
বাংলা গানের স্বর্ণযুগের গীতিকার – সুরকারদের শেষ বিশিষ্ট মানুষটি হলেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। বাকিদের থেকে কিছুটা পরে ষাটের দশকে তিনি সঙ্গীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে গীতিকার,সুরকার এবং গায়ক। নব্বইয়ের দশকের তথাকথিত জীবনমুখী গানের শিল্পীদের সঙ্গে সেতুবন্ধনকারী সঙ্গীতনির্মাতা হিসাবে তাঁকে চিহ্নিত করা যায়।

১৯৩৪ সালের ১৩ই ডিসেম্বর চুঁচুড়ার এক শিবভক্ত পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। আট ভাইয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন জটিলেশ্বর। শিবের নামেই সব ভাইদের নাম ছিল। শৈলেশ্বর, ঈশানেশ্বর, কপিলেশ্বর, জটিলেশ্বর ইত্যাদি। বাড়িতে গানের পরিবেশ ছিল। দাদাদের অনেকে এবং একমাত্র দিদি শ্রীমতী ঊষা মুখোপাধ্যায়ও ভাল গান গাইতেন। তার মধ্যে ন’দা কপিলেশ্বর মুখোপাধ্যায় তো রীতিমত হারমোনিয়াম বাজিয়ে আসরে গাইতেন। বাড়ীর এই পরিবেশের প্রভাবে খুব স্বাভাবিক ভাবে একটু বড় হবার পর জটিলেশ্বরের ভেতরে গান জেগে উঠেছিল।রেডিও আর গ্রামোফোন রেকর্ডের দৌলতে আকর্ষণীয় গানের জোগান তো কম ছিলনা। একের পর এক সে সব গান শুনে শুনে শিখে তিনি বন্ধু-বান্ধবদের আসরে গেয়ে আসর মাত করতেন। বিশেষ পছন্দ ছিল ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, শচীন দেব বর্মণ ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান। বন্ধু-বান্ধবদের প্রশংসা আর প্রচারে নাম হল খুব। ছোটখাট অনুষ্ঠানে ডাক পড়তে লাগল। কিন্তু হারমোনিয়ামের সঙ্গে তখনও কোন রকম পরিচয় হয়নি তাঁর। এই ভাবে চলতে চলতে হুগলী উইমেন্স কলেজের জলসায় একদিন ডাক পেলেন গান শোনাবার। তখন সলিল চৌধুরীর সঙ্গীত পরিচালনায় ‘পাশের বাড়ী ‘ছবিতে ধনঞ্জয় ভট্টাচার্যের গাওয়া ‘ঝির ঝির ঝির ঝির-ঝিরি বরষায়’ গানটি খুব জনপ্রিয় হয়েছে। জটিলেশ্বর ওঁর গানের ভঙ্গি আর আওয়াজ নকল করে ওই গান গেয়ে আসর জমিয়ে দিলেন। পরে শ্রোতাদের আবদারে আরো অনেক গান শোনালেন। ফলে কলেজের এক দাদা গোছের একজন একদিন জটিলেশ্বরকে তাঁর বাড়িতে ডেকে নিয়ে গেলেন সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সাথে দেখা করাতে।

সতীনাথ বাবু তো চুঁচুড়ারই সন্তান। তিনি তখন প্রায়ই চুঁচুড়ায় তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে আসতেন। সেদিনও এমনই এসেছেন। সতীনাথ বাবু সেদিন ওঁর সেবারের পুজোর গানদুটি শোনালেন। ‘ এ জীবনে আর কিছু ভাল লাগে না’ আর ‘পাষাণের বুকে লিখো না আমার নাম’। ঘরে সেই গানের রেশ থাকতে থাকতেই দাদার সার্টিফিকেট ভেসে উঠল, ‘ জটিল কিন্তু বেশ গায়। আপনার গানও জানে’। সতীনাথ বাবুর আদেশে বেশ কিছুটা জড়তা কাটিয়ে সতীনাথ বাবুরই একটা গান ‘আমি খেলায় থাকব মেতে, তবু তোমায় ডাকা ভুলব না’ গাইলেন।
গান থামাতে দেখেন সতীনাথ স্থির দৃষ্টিতে ওঁকে দেখছেন, জিজ্ঞেস করলেন, ‘ আমার গান ছাড়া আর কার গান জানো?’ নার্ভাস গলায় তিনি জানালেন তিনি শচীনদেব, ধনঞ্জয় বাবু আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান জানেন। সতীনাথ বাবু শোনাতে বললে তিনি প্রথমে শচীনদেব ও পরে ধনঞ্জয় বাবুর গান গাইলেন। গান থামলে সতীনাথ বাবু হারমোনিয়াম থামিয়ে ওঁর বন্ধুকে, যাঁর বাড়িতে আসর বসেছিল, বললেন, ‘বুঝলি শ্যাম, এ তো নকল করতে করতে নিজের গলাটাই হারিয়ে ফেলেছে। তবে চেষ্টা করলে নকলের চলটা চলেও যায়’। তারপর জটিলেশ্বরকে বললেন, ‘ শোনো, তোমার পরীক্ষা শেষ হলে আমার কাছে চলে এসো’।
সেই যে পরীক্ষা শেষ করে একডালিয়া প্লেসে সতীনাথ বাবুর বাড়ী যাওয়া শুরু হল,সেই সময় থেকেই তাঁর প্রকৃত সঙ্গীতের খোঁজ শুরু হয়েছিল। তারপর একে একে চিন্ময় লাহিড়ী, সুধীন দাশগুপ্ত র কাছে গান শিখেছেন। সারা দিন ঘাড় গুঁজে সরকারী অফিসে চাকরী করে, ডেলি প্যাসেঞ্জারি, ট্রাম বাস পাল্টে পাল্টে গুরুদের কাছে শিখতে যাওয়া থেকে মধ্যবিত্ত জীবনের সব ঝক্কি সামলেছেন। গলফ গ্রীনে পাকা বসত করার আগে উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতা মিলিয়ে কম আস্তানায় দিন গুজরান হয়নি জটিলেশ্বরের। মেসে বন্ধুদের সঙ্গে বিছানা শেয়ার করে থাকা, মেসে-হোটেলে পাত পাড়া, কিছুই বাদ যায়নি।
আনুষ্ঠানিক ভাবে গান গাওয়া শুরু হয়েছিল সুধীন দাশগুপ্তের পরিচালনায় আইপিটিএ র অনুষ্ঠানে কোরাসে গান গেয়ে। তখন নিজের কথা ও সুরে তৈরী করেছিলেন ‘মহীয়সী ধাত্রী ও ধরিত্রী মা/ সইতে শেখাও মা সইতে শেখাও,/ কোটি কোটি ফুলকে একটি মালায় গেঁথে/ কাছাকাছি পাশাপাশি রইতে শেখাও ‘। এ’ রকম আরো কিছু গান তখন তৈরী করেছিলেন। এ’ থেকে অনুমান করা যায়,সেই সময়েই ওঁর মনে বিশ্বপ্রেমের উন্মেষ ঘটেছিল।

ষাটের দশকে যখন জটিলেশ্বর বাংলা গানের জগতে আত্মপ্রকাশ করেন, তখন বাংলা গানের নদীতে ভরা কোটাল চলছে। দিকপাল গায়ক গায়িকারা মাঝ আকাশে আলো করে আছেন। প্রথম দুটি রেকর্ড করেছিলেন সুধীন দাশগুপ্ত ও সলিল চৌধুরীর সুরে।
সলিল চৌধুরীর কাছে ওঁকে নিয়ে যান মেগাফোন কোম্পানির কর্ণধার।সেখানেও প্রাথমিক আলাপ পরিচয়ের পরে ওঁকে গানের পরীক্ষা দিতে হয়েছিল। গেয়েছিলেন ‘ডাক হরকরা’ ছবিতে সুধীন দাশগুপ্তর সুরে মান্না দে র গাওয়া সেই অবিস্মরণীয় গান, ‘ওগো তোমার শেষ বিচারের আশায় আমি বসে আছি’। সলিল বাবু ঠিক করলেন ওঁকে দুটো গান দেবেন। সেই মত রেকর্ড করাতে গিয়ে জটিলেশ্বর প্রথমে দুটো গানেরই আধখানা করে কথা পেয়েছিলেন। সলিল বাবুকে সেকথা জানালে যথারীতি তিনি রেকর্ডিং শুরু হবার আগে একটা গানের বাকি অংশটা লিখে এনে রেকর্ডিং শুরু করিয়েছিলেন। সেই গানটি হল, ‘পাগল হাওয়া’। দ্বিতীয় গানটিও সেভাবেই কিস্তিতে পেয়েছিলেন জটিলেশ্বর।

শ্রোতাদের কাছ থেকে সেসব গানের যে সাড়া পেয়েছিলেন, তা থেকে তিনি হয়তো বুঝেছিলেন এভাবে চললে একদিন তিনি মাঝারি মাপের গায়ক হয়েই থাকবেন। এখান থেকেই তাঁর আলাদা হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল। নিজেকে গানের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তিনি এক দুর্গম পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। ওঁর জীবনের আই পি টি এ পর্ব থেকেই ওঁর গান লেখা আর সুর করার কাজটা শুরু হয়েছিল।
১৯৬৮ সালে জটিলেশ্বরের নিজের কথা ও সুরে ‘বধুয়া আমার চোখে জল এনেছে , হায় বিনা কারণে’ গানটির রেকর্ড বেরোলে সেটা খুব জনপ্রিয় হয়। খুব উৎসাহ পেয়েছিলেন সমবয়সী গীতিকার অমিতাভ নাহা, সুরকার অশোক রায়ের মত সেই সময়ের উঠতি প্রতিভাদের কাছ থেকে।
সেই সময় থেকেই তিনি নিয়মিত গান লেখা, সেসব গানে সুর করা, ডাক পেলে রেডিওতে তার থেকে কিছু গান পরিবেশন করা, গ্রামোফোন কোম্পানি চাইলে গান রেকর্ড করানো আর সর্বোপরি অসংখ্য ছেলে-মেয়েদের গান শেখানো নিয়ে দশকের পর দশক কাটিয়ে দিয়েছেন। আশির দশকে আধুনিক বাংলা গানের স্রোতধারা যখন ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে, তখন একটু একটু করে জটিলেশ্বরের গানগুলি উজ্জ্বল হয়ে উঠে এক বিশেষ ঘরানার গান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে সঙ্গীত-চেতনার পাশাপাশি এক শক্তিশালী কবিচেতনা ছিল। কোন একটি বিষয় তাঁর গানের ভাবনার মধ্যে এলে তিনি সেই বিষয়ের ভাল-মন্দ দুদিক নিয়েই ভাবতেন। ভাল দিকটা নিয়ে হয়তো অনেক কিছু বলা হয়ে গেছে আগে, কিন্তু মন্দটা উপেক্ষিত হয়ে আছে। ওঁর কলম থেকে সেটা নিয়েই ওঁর অনুভব প্রকাশ পেত। উদাহরণ হিসাবে যদি ‘কেউ বলে ফাল্গুন’ গানটিকে ধরা যায়, সেখানে তিনি ফাল্গুন মাসকে ‘সর্বনাশ’ বলেছেন। নদীকে কোন নাম না দিয়ে তাঁর ‘চোখের জলোচ্ছাস’ বলেছেন। আমাদের কারও শুনতে অদ্ভুত লাগলেও কোন খরাপীড়িত অথবা বন্যাপীড়িত মানুষরা এই কথাগুলির মর্ম সহজেই বুঝে যাবেন।
আবার ‘আমি ফুলকে যেদিন ধরে বেঁধে আমার সাজি ভরেছি/আমি সেদিন থেকেই জেতা বাজি হেরেছি’ গানটি নিয়ে যদি ভাবি, সেটা যে অর্থ নিয়ে আসে সেটাও তো দারুন। সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ প্রকৃতিকে জয় করার নামে যেভাবে প্রকৃতির উপরে অত্যাচার চালিয়ে কিছু করেছে,তাতে মানুষের যত উপকার হয়েছে,তার থেকে মানুষ বা অন্য প্রাণীদের বেশী ক্ষতিই হয়েছে। সভ্যতার সেই জয়কেই কি উনি জেতা বাজি হারা মনে করেছেন?একজন সচেতন এবং অনুভবী মানুষ হিসাবে একটা ক্ষোভ আর আক্ষেপের প্রকাশ এই গানে ফুটে উঠেছে। এভাবেই আমরা ওঁর গানে এক ভিন্ন স্বর খুঁজে পাই।

কোন গানকে নিজের বোধ ও অনুভূতি মিশিয়ে পরিবেশন করাকে তিনি ‘বলা’ বলতেন। গানে যা বলার, সেটা খুব নম্র অথচ দৃঢ়ভাবে বলেছেন। তারপর একজন শিক্ষকের মত উদাহরণ দিয়ে সেটাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। উদাহরণ হিসাবে দুটি গানের কথা বলা যায়,
একটি গানের প্রথম লাইন,
‘অন্ধকার চিরন্তন চিরন্তন।/ আলো ততক্ষণ, জ্বালো যতক্ষণ।‘
প্রথম অন্তরাতে বলছেন,
‘ওই মেঘের ঘনঘটায়,
মাঝে মাঝে রঙিন বিজলী চমকায়,
জ্বলে আর নিভে যায়।
সেই ক্ষণিক ঝিলিকে বারবার
কালো রাত্রি যে আরো কালোবরণ,
মনোহরণ, চিরন্তন।‘
দ্বিতীয় গানটির প্রথম লাইন,
‘প্রতিদিন আমি যা দেখি সবই নতুন মনে হয়।
তাই, যে কোন দিন আমার জন্মদিন ‘।
গানটির প্রথম অন্তরায় বলছেন,
‘কাল যে নতুন ছিল মুকুল,
আজ সে ফুটেও নতুন ফুল।
আগামীকাল সে যদি ঝরেও,
ঝরে নতুন স্মৃতি হয়।’

সারা জীবনের নানা সময়ে গানে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা করে গেছেন। এরকম বেশ কিছু গানের মধ্যে একটি গানের কিছুটা উল্লেখ করি।গানটির প্রথম স্তবক:
‘আমার মন দোতারার একটি তার
বাজে বসন্ত বাহারে
আর একটি তারে শুনি সেই চেনা সুর
‘দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পার কর আমারে।‘
এই গানের সঞ্চারীতে বলেছেন,
‘আমার দুই নয়নের একটি নয়ন
রূপের নেশায় মগন।
আর একটি জলে ভাসে
আকাশে বাতাসে খোঁজে অরূপরতন।‘
প্রেমের গানেও ওঁর সৃষ্টি অসাধারণ। উদাহরণ হিসাবে একটি গানের কথাগুলি তুলে দিলাম।
‘তোমার জন্য এনে দিলাম
রাত শিশিরের জলতরং,
জোছনা ধোয়া গাছের পাতা,
লাল শিমুলের অন্য রং
তুমি নিলেনা,মুখ ফিরালে উপেক্ষায়।
এনে দিলাম রোদে মাখা ঘাসের ফুল,
হাওয়ায় ওড়া সাদা মেঘের ঝুমকো দুল,
আমার সোহাগ সাগর দেখা নদীর কূল,
তাও নিলেনা,মুখ ফিরালে উপেক্ষায়।
এনে দিলাম চৈত্রশেষের পূর্বাভাস,
ভালোবাসার আগুন দেওয়া সর্বনাশ,
উড়িয়ে ফেলা তোমার যত উপহাস,
তাও নিলেনা, মুখ ফিরালে উপেক্ষায়।
জটিলেশ্বরের বেশীর ভাগ গানের বক্তা যে ‘আমি’ চরিত্রটি, তাকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার অবকাশ আছে। এই বিচিত্ররূপী ‘আমি’ নিয়ে কিছু বলতে গেলে ওঁর গানের অন্তরের কথা বেরিয়ে আসবে। এখানে সেটা সম্ভব নয়।

ওঁর গানের কথায় আর একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। সেটা হল, র গানের শব্দচয়ন পুরোপুরি কথ্য ভাষায়, একটুও কাব্যভাষায় নয়। সেদিক থেকেও ওঁকে জীবনমুখী গানের স্রষ্টাদের পূর্বসুরী বলা যায়।
জটিলেশ্বরের গান হিসাবে যে কটি গান আমরা প্রায়ই শুনতে পাই সে’গুলোকে বাদ দিলে আর যে সব গান আমরা খুঁজে বার করে শুনতে পারি, তার মধ্যে বেশীর ভাগ গান আসর মাতানো নয়। সে’সব নির্জন এককের গান। সেই গানগুলির মর্মে প্রবেশ করতে হলে একটু নিরালা অবসর দরকার হয়। তার মধ্যে এমন কিছু গান আছে, কাউকে ছোট না করেও বলা যায়, এমনকি ঘরোয়া আসরেও সেগুলো শোনাতে শুধু ওঁকেই দরকার পড়ে।
ওঁর গানের তালিকা এখানে দিলাম না। ইউ টিউবে যেটুকু পাওয়া যায়, সেটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে। শুধু যে গানগুলি অন্যের সুরে বা অন্যের কথায় ও সুরে সে রকম ওঁর কিছু গানের তালিকা নিচে দিলাম,
সলিল চৌধুরীর কথা ও সুরে ‘পাগল হাওয়া’ ও ‘আমার এ জীবনে শুধু’, অজয় ভট্টাচার্যের কথা ও সুধীন দাশগুপ্তের সুরে ‘সে ছিল আমার’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা ও অশোক রায়ের সুরে ‘প্রাণের রাধার কোন ঠিকানা’ ও ‘আহা ভালোবেসে এই বুঝেছি ‘ ইত্যাদি।
জটিলেশ্বরের কথা ও সুরে কিছু অন্য শিল্পীদের গাওয়া গানের তালিকা নিচে দিলাম।
পিন্টু ভট্টাচার্যের ‘আমি ফুলকে যেদিন’, ‘প্রেমের বাঁশী বাজে’, বনশ্রী সেনগুপ্তের ‘আমার অঙ্গে জ্বলে রংমশাল’, ‘যতই বল তোমায় আমি ভুলছি না’, অরুন্ধতী হোম চৌধুরীর ‘আমি তো হার মেনেই আছি’, অজয় চক্রবর্তীর ‘মোহন বাঁশী বাজে’, শ্রীরাধা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ও মাঝিরে ও মাঝি’, ‘বাঁশিটার একটাই দোষ’, লোপামুদ্রা মিত্রের ‘অনেক শহর ছাড়িয়ে’, কৌশিকী চক্রবর্তীর ‘কি কখন বলে বাঁশী’ ইত্যাদি।

সেরা সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে পুরস্কার পেয়েছিলেন ‘দামু’ এবং ‘নটী বিনোদিনী’ ছায়াছবিতে। ২০১৩ সালে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত অ্যাকাডেমি তাঁকে ‘জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ’ পদকে ভূষিত করে।
নিজের জীবনস্মৃতি নিয়ে ‘দিন গুলি মোর’ নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া ওঁর ‘এ কোন সকাল’ নামে একটি গানের সংকলন প্রকাশিত হয়েছিল।
২০১৭ সালের ২১ শে ডিসেম্বর কলকাতায় ওঁর জীবনাবসান হয়।
শোনা গেছে, জটিলেশ্বর মোট বারো’শ গানে সুর করেছিলেন। তার মধ্যে শ’ খানেক গানের রেকর্ড হয়েছিল। প্রথমত, ওঁর লেখা সেই বারো’শ গানের সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। দ্বিতীয়ত, উনি কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রীকে গান শিখিয়েছিলেন। অনুমান করা যায়, তাঁদের অনেকের কাছেই কিছু না কিছু না রেকর্ড করা গানের সংগ্রহ আছে। সেগুলি একত্রিত করে সংরক্ষণ করা একটা জরুরি কাজ এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের নিজেদের ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ওঁর শেখানো গানগুলি ওঁর পদ্ধতি মেনে শিখিয়ে পরম্পরা বজায় রাখার চেষ্টা করা। কারণ, এখনকার সময়ে যে সব সঙ্গীত শিক্ষার্থী বাংলা গানের শিল্পী হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখবে, তাদের কাছে জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের গান শেখা একটা বিশেষ জরুরি অধ্যায় হিসাবে অনিবার্য হয়ে আছে। আর এখানেই জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের অনন্যতা এবং সার্থকতা।
তথ্য-ঋণ কৃতজ্ঞতাঃ
আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত শ্রী শংকরলাল ভট্টাচার্যের প্রতিবেদন
বাংলালাইভ ডট কমে প্রকাশিত শ্রী অভীক চট্টোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন
অর্ঘ্যদীপ চক্রবর্তীর পোস্ট
এবং আন্তর্জাল