শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

প্রতিপক্ষের নাম রবীন্দ্রনাথ

Somen Dey

এত বড় একটা জীবন, এত রকমের কর্মকাণ্ড, দিকবিদিকে এত পরিব্যাপ্ত এবং বিচিত্র সৃজনের ভান্ডার, দেশে-বিদেশে এত বিবিধ ঘটনার মধ্যে তাঁর কিছু স্বেচ্ছায়, কিছু অনিচ্ছায় জড়িয়ে পড়া, কত রকম বিতর্কিত issue তে তাঁর নিজস্ব অভিমতকে দেশে বিদেশে নিঃসঙ্কোচে উপস্থাপিত করা, একটি ব্যাতিক্রমী প্রতিষ্ঠানকে শূন্য থেকে একক প্রচেষ্টায় একটু একটু করে গড়ে তোলা, বড় সড় একটা জমিদারী সামলানো, এত কিছু কর্মযজ্ঞের পরেও যদি তাঁর কোনো প্রতিপক্ষের উত্থান না ঘটে থাকত, তাহলে সেটা পরম আশ্চর্যের বিষয় হত। তাই স্বাভাবিকভাবেই তিনি তাঁর প্রতিপক্ষের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন বারবার। জীবিতকালে এবং তার পরেও। তবে সমালোচনা এক জিনিস, আর কুৎসা, অপমান, জোর করে অবমননের চেষ্টা আর এক জিনিস।‘আত্মঘাতী বাঙালি’ জাতি তো এমনিতেই কুৎসা রটনায় এক ধররনের পরম তৃপ্তি পেয়ে থাকে চিরকাল। অতএব বঙ্গদেশে খুঁজে খুঁজে তাঁর খুঁত ধরার জন্যে যে রীতিমত গবেষণা হবে, এটা তেমন আশ্চর্যের বিষয় নয়। রবীন্দ্রনাথের মত মানুষকেও কুরুচিকর ব্যাক্তিগত আক্রমণও সইতে হয়েছিল, এটা বোধহয় একমাত্র বাঙালির পক্ষেই সম্ভব ।

রবীন্দ্রনাথের বিরোধীপক্ষদের প্রধানত চারটি গোষ্ঠীতে ভাগ করা যায় । একদল ছিলেন যাঁরা ব্যাক্তিগতভাবে ঈর্ষা করতেন রবীন্দ্রনাথের প্রবল খ্যাতিকে। সেখান থেকেই চেষ্টা করতেন তাঁর খুঁত ধরার। দ্বিতীয় দলে ছিলেন কিছু পত্রিকার সম্পাদক, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করে তাঁদের পত্রিকাকে বিতর্কিত শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেন, যাতে পাঠকদের মধ্যে তাঁদের পত্রিকা নিয়ে কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয় । তৃতীয়ত, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের মতামত, বিশেষ করে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় মতবাদকে মানতে পারতেন না । যুক্তি দিয়ে তা খন্ডন করবার ক্ষমতা তাঁদের ছিল না বলেই অন্যভাবে আক্রমণ করতেন। এবং চতুর্থ দলে ছিলেন তাঁরা যাঁরা মনে করতেন তাঁদের সহিত্যে নতুন পথের অন্বেষণ করার পথে তিনি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন। তাই তাঁকে অস্বীকার করে এগিয়ে যেতে হবে। অবশ্য এ ছাড়া কিছু এমন মানুষ ছিলেন এবং এখনও আছেন, যাঁরা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির বিশালত্ব এবং কর্মক্ষেত্রের বহুমুখিতা সম্বন্ধে প্রায় কিছুই না জেনে তাঁর কতজন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক ঘটেছিল, তা নিয়ে জানতে অনেক বেশি উৎসুক। এঁদের কথা অবশ্য এই লেখায় ধর্তব্য নয়।
প্রথমে তাঁর বন্ধুদের দিয়েই শুরু করা যাক । একসময় খুব প্রিয় বন্ধু এবং একে অপরের গুণগ্রাহী ছিলেন দ্বিজেন্দ্রলাল এবং রবীন্দ্রনাথ । এমনও হয়েছে কোনো আড্ডা দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর নিজের গান স্বকন্ঠে গেয়েছেন আর রবীন্দ্রনাথ সে গানে ধুয়ো তুলেছেন। রবীন্দ্রনাথের আহ্বানে শিলাইদহে গিয়ে কৃষিবিদ দ্বিজেন্দ্রলাল চাষীদের বিজ্ঞানসম্মত চাষের খুঁটিনাটি শিখিয়ে এসেছেন।

ছবিঃ রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলাল

কিন্তু এক সময় তিনি হয়ে উঠলেন রবীন্দ্রনাথের লেখার কঠোর সমালোচক। কিন্তু তাঁর সমালোচনায় অনেকটাই ছিল ঈর্ষাপ্রসূত, যা রবীন্দ্রনাথের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া এবং তাঁর জনপ্রিয়তার নিম্নগামিতা থেকে উদ্ভব হয়েছিল সম্ভবত। তাই তিনি মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলে ‘সাহিত্য’ পত্রিকার একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথকে ‘অশ্লীলতম’ কবি বলে ফেললেন। রবীন্দ্রনাথের প্রেমের গানকে বলে বসলেন ‘লম্পট বা অভিসারিকার গান‘। ‘সোনার তরী’ কবিতা নিয়ে যখন বঙ্গদেশের সাহিত্য সমাজের মাথারা তাঁদের মুগ্ধতা প্রকাশ করছেন তখন তিনি বলে বসলেন, কাব্যগ্রন্থটি ‘অস্পষ্ট, অর্থশূন্য, স্ববিরোধিতায় পরিপুর্ণ‘। তবে দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর রুচিবোধের সীমা অতিক্রম করে বসলেন ‘আনন্দ বিদায়’ নামের একটি প্রহসন রচনা করে। এতে তিনি রবীন্দ্রনাথকে ব্যাক্তিগতভাবে আঘাত করার চেষ্টা করলেন। অবশ্য ততদিনে বঙ্গ দেশের সাহিত্যপ্রেমীরা দ্বিজেন্দ্রলালকে প্রবল রবীন্দ্রবিরোধী বলে চিনে ফেলেছেন। এবং এর পরিণতিতে তাঁর জনপ্রিয়তায় ঘাটতি দেখা দিয়েছিল।

এই প্রহসনটি স্টার থিয়েটারে যখন অভিনীত হচ্ছিল তখন প্রথম দৃশ্য অভিনীত হবার পরেই দর্শকরা ক্ষেপে গিয়ে অভিনয় বন্ধ করে দেয়। শুধু তাই নয় দর্শকরা নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলালের উপর এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে দ্বিজেন্দ্রলালকে স্টার থিয়েটারের পিছনের দরজা দিয়ে বার করে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে হয়েছিল। এই প্রহসনের একটি অংশ তুলে দিলে একটু বোঝা যাবে দ্বিজেন্দ্রলাল ঠিক কতটা ব্যাক্তি আক্রমণ করেছিলেন । এই প্রহসনে একটি ঋষির চরিত্র ছিল যা আসলে রবীন্দ্রনাথের ব্যাঙ্গাত্মক প্রতীক। সেই চরিত্রের মুখে সংলাপ ছিল –
‘আমি লিখছি যেসব কাব্য মানবজাতির জন্যে
নিজেই বুঝিনা অর্থ তাহার
বুঝবে কি আর অন্যে!
আমি যা লিখেছি এবং আজকাল যা লিখছি,
সে সব থেকে মাঝে মাঝে আমিই অনেক শিখছি।
এখন কর গৃহে গমন নিয়ে আমার কাব্য
আমি আমার তপোবনে এখন একটু ভাবব।‘

এত কিছুর পরেও রবীন্দ্রনাথ দ্বিজেন্দ্রনাথের পুত্র দিলীপকুমার রায়কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন। তাঁকে বলেছিলেন – ‘তোমার পিতাকে আমি শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা করতাম।‘
এই সময়ে বেশ কয়েকজন মহা উৎসাহে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনার প্যারডি রচনা করতে লাগলেন। তার মধ্যে কালীপ্রসন্ন কাব্যবিশারদ ‘মিঠে ও কড়া’ নামের একটি বইতে রবীন্দ্রনাথের কড়ি ও কোমলের প্যারডি লিখলেন। অমৃতলাল বসু ভানুসিংহের পদাবলীর প্যারডি রচনা করলেন।

‘সাহিত্য’ পত্রিকার ছবি

সুরেশচন্দ্র সমাজপতি সে সময় একজন উচ্চমানের সম্পাদক ছিলেন। বিদ্যাসাগর মশাইয়ের দৌহিত্র তিনি। বেশ কিছু পত্রিকার তিনি সম্পাদনা করেছেন। একসময় তাঁর ‘সাহিত্য’ নামের পত্রিকাটির অন্যতম প্রয়াস ছিল রবীন্দ্রনাথকে সমালোচনায় বিদ্ধ করা। এই পত্রিকায় অনেকেই রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করতেন। একবার তো সম্পাদক মশাই একটি প্রবন্ধে লিখেই বসলেন – ‘রবীন্দ্রবাবু বাঙ্গালা ভাষাকে কোন পাতালে লইয়া যাইতে লইয়া যাইতে চান, তাহা আমরা অনুমান করিতে পারিতেছিনা।’

(ছবিঃ ‘নারায়ণ’ পত্রিকা)

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ সে সময়ে শুধু বাংলায় নয় ভারতবর্ষের রাজনীতিতেও গুরুত্বপুর্ণ ব্যাক্তি । স্বয়ং সুভাষ চন্দ্র বোস তাঁর ভাবশিষ্য। তবে রাজনীতির বাইরেও তাঁর বাংলা সাহিত্য এবং সঙ্গীতে বেশ আগ্রহ ছিল। তিনি ‘নারায়ণ’ নামের একটি পত্রিকা সম্পাদনাও করতেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে অনেক ব্যাপারেই মতের মিল হতনা। এই নিয়ে তিনি রবীন্দ্রনাথকে যে খোঁচাগুলি মারতেন সেগুলি তাঁর মত ব্যাক্তির বৈদগ্ধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপুর্ণ ছিল না। যেমন জাতীয়তাবাদ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের মত তাঁর কাছে গ্রহণযোগ্য ছিল না। সেটা না থাকা কিছু আশ্চর্যের নয়। কিন্তু তিনি লিখলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আগে স্বদেশী ছিলেন, কিন্তু নাইটহুড পাওয়ার পর তিনি জাতীয়তাবাদী থেকে আন্তর্জাতিকতার ভক্ত হয়ে গেছেন।’ ইঙ্গিতটি খুব স্পষ্ট। অথচ যখন জালিয়ানওয়ালাবাগের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটবার পর যখন তিনি কলকাতায় প্রতিবাদী সভা ডাকতে চেয়েছিলেন, তখন দেশবন্ধু তাতে সাড়া দেননি। আমরা জানি অবশেষে রবীন্দ্রনাথ একলাই প্রতিবাদটি করেছিলেন নাইটহুড পরিত্যাগ করে।

রবীন্দ্রনাথ ‘ভারততীর্থ’ কবিতায় লিখেছিলেন, ‘পশ্চিম আজি খুলিয়াছে দ্বার/ সেথা হতে সবে আনে উপহার,/ দিবে আর নিবে মিলাবে মিলিবে যাবেনা ফিরে/ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।‘ চিত্তরঞ্জন দাশ এই কবিতা নিয়েও ব্যঙ্গোক্তি করে বলেন, আমরা যখন আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া পশ্চিমী প্রাতিষ্ঠানিকতা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাইছি, তখন একটি স্বর আমাদের সেই প্রয়াসে বাধা দিচ্ছে, সেই স্বর রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের।

ছবিঃ সজনীকান্ত ও শনিবারের চিঠি

যে পত্রিকাটি যাকে বলে হাত ধুয়ে রবীন্দ্রনাথের পিছনে পড়ে গিয়েছিল, সেটির নাম ‘শনিবারের চিঠি’। সজনীকান্ত দাশ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন প্রবল রবীন্দ্রভক্ত। তাঁর যথেষ্ঠ সাহিত্য-প্রতিভা থাকা সত্বেও তিনি যে শৈলীতে সব চেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন তা হল স্যাটায়ার। এবং তা করার জন্যে রবীন্দ্রনাথকে বেছে নেওয়াটা হয়ত এক রকমের যাকে বলে সেন্সেশানালিস্ট স্টাইলে কিছু করা। অবশ্য তিনি যে একজন প্রকৃত রবীন্দ্রভক্ত তা তাঁর সমালোচনার মধ্যেও বোঝা যেত । বিচিত্রা পত্রিকায় নটরাজ গীতিনাট্য প্রকাশ হবার পরে তা নিয়ে শনিবারের চিঠিতে কড়া সমালোচনা করে লিখলেন – ‘গীতি নাট্যটি ‘গতানুগতিকতার দোষে দুষ্ট’ । আরো এক পা এগিয়ে লিখলেন – ‘তিনি যেন শব্দ ও ছন্দ লইয়া খেলা করিয়াছেন মাত্র, শিল্প সৃষ্টি করেন নাই।‘

এর পরে ‘শনিবারের চিঠি’ পত্রিকা এক রবীন্দ্র বিরোধিতার একটি দীর্ঘ অধ্যায় শুরু হল। একসময় সম্পাদক হয়েছিলেন নীরদ চন্দ্র চৌধুরী । তিনিও এই পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত প্রিয়জন প্রমথ চৌধুরীকে প্রবল ভাবে আক্রমণ করে একটি প্রবন্ধ লেখেন । এতে রবীন্দ্রনাথ এতটাই বিরক্ত হয়ে যান যে, তাঁকে শনিবারে চিঠির যে কমপ্লিমেন্টারি কপি পাঠানো হত, তিনি তার উপর ‘রিফিউজড’ লিখে ফেরত পাঠিয়ে দেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ বিদেশে চলে যান কিছুদিনের জন্য। তিনি ফিরে এলে সজনীকান্ত ‘শ্রীচরণেষু’ নামের একটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের স্তুতি করে তাঁকে পাঠালেন । কিন্তু তাতে কাজ হল না। রবীন্দ্রনাথ পত্রিকাটির উপর এতটাই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন যে ‘বিচিত্রা’কে জানিয়ে দিলেন তাদের প্রেসে যদি শনিবারের চিঠি ছাপা হয় তাহলে তিনি আর বিচিত্রায় লেখা দেবেন না । এতে শনিবারের চিঠি বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হল । সজনীকান্ত রবি ঠাকুরের এই আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে মাত্রা ছাড়িয়ে ফেললেন। পরের মাসেই যে সজনীকান্ত শ্রাবণ মাসে লিখেছিলেন ‘শ্রীচরণেষু’ কবিতা, তাতে ছিল এই রকম পংক্তি –

“তুমি যে তুমিই আছ, সে তুমি সুবিরাট মহান-
আমরা মাটির জীব, ধুলিপঙ্কে নিয়ত শয়ান-
বিস্ময়ে চাহিয়া দেখি, কাছে গেলে করি অপমান
না জানিয়া কত সাধি বাদ !”

শ্রাবণ মাসে, যখন রবীন্দ্রনাথ বিচিত্রাকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন, তখন সেই সজ্নীকান্ত লিখলেন ‘হেঁয়ালি’ নামেরএকটি ব্যঙ্গ কবিতা লিখলেন যাতে রীতিমত কুরুচিকরভাবে আক্রমণ করলেন রবীন্দ্রনাথকে। এই কবিতার একজায়গায় লিখলেন –

“ঘুন ধরল পাকা বাঁশে ফাটল পাষান দেয়ালে
কাব্য হঠাৎ গেল ঘুচে
পছিম কাঁধে চাপল পূবের
পূবের ঋষি হলিয়ুডে
মাতেন মনের খেয়ালে,
নয়া-বাহন নাড়ুগোপাল
ভূমানন্দ নেহালে।”

এর পরে যখন রবীন্দ্রনাথের সত্তর বছর বয়সে জন্মদিন সাড়ম্বরে চারিদিকে পালিত হচ্ছিল, তখন শনিবারের চিঠিও একটি জয়ন্তী সংখ্যা প্রকাশ করলেন । তাতে রবীন্দ্রনাথকে সম্মান জানানোর চেয়ে বিদ্রুপে বিদ্ধ করাই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল। অনেকেই এই পত্রিকায় ছদ্মনামে লিখতেন। তাঁরা কেউ ‘জন গন অধিনায়ক’ কে প্যারডি করে লিখলেন – ‘ঘন ঘন ধনমপি নায়ক জয় হে জয়ন্তীভাগ্য বিধাতা।‘

কেউ রবীন্দ্রনাথের গান ‘শ্রাবণঘন গহন মোহে গোপন তব চরণ ফেলি’ উল্লেখ করে ব্যঙ্গ করে লিখলেন – ‘চরণ কী করিয়া গোপন হয় বুঝিতে পারিলাম না । বক জাতীয় কোনো কোনো পক্ষী একটি চরণ গোপন করিয়া থাকে।‘ এ ছাড়া সজনীকান্ত নিজে লিখলেন – এই জন্মোৎসবে আমাদের প্রার্থনা এই যে, তোমার দৃষ্টি আজি উর্দ্ধলোকের আকাশ-স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়া নিম্নলোকের এই মাটির স্বর্গে নিবদ্ধ হোক, ক্রোধের আলোকে অসূয়ার ভঙ্গীতে নয়, প্রীতির সুষমায়, অনুভূতির গভীর বিস্ময়ে।‘
এর পরের সংখ্যাগুলিতেও শনি বারের চিঠি নানা ভাবে রবীন্দ্র বিরোধিতা চালিয়ে যেতে লাগল। মোহিতলাল মজুমদারের মত কবিরা সুকৌশলে এই কাজ করে যেতে লাগলেন । মোহিতলাল একবার তো লিখে ফেললেন – ‘বলাকার পর রবীন্দ্রনাথ কবিতা লিখিয়াছেন এ কথা যে বলে সে যদি পণ্ডিত তবে মুর্খ কে?’

ছবিঃ মোহিত লাল মজুমদার

এই পর্বে বেশির ভাগ সময়েই রবীন্দ্রনাথ নির্বিকার থেকেছেন । কিন্তু সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এর পরেও কিন্তু সজনীকান্ত ক্ষমা পেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের। অবশ্য সেটা সম্ভব হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের স্নেহভাজন হেমন্তবালা দেবীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় । সেই সঙ্গে সজনীকান্তের স্ত্রী সুধারানী দেবীরও কিছুটা হাত ছিল । হেমন্তবালা সজনীকান্তের প্রতিবেশী ছিলেন , এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে সজনীকান্তের পরিবারের একটি মধুর সখ্য জন্মেছিল। কী করে অবশেষে গুরু শিষ্যের পুনর্মিলন হয়েছিল সে এক আশ্চর্য কাহিনি। সে কাহিনিতে গেলে মূল কাহিনি থেকে আমরা সরে যাব। তাই পরে কখনো আলাদা বলা যাবে।
তিরিশের দশকে রবীন্দ্রনাথ যখন প্রবীণ হয়েছেন তখন যে সব কবিরা তাদের প্রতিভা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে নতুন কিছু সৃষ্টি করার স্বপ্ন নিয়ে এসে পড়ছেন তাঁদের মধ্যে একদল রবীন্দ্রনাথের অনুগামী হয়ে উঠতে চাইছেন। অন্য আর এক দল ভিন্ন পথ নিতে চাইছেন। সে সময় যাঁরা রবীন্দ্র-অনুসারী কবি ছিলেন তাঁরা হলেন – কালিদাস রায়, কুমুদরঞ্জন মল্লিক, যতীন্দ্রনাথ বাগচী, যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় ইত্যাদি। আর যাঁরা অন্য ধারাতে লিখতে চাইলেন তাঁরা হলেন অমিয় চক্রবর্তী, সুধীন্দ্র নাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, জীবনানন্দ দাশ। দ্বিতীয় ধারা কবিদের অনেকে আধুনিক কবি বলতে লাগলেন। এঁরা অনেকেই প্রকাশ্যে না হলেও আড়ালে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করতে লাগলেন। এই রকম সময়ে জন্ম হল কল্লোল গোষ্ঠীর। এই গোষ্ঠীর অন্যতম কবি অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত অবশ্য তাঁর কবিতাতেই যুদ্ধ ঘোষনা করলেন –

“যদি পাই দীর্ঘ আয়ু, হাতে যদি থাকে এ লেখনী
কারেও ডরিনা কভু, সুকঠোর হউক সংসার
বন্ধুর বিচ্ছেদ তুচ্ছ, তুচ্ছতর বন্ধুর সরণী ।
পশ্চাতে শত্রুরা শর অগণন হানুক ধারালো
সম্মুখে থাকুন বসে পথ রুধি রবীন্দ্র ঠাকুর, …”

নবীন কবির এই স্পর্ধা নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টি এড়ায় নি। হয়ত কিছুটা অভিমানও হয়েছিল। কিছুদিন পরে তিনি একটি কবিতায় নির্মোহ কন্ঠে বললেন –

“ফিরে ফিরে মোর মাঝে ক্ষয়ে ক্ষয়ে হবিরে অক্ষয়
তোর মাটি দিয়ে শিল্পী বিরচিবে নূতন প্রতিমা”

অন্য কেউ নয়, রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাসের নায়ক অমিত রায়কে দিয়েই বলিয়ে দিলেন –

“রবি ঠাকুরের বিরুদ্ধে সব চেয়ে বড় নালিশ এই যে, বুড়ো ওয়র্ডসওয়ার্থের নকল করে ভদ্রলোক অন্যায় রকম ভাবে বেঁচে আছে। যম বাতি নিভিয়ে দেবার জন্যে ফরাস পাঠায়, তবু লোকটা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েও চৌকির হাতল আঁকড়িয়ে থাকে। ও যদি মানে মানে নিজেই না সরে পড়ে, আমাদের কর্তব্য ওর সভা ছেড়ে দল বেঁধে উঠে আসা।”

জানিনা এর মধ্যে দিয়ে তিনি অচিন্ত্যকুমারদের কোনো বার্তা দিতে চেয়েছিলেন কিনা। তবে এই কল্লোল গোষ্ঠীর অনেকেই কিন্তু মুখে যতটা রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতা করতেন, আসলে ততটা বিরোধী ছিলেন না। ঠাট্টা করে ওদের সম্মন্ধে এই রকম কথা চালু ছিল যে সারাদিন ধরে আড্ডায় রবীন্দ্রনাথের মুন্ডপাত করে রাত্রে বাড়ি ফিরে এসে রবীন্দ্রনাথের কবিতা মুখস্ত করতেন। এদের মধ্যে অন্তত বুদ্ধদেব বসু এবং প্রেমেন্দ্র মিত্র তো কিছুদিন পরেই প্রবল ভাবে রবীন্দ্র-ভক্ত হয়ে পড়েন। তবে জীবনানন্দের কথা আলাদা। তিনি রবীন্দ্র-বলয় থেকে সম্পুর্ন ভাবে বেরিয়ে এসে কবিতায় অন্য এক ভাষা নিয়ে এলেন। সরাসরি রবীন্দ্রনাথের নিন্দা করেন নি। বরং রবীন্দ্রনাথকে বন্দনা করে বেশ কয়েকটি কবিতা লিখেছিলেন। কিন্তু জীবনানন্দ তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরাপালক’ একটি চিঠিসহ রবীন্দ্রনাথকে পাঠিয়ে ছিলেন। বইটি পড়ে রবীন্দ্রনাথ তেমন উৎসাহব্যাঞ্জক কোনো মন্তব্য করেননি। বরং ভাষা নিয়ে জবরদস্তি করা জন্যে তাঁর উত্তরের চিঠিতে মৃদু তিরস্কার ছিল। কল্লোলের অন্য কবিদের মত একদিকে রবীন্দ্র প্রসাদ পাওয়ার চেষ্টা করা অন্য দিকে রবীন্দ্র বিরোধিতা করা – এর কোনোটাই করেন নি । তিনি এর জবাবে রবীন্দ্রনাথকে একটি চিঠি লেখেন। সে চিঠিতে রবীন্দ্রনাথকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি জানিয়ে যা লিখেছিলেন, তাকে রীতিমত ‘জ্ঞান দেওয়া’ বলা যেতে পারে. আবার তাঁর স্বাভিমানের দ্বীপ্ত ঘোষণাও বলা যেতে পারে।

রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর অবশ্য এই প্রকাশ্যে নিন্দা, কুৎসা, সমালোচনার ধারাটি স্তিমিত হয়ে যেতে শুরু করে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের শতবার্ষিকীতে দেশ জুড়ে এক ধরণের রবীন্দ্র-পূজার ঢেউ লাগে । কিছুটা রবীন্দ্রনাথকে নতুন ভাবে আবিষ্কারেরও চেষ্টা করার একটা ঝোঁক দেখা যায় । বিশেষত রবীন্দ্রনাথের গান এলিট গোষ্টীর সীমিত পরিসর থেকে বৃহত্তর বাঙালি সমাজের কাছে পৌঁছে গেল।

নীরদ চন্দ্র চৌধুরী এক সময় ‘শনিবারের চিঠি’ সম্পাদনা করতেন। সে সময় সমসাময়িক সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে তিনি যে সব সমালোচনা করতেন, তাতে তাঁর ক্ষুরধার মেধার প্রকাশ পেত । নিজের সাহিত্যবোধ নিয়ে তাঁর এক ধরনের উন্নাসিকতা ছিল বলে তিনি নির্দ্বিধায় অনেক কিছুকেই কচুকাটা করতেন । এমন কি রবীন্দ্রনাথকেও বাদ দিতেন না । তিনি পরে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে একটি বই লেখেন যার নাম দেন ‘আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ’।

ছবিঃ ‘আত্মঘাতী রবীন্দ্রনাথ’ বইয়ের প্রচ্ছদ

এখানে তিনি রবীন্দ্রনাথকে তাঁর মতো করে মুল্যায়ন করেন, সমালোচনাও করেন। অবশ্য তাঁর মত অনেকের কাছেই গ্রহনীয় হয় না। এই বইয়ের ভূমিকায় তিনি যা লিখেছিলেন, তা অবশ্য উড়িয়ে দেবার মতো নয়। রবীন্দ্রনাথের নিন্দুক এবং স্তাবক এই দুই দলকেই তিনি আক্রমণ করেছিলেন।…

“তাঁহার (রবীন্দ্রনাথের) সম্বন্ধে সত্য আবিষ্কারের চেষ্টা আজ পর্যন্ত হয় নাই। যাহা হইয়াছে তাহা একপক্ষে হিন্দুর মূর্তিপূজার মত, অন্য পক্ষে মুসলমানের মূর্তি ভাঙার মত। জীবিতকালে তিনি যেন হিন্দু হইয়া মুসলমানের রাজত্ব বাস করিয়াছিলেন, অর্থাৎ প্রধানত আক্রমণেরই লক্ষ্য ছিলেন। এই অবস্থার জন্য তাঁহার ব্যক্তিত্ব, মতামত ও রচনা সম্বন্ধে যে সব কথা বলা ও লেখা হইয়াছিল তাহাকে মিথ্যা নিন্দা ভিন্ন আর কিছু বলা যাইতে পারে না। আবার এই বিদ্বেষপ্রসূত নিন্দার পরিমাণ, তীব্রতা ও ইতরতা এমনই হইয়াছিল যে উহার ভারে ও ধারে বেশীর ভাগ বাঙালির কাছেই তাঁহার আসল রূপ চাপা ও কাটা পড়িয়াছিল।
অবশ্য ইহাদের প্রতিপক্ষও যে ছিল না তাহা নয়, অর্থাৎ ভক্তও তাঁহার জুটিয়াছিল। ইহারা বিদ্বেষীদের তুলনায় সংখ্যায় অনেক কম হইলেও দলে নিতান্তই অল্পসংখ্যক ছিল না। তবে ইহাদের দ্বারাও রবীন্দ্রনাথের হিত হয় নাই। ইহারাও তাঁহার যে রূপ প্রচার করিয়াছিল তাহা অন্ধ স্তাবকের প্রশস্তি ভিন্ন কিছু নয়। এমন কি এই রবীন্দ্রভক্তি এমনই বাক্যভঙ্গি ও আচরণে প্রকাশ পাইত যে, উহাকে হাস্যাস্পদ করা নিন্দাকারীদের পক্ষে খুবই সহজ হইত। ফলে, রবীন্দ্রভক্তেরাও রবীন্দ্রবিদ্বেষীদের মতোই মিথ্যারই প্রচারক হইয়াছিল।”

“বর্তমানে অবশ্য অবস্থাটা উল্টা হইয়াছে, অর্থাৎ রবীন্দ্র নিন্দুকেরা লোপ না পাইলেও রবীন্দ্রভক্তেরাই প্রবল হইয়াছে। কিন্তু না ভক্তি না নিন্দা, কোনটাই উচ্চস্তরে উঠে নাই। এখনও রবীন্দ্রনাথের সত্যরূপ আত্মপ্রকাশ করিতে পারিতেছে না।”

১৯৬৭ সালে দেশ পত্রিকায় নীরদ চন্দ্র চৌধুরী একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন, যার নাম ছিল ‘দুই রবীন্দ্রনাথ’। এই লেখার প্রতিপাদ্য ছিল নোবেল প্রাইজ পাওয়ার আগের রবীন্দ্রনাথ আর তার পরের রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য রচনা এবং আচরণের মধ্যে বৈপরিত্যের বিশ্লেষণ। এটি করতে গিয়ে অনেক বিষয়েই রবীন্দ্রনাথের কঠোর সমালোচনা করেন। তাই নিয়ে বেশ আলোড়ন হয়।

ষাট-সত্তর দশকগুলিতে বাঙালির জীবন সামগ্রিকভাবে একটা বাঁক নেবার সময়। এর প্রভাব সাহিত্যে তো পড়েই ছিল। শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একদল কবিরা উঠে এলেন নতুন আঙ্গিক নিয়ে। ষাটের দশকে সুনীল গাঙ্গুলি একটি কবিতায় একটি পংক্তি লিখলেন – ‘তিন জোড়া লাথির ঘায়ে রবীন্দ্র রচনাবলী লুটোয় পাপোশে’। এখানেও সুনীলের হয়ত ছিল সেই অচিন্ত্যকুমারের সমস্যা। পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্রনাথ। সুনীল গাঙ্গুলির এবং তাঁর কৃত্তিবাসের দলবল এখানে থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করার চেষ্টা করতে লাগলেন। দেশ পত্রিকাতে একটি প্রবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নিয়ে দীর্ঘ প্রবন্ধ লেখেন। বেশির ভাগ উপন্যাসকে তিনি সমালোচক হসেবে পাস নম্বর দেন নি। অনেক পরে অবশ্য তাঁর অন্য উপলব্ধি হয়। ‘রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার এবং পুনরাবিষ্কার’ নামের একটি প্রবন্ধে লেখেন – ‘কোনো নবীন লেখক যদি সূচনাপর্বে রবীন্দ্রনাথকে অস্বীকার করে নিজস্ব ভাষা সন্ধানের চেষ্টা না করে, রবীন্দ্রনাথেই আপ্লূত হয়ে থাকে সে অতি মূর্খ। পরিণত বয়সেও যদি কোনো লেখক রবীন্দ্রনাথ থেকে দূরে সরে থাকে, তাকে জীবনযাপনের সঙ্গী করে না নেয়, তা হলে সে আরো বড় মূর্খ। ‘
নুতন কাল, নুতন সময় এসেছে। গানের বাইরে রবীন্দ্রনাথ ক্রমশ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন কিনা জানি না । কিন্তু তিনি যে তাঁর হিরন্ময় নীরবতা দিয়ে সব সমালোচকদের কালের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করে অনেক উর্দ্ধে উঠে যেতে পেরেছিলেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এই লেখাটি লিখতে লিখতে একটা গানের কয়েকটি পংক্তির কথা মনে পড়ে গেল । ১৯১৪ সালে জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বসে লিখেছিলেন।

“দাও না ছুটি, ধর ত্রুটি,
নিইনে কানে মন ভেসে যায় গানে।
আজ যে কুসুম ফোটার বেলা, আকাশে আজ রঙের মেলা
সকল দিকে আমায় টানে গানে গানে।”

দেশ কাল ছাড়িয়ে সকল দিকে গানে গানে যাঁকে টানতো, কতিপয় ত্রুটি-ধরা মানুষেরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁর ধরা ছোঁয়া পাননি কোনোদিন। কোনো লড়াই না করেই তিনি হারিয়ে দিয়েছেন তাঁর সকল প্রতিপক্ষদের।

ছবিঃ আন্তর্জাল

[লেখকের অন্য রচনা]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Purna Mukherjee
Purna Mukherjee
4 months ago

খুবই ভালো লাগল লেখাটি, বিশেষ করে উপসংহারটি বড়ই সুন্দর। নীরদ চৌধুরীর রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে মূল্যবান অভিমত উদ্ধৃত করার জন্য সোমেন বাবুকে অনেক ধন্যবাদ, কারণ চৌধুরী মহাশয় তাঁর নাক উঁচু ভাব ও তীব্র সমালোচনার জন্য বাঙালিদের মধ্যে নিন্দিত হলেও তাঁর আলোচ্য বক্তব্যের মধ্যে খুবই সারবত্তা আছে বলে মনে করি। লেখাটি পড়ে ” নিন্দুকের প্রতি ” নামে রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য কবিতার কথা মনে পড়ে গেল।