শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

‘রাজা’ ও ‘রক্তকরবী’ – আলোকাভিসারী মানুষের মুক্তির অভিন্ন তপস্যা

সত্য সরল। তবুও সত্য জটিল। সত্য জটিল কারণ তা বিরোধ এবং আপাত বৈপরীত্যের সমন্বয়। প্রায়ই সত্যের সমন্বিত সত্তাটির বদলে অসম্পূর্ণ বোধ আর চেষ্টিত নির্মাণের বিমূঢ় অভিপ্রায়ে সত্যের অনায়াস ও সম্পূর্ণ রূপের বদলে আমাদের চেতনায় যা ধরা পড়ে, তা হলো সত্যের খন্ডিতরূপ। সমস্যা সৃষ্টি হয় তখন, যখন মানুষ এই খন্ডিত সত্যের আধারে ধরতে চায় সম্পূর্ণ জগতকে। যে তথ্য বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এক একটি তত্ত্ব, আদর্শ আর বদ্ধমূল ধারণা, প্রায়ই তাতে বিশেষ বীক্ষণকোণের প্রসঙ্গটি অনুল্লেখ থাকে। ফলে সত্যের স্বরূপটি যথেষ্ট বিষয়ভিত্তিক বা নৈর্ব্যক্তিক (Objective) না হয়ে হয়ে ওঠে বিষয়ীগত (Subjective)। তাই বাস্তবের পটভূমিতে সে-ধারণা বা আদর্শের সীমাবদ্ধতায় মানুষ হয়ে পড়ে বিচলিত ও বিভ্রান্ত; দ্বিধা আর দ্বন্দ্বে দোদুল্যমান। এই দ্বন্দ্বটি কখনও থাকে ব্যক্তি মানুষের চেতনায়; কখনও তা হয়ে ওঠে সামাজিক, রাজনৈতিক বা প্রাতিষ্ঠানিক ।

অথচ এমনতো নয়, এই দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র আধুনিক জীবনেরই অনুষঙ্গ। আধুনিক মনের জটিল গতিপ্রকৃতি এবং আধুনিক মানুষের বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্বের বিকাশ এই দ্বন্দ্বজনিত সমস্যার মাত্রাগত পরিবর্তন এনেছে মাত্র। সমস্যাটি আসলে চিরকালীন। তা থেকে মানুষের উত্তরণের প্রচেষ্টাটিও নতুন কিছু নয়। শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক সমসাময়িক বৈশিষ্ট্যের মাঝেও চিরন্তন মানব-সমস্যার অনুরণনের সুরটি ধরতে পারেন। তিনি তাঁর বিষয়- শৃঙ্খলার (Discipline) শর্ত মেনে আলোকপাত করতে পারেন নিজের মতো করে।

নাটকও মানুষের জীবনেরই কথা বলে। সার্থক নাট্যকার সাময়িক সংকটের মধ্যে আবিষ্কার করেন কোন চিরন্তন সমস্যাকে। শিল্পের শর্ত মেনে তাঁকে রূপ দেন তাঁর নাটকে। এই দ্বন্দ্বই নাটকের মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে শেষপর্যন্ত । এই দ্বন্দ্ব কখনও ব্যক্তির চিন্তাভুবনের অন্তর্জগতে দেখা যায়। কখনও বা আবেগ ও প্রবৃত্তির ঘাত সংঘাতের মধ্য দিয়ে দেখা যায় ব্যক্তিতে-ব্যক্তিতে।

নাটকে দ্বন্দ্বজর্জর চরিত্রগুলির অন্তরের অন্বেষণ এক নির্বাধ প্রবহমানতায় গতি পায়। দ্বন্দ্বকম্পিত পদক্ষেপে মুখ্যচরিত্রের অভিজ্ঞতার ক্রমবিবর্তন কখনও নাটকের অগ্রগমনের সাথে সমার্থক হয়ে ওঠে। প্রজ্ঞার উদ্ভাসে মূলচরিত্রের অহংবোধের অবলুপ্তি ঘটে। সার্থক প্রকরণ-কৌশলে আর শৈল্পিক বয়ানে নাটকের মুখ্যচরিত্রের এই দ্বন্দ্বকে নাটকের মুলসুর হিসাবে উপস্থাপিত করেন নাট্যকার। শিল্পিত উত্তরণের মধ্যে দিয়ে নাটকটি হয়ে ওঠে সার্থক সৃজনশৈলির এক নন্দিত নমুনা।

কিন্তু সৃজন-সার্থকতাই শেষ কথা নয়। নাটকের সৃষ্টি জীবনেই। এই কারণে শুধুমাত্র নাটক হিসাবে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তাঁর প্রাসঙ্গিকতার পরিসমাপ্তি ঘটে না। পাঠসুখ, দৃষ্টিসম্ভোগ বা শ্রুতিসম্মোহনের ক্ষণসঞ্চারী ইন্দ্রিয়সুখের সীমানা ছাড়িয়ে এক মাননিক প্রজ্ঞায় আলোকিত হয় উঠবে পাঠক বা দর্শকের চিত্তবিশ্ব। সেটাই কাঙ্ক্ষিত। অসংজ্ঞাত এক সংবেদনঋদ্ধিতে আর বিসর্পিত অনুভবে মুখ্যচরিত্রের সঙ্গে পাঠকমনেরও এক নান্দনিক উত্তরণ ঘটে থাকে। মুখ্যচরিত্রের সঙ্গে পাঠক কখনো নিজেকে অভিন্ন মনে করেন। মুখ্যচরিত্রের খন্ড দর্শনকে পাঠক নিজেরই সীমাবদ্ধতা মনে করেন বোধিমথিত এক প্রজ্ঞায়। এক দ্বিমাত্রিক দ্যোতকতায় নাট্যকারের ব্যক্তিগত বোধের অন্তর্ভাষণ উল্লম্ব অবনমনে সর্বজনীন হয়ে মুখ্য চরিত্রের মাধ্যমে পাঠকের মনেও সঞ্চারিত হয়। মানুষের চিরকালীন এক জিজ্ঞাসা আলোকিত সমাধানে ভাস্বর হয়ে ওঠে।

মহৎ নাট্যকারের কাছে তাই কালের দাবী আরও কিছু। রবীন্দ্রনাথের মতো দার্শনিক নাট্যকারের কাছে তো বটেই। মানুষের চিরন্তন কোন সমস্যাকে আত্মোপলব্ধিতে জারিত করে আপন দার্শনিকতায় দ্বন্দ্ব-উত্তরণের সূত্রটির প্রতি ইঙ্গিত করতে পারতেন তিনি।

‘রাজা’ ও ‘রক্তকরবী’ রবীন্দ্রনাথের দুই সার্থক রূপক-সাংকেতিক নাটক। নাটকীয় মেজাজ, নাট্যভাষা, চরিত্রায়ণ ও বক্তব্যে পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। অথচ দুই নাটকের মধ্যেও কোথায় যেন রয়েছে অভিন্ন এক জীবনবোধের ঐক্যসূত্র। এই ভাবসাযুজ্যের স্বরূপ অনুসন্ধানই এই লেখার মুখ্য উপজীব্য।

প্রথমে আসা যাক নাটক দুটির মূলভাবের প্রসঙ্গে। খন্ডরূপ এবং রূপাতীত অরূপের দ্বন্দ্বই ‘রাজা’ নাটকের মূল বিষয়। রূপ ধারণার বস্তু; অরূপ ধ্যানের সামগ্রী। ভাবজগতের এই সূক্ষ্মসংঘাতকে নির্ভর করে, বিভিন্ন নাটকীয় সংঘাতের আবর্তে, পরস্পরবিরোধী ভাবানুভূতির নাটকীয় সংশ্লেষণে উপযুক্ত আবহ ও সঙ্গীতের সঙ্গতে নাটকটি হয়ে উঠেছে নাট্যগুণে গুণান্বিত। ‘রাজা’ নাটকের মুখ্য চরিত্র রানী সুদর্শনা রূপের মোহে নেশাগ্রস্ত। রাজাকে পেতে চেয়েছেন সীমায়িত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার প্রত্যক্ষতায়। দ্বন্দ্বের মূল উৎস সৌন্দর্যের স্বরূপ সম্পর্কে তাঁর খন্ডিত ও সংকীর্ণ চেতনা।

অন্যদিকে ‘রক্ত করবী’র প্রসঙ্গে বলা যায়, নিয়মের বৈচিত্র্যহীন অনুবর্তনে মানুষ আত্মবিস্মৃত হয় মাঝে মাঝে। নিজের চারদিকে গড়ে তোলে বন্ধন। বাহ্যিক অনুষঙ্গের অধিকারের তামসিকতায় জড়ত্ব আসে তার চেতনায় । খন্ডিত ও একদেশদর্শী মূল্যবোধের বিচারে নিজের চারদিকে সৃষ্টি করে সংকীর্ণ এক জগত। অথচ ভিতরে থেকে যায় অন্তর্লীন এক মুক্তির পিপাসা। এই ভাবগত দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে ‘রক্তকরবী’ নাটকটি আবর্তিত হয়েছে। সুতরাং দেখা গেল, আপাতদৃষ্টিতে ভিন্ন হলেও নাটকদুটিতে মূলদ্বন্দ্বের কারণ খন্ডিত, সীমায়িত এক অভিন্ন চেতনা; সৌন্দর্য ও সত্যের বিষয়ে।

এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ। দুই নাটকে কাহিনির অগ্রগমনের তুলনা। অর্থাৎ ‘রাজা’ নাটকে রানী এবং ‘রক্তকরবী’তে সর্বাধিক দ্বন্দ্বদীর্ণ চরিত্র রাজার আঘাতে আঘাতে, অন্তঃসংঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে জীবন সম্পর্কে অখন্ড এক নান্দনিক চেতনায় পৌঁছতে পারার কাহিনির প্রতিতুলনা ।

রানীর মনে রাজার লৌকিক সুন্দররূপ গড়ে উঠেছে একটু একটু করে, রাজার কথায়, তাঁর বীণার সুরে, উত্তরীয়ের গন্ধে! পক্ষান্তরে সুরঙ্গমা রাজাকে অনুভব করতে চান হৃদয়ের সুগভীর মাধুর্যে, মনের গহনে এক রসের তন্ময়তায়। তাই শুরু হয় ভাবগত এক দ্বন্দ্ব! দ্বন্দ্ব প্রত্যয়স্থির হৃদয়ের সঙ্গে ইন্দ্রিয়-সংবেদী অভিমানের! সৌন্দর্য পিপাসু রানী ‘চোখের উৎসবে’ রাজাকে ধরতে চেয়েছেন ‘বাতাসের ঘন আনন্দে’ আর ‘ক’ত আকাশের আবেগে’। কখনওবা ‘অনাঘ্রাত ফুলের গন্ধে’। রানীর অবিচলিত দিদৃক্ষায় যদি থেকে থাকে প্রেমের ইন্দ্রিয়-সংবেদনের বাস্তবতা, তাহলে ‘বসন্তে শুধু ফোটা ফুলের মেলা’ দেখতে চাওয়াতে থেকে যায় মানসিক পরিণতিতে একধরনের অভাববোধ। পরিণতিবোধের অভাব থেকে যাত্রা শুরু করে বিভিন্ন ঘাত-সংঘাতের স্তর বেয়ে, বহু অভিজ্ঞতাকে আত্মসাৎ করে, প্রত্যাশামদির মুহূর্তের অবসানে, আলো ও আঁধারের লীলাচাঞ্চল্যকে নির্মোহ ও তদ্‌গতভাবে গ্রহণ করতে শেখার মধ্যে দিয়ে হয়ে যায় রানী সুদর্শনার জন্মান্তর। ‘বহ্নিশয্যা মাড়িয়ে’ জাগতিক বিধানের অমোঘতাকে নিরাসক্তভাবে মেনে নিতে শেখার মাধ্যমে রানীর অরূপোপলব্ধি ঘটে; ঘটে চিত্তের অগ্নিশুদ্ধি আর উত্তরণ। এটাই নাটকের মুখ্য চরিত্রের বহুকথিত ডিসপ্লেসমেন্ট বা সরণ।

‘রক্তকরবী’তে নিষ্পেষিত মানবতা, সুপ্ত মানবতাকে জাগিয়ে দিতে যক্ষপুরীতে হঠাৎ হাজির হন ‘হঠাৎ আলোর ঝলকানি’ নন্দিনী। যান্ত্রিক জীবনের বৈচিত্র্যহীন অনুবর্তনে ক্লান্ত মানুষগুলোর মধ্যে জেগে ওঠে আলোর জন্য আর্তি। আলোর পিপাসা জাগে রাজার মধ্যেও। অথচ তাঁর গড়ে তোলা পৃথিবী, বস্তুতন্ত্র আর অভ্যস্ত সংস্কার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসতেও পারছেন না তিনি। শুরুতেই রাজচরিত্রে রয়েছে অন্তঃসংঘাত। নাটকের শেষে রাজার যে পরিবর্তন বা উত্তরণ তার সম্ভাবনার বীজ উপ্ত হয় নাটকের শুরুতেই। অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জর রাজা অসহায় আর্তনাদে নিজেকে তুলনা করেন মরুভূমির সঙ্গে। নন্দিনীর বিপ্রতীপে নিজের রিক্ততাকে উপলব্ধি করেন। অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তিনি বুঝতে পারেন ভিতরের মানবিক আকাঙ্ক্ষাগুলো ভিতরে ভিতরে ‘ব্যথিয়ে উঠছে’। আপন শক্তি নিজের অগোচরে নিজেকে কেমন করে পিষে ফেলে সে ব্যাপারেও সচেতন তিনি। অথচ ‘জাল’ ছিঁড়তেও পারছেন না। একদিকে সম্পদের আহরণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন, অপরদিকে ‘যে দ্বন্দ্বে বস্তুর বিপুল ভার হালকা হয়’ ‘বিশ্বের বাঁশীতে’ নাচের সে ‘ছন্দের আবিষ্কারে’ও রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছেন রাজা। একদিকে তিনি যান্ত্রিকতা আর জীবনহীনতার পূজারী। অপরদিকে প্রেম, সৌন্দর্য, মানবধর্ম আর সৃষ্টির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাইতো আক্ষেপ ”যে দান বিধাতার হাতের মুঠিতে ঢাকা, সেখানে তোমার চাঁপার কলির মতো আঙুল যতটুকু পৌঁছায়, আমার সমস্ত দেহের জোর তার কাছ দিয়ে যায় না।”

কিন্তু রাজার এই আক্ষেপে নেই দুর্বলের হাহুতাশ আর ক্রন্দন। বরং রয়েছে আত্মপ্রত্যয়ী ঘোষণা – “বিধাতার সেই মুঠো আমাকে খুলতেই হবে।’ নন্দিনীর কাছে দ্বাররুদ্ধ করে রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে আন্তরিক আর্তিতে প্রেমিকেরই ক্রন্দন, ‘সব দিয়ে তোমায় ধরতে চাই, ধরা দেবে কি নন্দিন’। নন্দিনীর অভাবে রাজার অন্তর্জগতে সৃষ্টি হয় নিজের বিরুদ্ধে নিজের প্রতিবাদ! নন্দিনী তা জাগিয়েছেন মাত্র। তাঁর অন্তস্থিত মানবস্বভাব নন্দিনীর প্রতি তাঁকে আকৃষ্ট করেছে। অন্যদিকে যন্ত্রজগতের মালিক যে রাজা তাঁর রয়েছে নন্দিনীর প্রতি ঈর্ষা আর বিকর্ষণ। নন্দিনীকে পেতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু তা দৃঢ়সংবদ্ধ বস্তু আরাধনার অভ্যাসলালিত সংস্কারের মধ্য দিয়ে!

এই দুইয়ের টানা পোড়েনে আর ভাঙ্গাগড়ায় মনোজগতের অন্তর্বিপ্লবে ঘটে জন্মান্তর। নন্দিনী অনুভব করেন রাজার শক্তি। সেই শক্তি তাঁকে আকৃষ্ট করে রাজার প্রতি। কিন্তু প্রেমে উদ্বেলিত করে না। তাই অন্তর্জ্বালায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে রাজা ঈর্ষান্বিত হন রঞ্জনের প্রতি। কিন্তু বলিষ্ঠ চরিত্রের রাজা সেই ঈর্ষায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে সীমায়িত আর আবদ্ধ হয়ে নিজেকে নিঃশেষ করে ফেলেন না। বরং ঈন্সিতকে পাওয়ার জন্য জীবনপণ অঙ্গীকার করেন। নিজেরই অজ্ঞাতে তাঁর ঈর্ষার শান্তায়ন (Sublimation) ঘটে যায় মুক্তির তপস্যায়। শুরু হয় সংগ্রাম। অর্ন্তবিপ্লবের প্রবল অভিঘাতে চেতনায় ঘটে পরিবর্তন। অন্তর্জগতের টিকে থাকা’ আর বেঁচে থাকার সংঘাতে অবসান ঘটে জড়ত্বের। যন্ত্রনামুক্তির প্রচণ্ডতম অভিব্যক্তিই তাই প্রকাশ পায় জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবার দৃশ্যে।

সুতরাং দেখা গেল দ্বন্দ্বের চরিত্র কিছুটা ভিন্ন হলেও উভয় নাটকের দ্বন্দ্বই মূলত ছাঁট দেওয়া সত্যের সঙ্গে সত্যের সামগ্রিক স্বরূপের। কিন্তু প্রশ্ন হলো নাটকের শেষে তা পাঠককে পৌঁছে দেয় দার্শনিক উপলব্ধির কোন স্তরে?

মানুষের নিজের চারদিকে প্রাচীর তোলার প্রবণতা রয়েছে। তেমনি রয়েছে মনের গহনে অন্তর্জাত মুক্তিলাভের আকঙ্ক্ষাও। নিজের তৈরি চিন্তাধারাকে সে নির্ভুল আর শাশ্বত মনে করে। প্রশ্নহীন এই অন্ধবিশ্বাস আর মূঢ়তা স্খলন আনে ব্যক্তিচরিত্রে। প্রতিষ্ঠানের চরিত্রেও। চিন্তা আর মননের জড়তায় আবদ্ধ হয় মানুষ। আবার চলিষ্ণু জীবনের অন্তহীন প্রবহমানতায় আর প্রাণের উত্তাপে নিজেই একসময় ভেঙে ফেলে বন্ধনের সেই প্রাচীর; নতুন সৃষ্টির প্রয়োজনে। শুরু হয় জীবন; নতুন করে। ‘রক্তকরবী’র বন্ধন ও মুক্তির, ধ্বংস ও সৃষ্টির আলো-আঁধারী লীলাচাঞ্চল্য এবং রাজা নাটকের খন্ডরূপের মধ্যে অরূপের উপলব্ধির এষণা যেন আলোকাভিসারী মানুষের অভিন্ন এক তপস্যা। উভয় নাটকই যেন দ্বন্দ্বজর্জর মানুষের নিজেকে ফিরে পাওয়ার অভিন্ন কাহিনি! ভাঙ্গাগড়ার মধ্যে দিয়ে সত্যের সামগ্রিক উপলব্ধিতে পৌঁছনোর বিবর্তনময় এক ইতিবৃত্ত।

গ্রন্থপঞ্জী:

১। রবীন্দ্র রচনাবলী (সুলভ), ৫ম ও ৮ম খণ্ড, বিশ্বভারতী, ১৪০২, কলিকাতা(মূলপাঠ)
২। আইয়ুব আবু সয়ীদ, ‘পান্থজনের সখা’, দে’জ পাবলিশিং, ১৯৯২, কলিকাতা

[চিত্র ঋণঃ আন্তর্জাল]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
2 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়
4 months ago

অত্যন্ত মননশীল প্রবন্ধ।

সুতপা কর গোস্বামী
সুতপা কর গোস্বামী
4 months ago

অনবদ্য লেখনী।