শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

পুষ্পে পল্লবে শোভিত ও সুরভিত রবীন্দ্র-সাহিত্যে জুঁই ফুলের সৌরভ-সন্ধান

রবীন্দ্রনাথের গানে কোন কোন ফুল আছে এবং সর্বোপরি বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কী ভূমিকা তার চেয়ে বলা অনেক সহজ তাঁর গানে কোন কোন ফুল নেই। বাংলার পরিচিত ফুলগুলির মধ্যে গীতবিতানে নিম্নোক্ত ফুলগুলি অনুপস্থিত : ঘেঁটু, টগর, গাঁদা, ডালিয়া, গন্ধরাজ, শালুক, শাপলা। আরও কিছু ফুল থাকতে পারে, তবে আমি উদ্ভিদবিজ্ঞানী নই, বা পুষ্পবিশেষজ্ঞ নই, ফুল সম্বন্ধে অতি সীমিত জ্ঞান থেকে কথাটা বললাম। তবে লক্ষণীয় রবীন্দ্রনাথের গানে কোন বিদেশি ফুল আসে নি। কবি স্বয়ং যে সমস্ত ফুলের নামকরণ করেছেন, কবিতায় তাদের দেখা মিললেও গানে পাওয়া যায় তেমন একটিমাত্র নাম — “মধুমঞ্জরী”।

রবীন্দ্রনাথের গানে ফুলের রূপকল্পের ব্যবহার নিয়ে বহু গবেষণাপত্র লেখা হতে পারে। সেই জ্ঞান বা যোগ্যতা আমার নেই। আমি একটি নিতান্ত ঘরোয়া আলোচনায় একটি বিশেষ ফুল নিয়ে আমার মনের ভাবনা ভাগ করে নিতে চাই।

উদ্ভিদবিদ্যার অধ্যাপক ডঃ দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর রবীন্দ্রবিষয়ক গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের কোন কোন গানে কি কি ফুলের নাম ব্যবহৃত হয়েছে তার একটি সম্পূর্ণ তালিকা দিয়েছেন এবং সেইসঙ্গে সর্বসাধারণের বোধগম্য হয় এমনভাবে প্রত্যেকটি ফুল সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবেশন করেছেন। ফুলের বিষয়ভিত্তিক সব গান একত্রে পাওয়ার একটি ফুল নিয়ে আমার যা মনে হল সেটুকুই এখানে তুলে ধরছি। ফুলটি হল জুঁই বা যূথী। সকলের প্রতি অনুরোধ রইল যেটুকু আর যা যা সংযোজনের প্রয়োজন মনে হবে প্রত্যেকেই যেন তা করেন।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গীতবিশ্বে যূথীর উপস্থিতি সর্বাধিক নয়। যূথীর দেখা মেলে ২৮টি গানে। সর্বোচ্চ উপস্থিতি বকুলের : গানের সংখ্যা ৬৯। তারপরে পর্যায়ক্রমে আসে পদ্ম : ৬১ ; মালতী : ৩৮ ; শিউলি : ৩২ ; মাধবী : ৩১। তারপরে যূথীর স্থান।

(দেবীপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রসঙ্গীতে উদ্ভিদ ও ফুল, বাউলমন প্রকাশন, কলকাতা, ১৯৯৭, পৃ ১২৭)

প্রদত্ত পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ করে যূথী সম্বন্ধে আরও তিনটি তথ্য পাওয়া যায় — এখানে তা উল্লেখ করা যেতে পারে। প্রয়োগসংখ্যার বিচারে না হলেও, দুটি মানদণ্ড অনুসারে যূথীর স্থান অনন্য।

মালা : রবীন্দ্রনাথের গানে যত ফুলের মালার দেখা পাওয়া যায় তার মধ্যে যূথীমালার সংখ্যা সর্বাধিক। তেমন গানের সংখ্যা ৭। তারপর বকুলের স্থান : ৪টি গান। (লক্ষণীয় যে রজনীগন্ধা ও বেলফুলের মালার সঙ্গে আমরা অত্যন্ত পরিচিত, রবীন্দ্রনাথের কোন গানে তারা নেই, যদিও দুটি ফুলই গানে আছে)।

সৌরভ : যত গানে ফুলের সুবাস তার মধ্যেও যূথীর স্থান সর্বোচ্চ। যূথীর সৌরভ ৯টি গানে। এখানেও দ্বিতীয় স্থানে বকুল : গানের সংখ্যা ৮।

অনন্য না হলেও যূথীর আর একটি বিরল বৈশিষ্ট্যের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। একই গানে একই ফুলের দুবার উপস্থিতির দৃষ্টান্ত নিতান্ত বিরল। “পথিক পরাণ চল্” গানটিতে আস্থায়ীর শেষে আছে “বিকেলবেলার জুঁই”, তারপর আভোগের শুরুতে আবার “সন্ধ্যাযূথীর স্বপনময়ী ছায়া”।এমন দৃষ্টান্ত দেখা যায় শুধু বকুল এবং গোলাপের ক্ষেত্রে। “হৃদয় আমার নাচে রে” এবং “গোলাপফুল ফুটিয়ে আছে” গানদুটিতে যথাক্রমে গোলাপ ও বকুলফুলের নামের ব্যবহার দুবার।

এ তো গেল পরিসংখ্যানের কথা। এবার বিভিন্ন গানে যূথীর নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূমিকা পর্যালোচনা করা যাক।

যূথীর দেখা মেলে শ্রাবণসন্ধ্যায় ব্যাকুল প্রতীক্ষার নিভৃত ক্ষণে। অন্য সকলের মত কবি এই প্রতীক্ষার অবসান খোঁজেন না, তিনি চান এই প্রতীক্ষায় বিস্ময়মাধুর্য সঞ্চার করতে। সেই ভূমিকা পালন করে যূথীমালার মৃদু সুবাস :

আনো বিস্ময় মম নিভৃত প্রতীক্ষায় যূথীমালিকার মৃদু গন্ধে

আবার যূথীর তীব্র সুবাস-ভারাক্রান্ত অশান্ত বাতাস হয়ে ওঠে নিদারুন বিচ্ছেদশঙ্কাতুর হৃদয়ের উপমা :

যূথীগন্ধ অশান্ত সমীরে

ধায় উতলা উচ্ছ্বাসে,

তেমনি চিত্ত উদাসী রে

নিদারুণ বিচ্ছেদের নিশীথে।

এই সিক্ত যূথীর সৌরভে লীন বিদায়ক্ষণের না বলা বাণীটি :

বারেক তোমায় শুধাবারে চাই বিদায়কালে কী বল নাই,

সে কি রয়ে গেল গো সিক্ত যূথীর গন্ধবেদনে॥

সিক্ত যূথীমালার সৌরভ আত্মনিবেদনের ব্যাকুলতার অভিব্যক্তি হয়ে ওঠে ; সেই গভীরতা পূজার উপকরণের দীনতাকে ছাপিয়ে যায়।

পথ হতে আমি গাঁথিয়া এনেছি সিক্ত যূথীর মালা

সকরুণ-নিবেদনের- গন্ধ-ঢালা—

লজ্জা দিয়ো না তারে ।

“আমার কন্ঠ হতে গান কে নিল” গানটিতে কোন এক গোপনচারী কবির কন্ঠ থেকে গান হরণ করে নেয় — মেঘমেদুর শ্রাবণদিনে গানহারা সেই মুহূর্তগুলি শূন্যতা পূর্ণ করে দেয় ছলনাময়, অদৃশ্য সেই গানহরণকারীর পাখার স্পর্শ। সেই স্পর্শ বহন করে আনে যূথীর সৌরভ :

মেঘের দিনে শ্রাবণ মাসে যূথীবনের দীর্ঘশ্বাসে

আমার-প্রাণে সে দেয় পাখার ছায়া বুলায়ে॥

গানে শুধুমাত্র যূথীর সজল রূপটুকুই আমরা দেখি না, গ্রীষ্মের নীরস শুষ্কতার মধ্যে, তপ্ত হাওয়ার পটভূমিতেও দেখা তার দেখা মেলে। রবীন্দ্রনাথের গ্রীষ্মের গানে ফুলের রূপকল্পের ব্যবহার নিতান্ত বিরল ; নির্দিষ্ট কোন ফুলের নাম এসেছে মাত্র দুটি গানে। এই পর্যায়ের ষোলটি গানের মধ্যে একটি গানে আছে বকুল ও চাঁপা (বৈশাখের ঐ ভোরের হাওয়ায়) , আর একটি গানে বনযূথী ও চাঁপা(মধ্যদিনের বিজন বাতায়নে)। শুধুমাত্র গ্রীষ্মের পটভূমিতে যূথীর এই বিরল উপস্থিতিই দৃষ্টি আকর্ষণ করে না; শেষোক্ত গ্রীষ্মসঙ্গীতটিতে তার ভূমিকাও অনন্য।

কৈশোরে যে সলাজ কানাকানি খুঁজেছিল প্রথম প্রেমের বাণী

আজ কেন তাই তপ্ত হাওয়ায় হাওয়ায় মর্মরিছে গহন বনে বনে॥

যে নৈরাশা গভীর অশ্রুজলে ডুবেছিল বিস্মরণের তলে

আজ কেন সেই বনযূথীর বাসে উচ্ছ্বসিল মধুর নিশ্বাসে,

এই গানে গ্রীষ্মের তপ্ত বাতাস কিশোরপ্রেমের স্মৃতি বহন করে আনছে। কিন্তু গ্রীষ্মঋতু, তপ্ত বাতাস কোনভাবেই প্রেমের স্বপ্নমায়াজালরচনার অনুকূল নয়। আমাদের এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশে প্রেমের কাব্যে গ্রীষ্মঋতু ব্রাত্য । গ্রীষ্মের তপ্ত বাতাসের কোন স্মৃতি-উদ্দীপক ভূমিকাও অন্যত্র দেখা যায় না। তাপসরূপী বৈশাখের অভিবন্দনাগানে (এসো এসো এসো হে বৈশাখ) কবি তার স্মৃতিনাশক রূপটি উন্মোচন করেছেন। “যাক পুরাতন স্মৃতি” — অনুঘটক এখানে তপ্ত হাওয়া — যাকে কবি “তাপসনিশ্বাসবায়”রূপে অভিহিত করেছেন। কিন্তু পূর্বোক্ত গানটিতে বনযূথীর সুবাস শুষ্ক তপ্ত বাতাসেও স্বপ্নমাধুরী সঞ্চার করে, তারই প্রভাবে তপ্ত বাতাস স্মৃতিবাহী হয়ে ওঠে; যূথীর মোহিনীমায়ায় গ্রীষ্ম হয়ে ওঠে প্রেমের স্মৃতিচারণার পটভূমি।

যূথীর ভূমিকা শুধুমাত্র তপ্ত হাওয়ার অপ্রত্যাশিত রূপান্তরসাধনেই নয়। এই গানে যে স্মৃতির অনুষঙ্গ যূথীর সৌরভে সুরভিত বাতাসের সঙ্গে বিজড়িত, তারও স্বাতন্ত্র্য সমতুল গানগুলির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত তুলনামূলক পর্যালোচনাতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রেমের পটভূমি চিরাচরিতভাবে বর্ষা বা বসন্ত। হারানো অতীতে কল্পপ্রত্যাবর্তনের দিশারি বহু গানেই বর্ষার সজল বাতাস। বর্ষার এমন গানেও যূথীর উপস্থিতি দেখা যায়।

এই শ্রাবণ-বেলা বাদল-ঝরা যূথীবনের গন্ধে ভরা।।

কোন্ ভোলা দিনের বিরহিণী, যেন তারে চিনি চিনি—

ঘন বনের কোণে কোণে ফেরে ছায়ার-ঘোমটা-পরা।।

এই গানে যূথীর সুবাস বহন করে আনে “ভোলা দিনের” স্মৃতি — এই কল্পপ্রত্যাবর্তন জীবনের এক অনির্দিষ্ট অতীতে। বর্ষার গানে এবং অন্য পর্যায়েরও যে সব গানে অতীতচারিতা আছে সেখানে পুনর্নিমিত অতীত সবক্ষেত্রেই জীবনের কোন অনির্দিষ্ট অধ্যায়। কিন্তু পূর্বোল্লিখিত গ্রীষ্মের গানটিতে স্মৃতিচারণ করা হয়েছে জীবনের সুনির্দিষ্ট একটি পর্বের — কৈশোরের। প্রেমের স্মৃতিচারণ রবীন্দ্রনাথের একাধিক গানে রয়েছে, কিন্তু সুনির্দিষ্টভাবে কৈশোরের প্রেমের বা জীবনের সুনির্দিষ্ট কোন পর্বের স্মৃতিচারণ শুধুমাত্র এই একটি গানেই। অনুঘটক এখানেও যূথীর সুবাস।

শুধুমাত্র স্বপ্নময় ভাবাবেশ রচনাই নয়, যূথীসুবাস উদ্দাম প্রাণতরঙ্গও জাগিয়ে তুলতে পারে। চিত্রাঙ্গদার আত্ম-উদ্দীপনার গানে তাই তার উপস্থিতি। প্রেমের উন্মেষমুহূর্তে নিজেকে উদ্দীপ্ত করতে চিত্রাঙ্গদা আপন জীবনে ঝড়কে আবাহন করে। তার ভাবনায় প্রবল ঝড় সমস্ত জীর্ণ, পুরাতনকে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পর বনযূথীর সুবাস উচ্ছ্বসিত হয়ে অজানার দিকে ধাবিত হয়।

যূথীবনের গন্ধবাণী ছুটল নিরুদ্দেশে–

পরান আমার জাগল বুঝি মরণ-অন্তরালে॥

এছাড়া সাজসজ্জার উপকরণরূপে যূথীর ব্যবহারের কথা উল্লেখ করা যেতে। এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। আভরণরূপে যূথীমালার উপস্থিতি দেখা যায় দুটি গানে : “হে নিরুপমা” ( …তব কুঞ্চিত কেশে যূথীর মালা) এবং “এসো নীপবনে” (যূথীমালা গলে)। একাধিক গানে এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য ফুলের সঙ্গে জুঁইফুল চয়ন করা হয়। যূথীর সঙ্গে প্রায়ই আসে জাতি — সম্ভবত ধ্বনিগত মিলের কারণে। যেমন : “ওহে সুন্দর” (এনেছি যূথী জাতি) “গহন কুসুম কুঞ্জমাঝে” ( বকুল, যূথী, জাতি রে) “সজনি সজনি” (গাঁথ যূথী, গাঁথ জাতি, গাঁথ বকুলমালিকা)। শুধু জাতি নয়, সাজসজ্জার জন্যযূথীর সঙ্গে থাকে বকুলও। “মায়ার খেলা”তে প্রবেশ করামাত্র প্রমদা সখীদের কাছে প্রথমে চায় বকুলফুলের মালা, তারপর কেশবিন্যাসের জন্য জুঁই।

গানে যূথীর ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করাটাই উদ্দেশ্য ছিল। কিন্তু যে কবিতার উদ্ধৃতিকে শিরোনাম করে শুরু করেছিলাম, ত“পূরবী” কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত “চিঠি” নামাঙ্কিত সেই কবিতাটির উল্লেখ না করে পারলাম না। কবি বুয়ানোস এয়ারিসে থাকাকালীন দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উদ্দেশে রচিত সুদীর্ঘ এই কবিতার সবটুকু জুড়ে আছে যূথী।

সুদূর প্রবাসে অকস্মাৎ এক আবেশঘন মুহূর্তে সে এসে হানা দেয়।

দূর প্রবাসে সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরে এনু,

হঠাৎ যেন বাজল কোথায় ফুলের বুকের বেণু।

আঁতি-পাতি খুঁজে শেষে বুঝি ব্যাপারখানা,

বাগানে সেই জুঁই ফুটেছে চিরদিনের জানা।

গন্ধটি তার পুরোপুরি বাংলাদেশের বাণী,

একটুও তো দেয় না আভাস এই দেশী ইস্পানি।

কবিতার প্রথমার্ধে স্মৃতিমেদুর সেই সুরভি কবির সৌন্দর্যপিয়াসী চেতনাতেই মায়াজাল রচনা করে। কবিতার দ্বিতীয়ার্ধে জুঁইকে দেখা ভিন্নতর ভূমিকায়। জুঁইফুল তখন তার চিরাচরিত নান্দনিক আবেদন নিয়ে আসে না, এই ফুল কবির বাস্তব নাগরিকচেতনাকে, আদর্শবোধকে উদ্দীপ্ত করে তোলে। তাঁর সামাজিক রাজনৈতিক ভাবনায় জুঁই আসে আবহমানের প্রতিভূ হয়ে; সেই শাশ্বত সত্যের উপলব্ধি কবিকে সমস্ত অবিচার, সমস্ত অবক্ষয়, সমস্ত নিপীড়নকে শুধুই সাময়িক বলে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে আশাবাদী করে তোলে।

টুটল কত বিজয়-তোরণ, লুটল প্রাসাদ-চুড়ো,

কত রাজার কত গারদ ধুলোয় হল গুঁড়ো।

আলিপুরের জেলখানাও মিলিয়ে যাবে যবে

তখনো এই বিশ্বদুলাল ফুলের সবুর সবে।

রঙিন-কুর্তি সঙিন-মুর্তি, রইবে না কিচ্ছুই,

তখনো এই বনের কোণে ফুটবে লাজুক জুঁই।

চিরকালের জুঁই কবিকে চরম সামাজিক রাজনৈতিক অন্যায়, অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে আত্মোৎসর্গে উদ্বুদ্ধ করে। স্বপ্নমায়াবেশভরা যূথী তখন হয়ে ওঠে আমরণ সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। তাইতো মেশিনগানের সামনে দাঁড়িয়েও কবি যূথীর গানই গাইতে চান।

পালোয়ানের চেলারা সব যেদিন ওঠে খেপে,

ফোঁসে সর্প হিংসাদর্প সকল পৃথ্বী ব্যেপে,

বীভৎস তার ক্ষুধার জ্বালায় জাগে দানব ভায়া

গর্জি বলে ‘আমিই সত্য — দেবতা মিথ্যা মায়া’,

সেদিন যেন কৃপা আমায় করেন ভগবান—

মেশিন-গানের সম্মুখে গাই জুঁই ফুলের এই গান।

কবিতার শেষার্ধে জুঁই আসে জীবনের পরিব্যাপ্তি নিয়ে — প্রথমে বিরহব্যথার অভিব্যক্তি হয়ে,

বিরহব্যথার মতো এলি প্রাণে কোথা হতে তুই

ও আমার জুঁই!

তারপর মিলনসুখের অভিব্যক্তি হয়ে

মিলনসুখের মতো কোথা হতে এসেছিস তুই

ও আমার জুঁই!

এবং সবশেষে অসীমের দীর্ঘশ্বাস হয়ে

অসীম কালের যেন দীর্ঘশ্বাস বহেছিস তুই

ও আমার জুঁই!

………..

তোর মাঝে কেঁদে বাজে চিরপ্রত্যাশার কোন্ বাঁশি

“আমি ভালোবাসি।’

*************

সুধী পাঠকবর্গের পক্ষ থেকে সংযোজন ও সংশোধনের অপেক্ষায় রইলাম।

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Tapan Kumar chatterjee
Tapan Kumar chatterjee
2 months ago

অপূর্ব বিশ্লেষন। ” মেশিন গানের সম্মুখে গাই জুঁই ফুলের এই গান “। আহা আহা,অপূর্ব।