শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

মহাকবি কালিদাসকৃত মেঘদূতের বাংলা ভাবানুবাদ (পর্ব-৩)

পূর্বকথনঃ-

ধনপতি কুবের। কৈলাসে তার আবাস। নগরীর নাম অলকা। পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের ধাম। সুউচ্চ প্রাসাদ ভবন নগরীর আকাশকে স্পর্শ করছে। ভবনের ছাদ শিখীর নৃত্যে ছন্দিত। মধুপ গুঞ্জরিত শতশতদলে সরোবরগুলি সদা আন্দোলিত। রাত্রি নিত্য জ্যোৎস্নাজড়িত। আনন্দাশ্রুছাড়া নয়নসলিল সেখানে বিরল। আর বয়স তো যৌবনেই আবদ্ধ। কুবেরের কর্মসচিব যক্ষ। তরুণবয়স সদ্যপরিণীত। সুন্দরী বধূটি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা, তন্বী, শিখরীদশনা,পাকা বিম্বফলের মতো অধর। হরিণনয়না, ক্ষীণকটি, নিম্ননাভি। যক্ষের কাজে ঘটে প্রমাদ। মন চলে যায় নিজ কক্ষের বাতায়নপথে। তার কর্মশৈথিল্যে ক্রুদ্ধ কুবের ধৈর্য হারালেন। নির্বাসন দিলেন অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে ।একাকী যক্ষ চলে এলেন সেই আশ্রমে। ক্ষীণদেহ, প্রিয়াবিযুক্ত। কণকবলয় হাত থেকে যাচ্ছে খুলে। ঘনিয়ে এল নীল নব মেঘমালা নিয়ে আষাঢ় মাস।

মেঘদূত

দিবসগণনে তৎপরা মেঘ, হেরিবে আমার প্রিয়ারে
অবিহতগতি অচিরেই তুমি দেখিবে ভ্রাতৃজায়ারে।
রমণীহৃদয় কুসুমকুমার সুকুমার অতিশয়
বিচ্ছেদ কালে আশাপাশ দিয়ে বাঁধিয়া রাখিতে হয়।
শুনিয়া তোমার গুরুগম্ভীর স্বর
মানসের পথে উড়ে যেতে তৎপর
কৈলাসগামী হংসের সারি লয়ে কিশলয়দল ।
অলকার পথ সুখসঙ্গের স্বাদে
যাত্রা তোমার মধুময় হবে কলহংসের নাদে।
রঘুকুলপতি রামচন্দ্রের চরণচিহ্নধন্য
এই পর্বতপ্রিয়সখা তব আশ্লেষে লভ পুণ্য
প্রতি বরষাতে তব সাথে তার মিলনের আশ্বাস
ঘুচাইয়া দেয় বিরহজনিত তপ্ত দীর্ঘশ্বাস।
তোমার যাত্রাপথের ঠিকানা আগে শোনো মোর মুখে
শ্রবণলোভন সন্দেশ মম শুনো তারপরে সুখে
পথশ্রমেতে ক্লান্ত যখন হবে
গিরিচূড়াপরে বসি বিশ্রাম লবে।
ক্ষীণতনু হলে কোরো জলধারা পান
স্রোতস্বিনীরা জলধারাদানে রাখিবে তোমার মান।
উড়ায়ে নিল কি পর্বতচূড়া পবনের দ্রুতগতি?
গগনবিহারী সিদ্ধরমণী উৎসুক আঁখি অতি,
মুগ্ধহৃদয়ে চাহিবে তোমার প্রতি,
সুচির সময় থেকো না গো তুমি এই বেতসের বনে,
ত্যাজি এই স্থান উত্তরগামী চলে এস ত্বরা করি
দিকহস্তীর স্থূল হস্তের স্পর্শন পরিহরি।

[ক্রমশ]

[চিত্র-কৃতজ্ঞতাঃ somewhereinblog.net, আন্তর্জাল]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.