“তাঁরে জেনে তাঁর পানে চাহি, মৃত্যুরে লঙ্ঘিতে পারো, অন্য পথ নাহি।” – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জীবনের সবচেয়ে বড় সত্য, মৃত্যু। তাকে অতিক্রম করে যুগে যুগে দেশে দেশে, হাসিমুখে বিপ্লবীরা নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করে, হয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়ী।
“আপনি মারছেন কেন? গুলি করুন।” “এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আপনারাই এখানে বহিরাগত, আপনারা চলে যান।” পুলিশের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের এমন আরও অনেক সদর্প সংলাপ, সমাজ মাধ্যমের পথ বেয়ে বিক্ষিপ্ত ভাবে আমাদের কানে এসেছে। আমরা দেখেছি, ঋজু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি তরুণ, কেমন করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে!
অতঃপর সব যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বেড়া-র এ-পাড়ে দাঁড়িয়ে আমরা খোঁজার চেষ্টা করলাম, পরিচিত মানুষের কুশল সংবাদ। এখান থেকে যারা ওদেশে পড়তে বা কাজ করতে গিয়েছিলেন, তাদেরও সংবাদ পাওয়ার মরিয়া চেষ্টা চলেছে। কিন্তু খবরের পালে হাওয়া লাগেনি।
ধ্বংসলীলার মধ্যেই কয়েকটি বিদেশী দূতাবাসে অতিরিক্ত তৎপরতার খবর এসেছে। অথচ দু-দেশের মধ্যে, কোন সংবাদ মাধ্যমের, অপর দেশে নিজস্ব সংবাদদাতা নেই। আমরা এই বিচ্ছিন্ন থেকে ঠিক কী প্রমাণ করতে চেয়েছি?
একই সঙ্গে, এ দেশের সমাজ মাধ্যম জুড়ে বিদ্বেষ আর ঘৃণার মন্তব্য, “যারা আমাদের খেলায় পরাজিত হতে দেখে আনন্দ পায়, তাদের জন্য কোন সমবেদনা নেই।”
মন্তব্যগুলোতে ফলবতী বিষবৃক্ষের আভাষ স্পষ্ট। সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনের যে রক্তক্ষয়ী ধ্বংসলীলা সকলে প্রত্যক্ষ করল, তার আইনি পথে সমাধানের প্রক্রিয়া কিন্তু দুহাজার আঠারো সাল থেকে শুরু হয়েছিল। তার পরেও এই আত্মঘাতী আন্দোলন কেন? কে বা কারা ছাত্র ছাত্রীদের এমনভাবে উসকে দিয়েছে? ঠিক কোন পক্ষ লাভবান হলো? তার হিসেব রাখে কে? হত্যার গন্ধ পেয়ে কারা উৎফুল্ল হয়ে উঠছে?
একদিকে পঠনপাঠন বাদ দিয়ে হিংসাত্মক প্রক্রিয়াতে যুবসমাজকে নামিয়ে, অন্যদিকে পড়াশোনার অন্যতম স্তম্ভ, শিক্ষক নিয়োগে চূড়ান্ত গাফিলতি করে, দুই বাংলাই, জাতির দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি সাধনের পথ প্রশস্ত করে চলেছে।
শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে পারলেই জাতিকে সম্পূর্ণ রূপে বিনষ্ট করা যায়, সেখানে অস্ত্রের প্রয়োজন হয় না। ঘটনার অভিমুখ লক্ষ করলেই আমরা বুঝতে পারবো, কোন গন্তব্যের দিকে আমরা ক্রমশঃ অগ্রসর হচ্ছি। পাশের বাড়িতে আগুন লেগেছে, বলে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে ভালো থাকব, সেটা সম্ভব নয়। পৃথিবী জুড়ে চলা এই ঘটনা প্রবাহ অন্য বড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিতবাহী। এটা শুধুমাত্র কোন একটি ভৌগলিক সীমানার আভ্যন্তরীণ সমস্যা বা গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের সময় থেকে, এই বৃহত্তর উভয় বঙ্গভূমির গৃহবাসী এবং প্রবাসী নাগরিকরা, বহুমাত্রিক স্বার্থে দীর্ণ। শ্যেনদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে বৈরীভাবাপন্ন বেশ কিছু বৈদেশিক শক্তি।
এই মৃত্যুগন্ধী পথের শেষে আমাদের পৌঁছতে দেখে কারা উল্লসিত হচ্ছেন, তাদের খুঁজে পাওয়া প্রয়োজন।
“রবিচক্র মানেই চোখের সামনে কোনো না কোনো সাংস্কৃতিক গুপ্তধনের সাক্ষাৎ এ যাবৎ যা চোখ এবং মনের আড়ালে প্রায় হারিয়েই যেতে বসেছিল। না, প্রকাশ নয়, এ একেবারে আবির্ভাব যা মনকে যুগপৎ বিস্মিত এবং আনন্দিত করে তোলে। সেই অর্থে এই পত্রিকার চরিত্রকে সাংস্কৃতিক প্রত্নসন্ধানী বললে বোধ হয় খুব ভুল হবে না। প্রথম সংখ্যা থেকেই এর এই ব্যতিক্রমী পথ চলা যার সঙ্গে শুধু পর্বতারোহণেরই তুলনা চলে যেখানে উত্তরোত্তর আরোহণ আছে, অবরোহণ নেই। শ্রম আছে, ক্লান্তি নেই। প্রতিটি সংখ্যায় সম্পাদকীয় অনবদ্য, লেখাগুলিও গভীরসঞ্চারী যা মনকে সমৃদ্ধ করে তোলে। এ সংখ্যাতেও যথারীতি তার ব্যতিক্রম হয় নি, যদিও সব লেখা পড়ে ওঠা হয় নি। তবে বর্ষামঙ্গল শুনলাম। দুজন শিল্পীই প্রত্যাশা অনুযায়ী গেয়েছেন, বোঝাই যায় রবীন্দ্রসঙ্গীতে দীক্ষা আছে।” … চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য, কলকাতা
রবিচক্র অনলাইন আপনাদের কেমন লাগছে? নিচের ঠিকানায় লিখে জানান। ইমেল-ও করতে পারেন। চিঠি অথবা ইমেল-এর সঙ্গে নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর থাকা বাঞ্ছনীয়।
রবিচক্র
‘প্রভাসতীর্থ’, ৭৬ ইলিয়াস রোড, আগরপাড়া, কলকাতা – ৭০০০৫৮, ভারত
editor@robichakro.com