Category: দেবাশীষ গোস্বামী
মুক্তিস্নান
ঘোষেদের মজা পুকুর কচুরি পানায় আচ্ছন্ন । পার দিয়ে উঁচু নিচু মেঠো পথ। নিমাইয়ের বাড়ি । সে দাওয়ার ওপর বসে । মাথার ওপরে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পচা খড়ের চাল আর পাখিদের কিচিরমিচির। হাড়জিরজিরে শরীর, প্রায় ঠিকরে বেরিয়ে আসা চোয়ালের হাড়, স্থির ঘোলাটে চোখ – নিথর বসে আছে অনেকক্ষন। নিমাই বোষ্টম।ঘরের ভিতর থেকে তেড়ে আসছে চাপা…
ক্ষমা কোরো, কবি
কি আশ্চর্য!কখনোই হারিয়ে যাও না।একশো চৌষট্টি বৈশাখ পার করেএখনো ফিরে ফিরে আসোপঁচিশের ভোরে, গলির মোড়ে,কৃষ্ণচূড়ার আঁচে, সেঁকে দাওস্যাঁতলা নন্দিন পদাবলীআমাদের।ঝড়ে, বৃষ্টিতে, বজ্রপাতেবাঁচার তাগিদে মিথ্যাপাতেকখনোই ভেঙে পড়ো না।তিরাশি শ্রাবন পার করেএখনো ফিরে ফিরে আসোহাঁটু জলে, বাইশের মেঘের ঢলে,বাড়ি ফিরে কৃষ্ণকলিযেখানে বাসন মেজে চলে।কবিতায়, গানেতর্ক, বিতর্কের দর্পবাণেতোমায় ছুঁতে চেয়েছি কতবার।অল্প থেকে অল্পতর হয়েশুধু লজ্জা পেয়েছি প্রতিবার।আজ মুখ…
মকর পরব আসিচে ঢেউ মাইরে
ইতুর – ঘট মালসা, ভাসান দিয়ে নব অন্নে নবান্ন শেষ হয়েছে প্রায় এক মাস হলো। এখন খামারে সারি সারি শ্রী যুক্ত খড়ের পালোই, মরাই জঠরে টইটম্বুর দুধেল ধান। ক্ষেত প্রসবিত শালিনী শস্যের শেষ স্বাস্থ্যবতী আঁটি যত্নে কাঁধে নিয়ে অনিল মুর্মু বাড়ি ফিরছে। ওই তো ওর ‘দিনিমাই’। ওকে নিয়েই তো অনিলের নাবালিকা ফুলকি ‘টুসু’ পাতবে। মেঠো…
বাদলনামা
এখনো আকাশে বাদল মাদলধিতাং নাতিন বাজেমাঠমঞ্চে মুষলধারেবৃষ্টিরা ওই সাজে।মুখোশ খোলা মুখের কথাবলছে ওরা শোনঅনিশ্চিতের পাতকুয়োতেনতুন দৃষ্টিকোণ। বাদলবাবু মনে আছে, পাগলা ঘোড়া করার সময়ে শম্ভূ মিত্র বলেছিলেন,’আচ্ছা হুইস্কি কি নীট খাওয়া যায়? শ্মশানের ওই চারজন তো খাচ্ছে?’ স্বভাবসিদ্ধ তাৎক্ষণিক জবাব ছিল, ‘আপনার কথা জানি না আমি অন্তত তো নীটই খাই!’ বিশ্বাস করুন আজ আমিও ওই যাকে…
কুলুর দশেরা মোচ্চপ আর ঈশ্বরীকথা
আঁটোসাঁটো শহুরে মুখোশ কোনোমতে হিঁচড়ে খুলে, সিলিকা জেলে ডুবিয়ে রাখা ছোট বড় লেন্স, ব্যাগে পুরে, দীর্ঘ পাকদন্ডী অনর্গল ঘুরে, দশেরার দিন, পৌঁছে গিয়েছিলাম সবুজ চাদরে মোড়া কুলুর ধউলপুর উপত্যকায়। উৎসব শুরু হয়ে গেছে সকাল থেকেই। রংবাহারি সোনায় রূপোয় মোড়া ডোলিতে চড়ে, হরেকরকম ঢোল বাজিয়ে, লম্বা চকচকে শিঙ্গা ফুঁকে প্রায় একশোর কাছাকাছি দেব দেবীরা যে যার…
দুগ্গা কাহিনী
কলা পাতায় তেরছা আলো। ছিটে মেঘের বজ্র নিনাদ । মা দুর্গা আসছেন। ঐতো আকাশে সিংহের আগমনী গর্জন। জমির আলে কাশবন। এক থালা ভাতের মতো সাদা – দুলছে, ডাকছে : আয় গো উমা ঘরে আয়। রেল লাইন ধরে মুঠো ভর্তি শিউলি নিয়ে অনু ছুটছে। পুরোনো ধূসর প্যান্ট, আদুড় গা, এলোমেলো চুল, একজোড়া দিগন্ত চোখ। অনু ছুটছে,…
হেমন্ত, হেমন্ত কুমার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
চিরকুমার কণ্ঠ দিয়ে সপ্তসুরকে যিনি বাঙালির মজ্জায় মিশিয়েছেন, তাঁর গল্প। মনে হয় রবি ঠাকুরের ‘হেমন্তে কোন বসন্তেরই বাণী’ গানের ঔরসে জন্ম। নইলে কি করে হয় – নামে হেমন্ত গলায় বসন্ত। অসম্ভব ! ভাবা যায় : ষাট বছরের গায়কের গানে লিপ দিচ্ছে বাইশ বছরের তরুণ ! ছাতিমতলার উপাসনাগারের রঙিন কাঁচ ভেঙে জন্ম নিচ্ছে সুপার হিট – চরণ ধরিতে দিয়ো…
দেব-ব্রতকথা
জন্মদিনে দেবব্রত-স্মরণ – দেবাশীষ গোস্বামী বাইশে অগাস্ট। পড়ার টেবিলে সারাটা বছর অক্লান্ত দাঁড়িয়ে থাকা কোনো এক ছবি ছাপিয়ে আরও ছবিদের পুনঃপ্রকাশ-দিন । ছবি মানে দৃশ্য, মানে সেপিয়া স্মৃতিবৃষ্টি । নস্টালজিয়া। যেমন – রাত সাড়ে তিনটের নিশুত প্রহর – রাসবিহারী এভেন্যুয়ের এক অপ্রশস্ত সবুজ শ্যাওলা গলির শেষে ঘুপচি ঘর – টেবিলের ওপর ওষুধের শিশি সরানোর শিরশিরানি –…