পেলেই লেখেন বাচস্পতি সেন,
শব্দে ছন্দে যতই অমিল নিশ্চিত মেলাবেন,
যাহাই দেখেন বর্ণে গন্ধে
সবই লেখেন খেয়াল ছন্দে
ঘরে বসেই ঘুরে আসেন জাপান হতে স্পেন।
সম্মৃদ্ধ হলাম। আপনার লিমেরিক সত্যিই অনন্য !