শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

মেঘদূত ভাবানুবাদ (পর্ব – ১০)

পূর্বকথনঃ–
ধনপতি কুবের। কৈলাসে তার আবাস। নগরীর নাম অলকা। পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের ধাম। সুউচ্চ প্রাসাদ ভবন নগরীর আকাশকে স্পর্শ করছে। ভবনের ছাদ শিখীর নৃত্যে ছন্দিত। মধুপ গুঞ্জরিত শতশতদলে সরোবরগুলি সদা আন্দোলিত। রাত্রি নিত্য জ্যোৎস্নাজড়িত। আনন্দাশ্রুছাড়া নয়নসলিল সেখানে বিরল। আর বয়স তো যৌবনেই আবদ্ধ। কুবেরের কর্মসচিব যক্ষ। তরুণবয়স সদ্যপরিণীত। সুন্দরী বধূটি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা, তন্বী, শিখরীদশনা,পাকা বিম্বফলের মতো অধর। হরিণনয়না, ক্ষীণকটি, নিম্ননাভি। যক্ষের কাজে ঘটে প্রমাদ। মন চলে যায় নিজ কক্ষের বাতায়নপথে। তার কর্মশৈথিল্যে ক্রুদ্ধ কুবের ধৈর্য হারালেন। নির্বাসন দিলেন অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে ।একাকী যক্ষ চলে এলেন সেই আশ্রমে। ক্ষীণদেহ, প্রিয়াবিযুক্ত। কণকবলয় হাত থেকে যাচ্ছে খুলে। ঘনিয়ে এল নীল নব মেঘমালা নিয়ে আষাঢ় মাস।

হিমালয়তটে যাহা কিছু আছে, মুগ্ধনয়ন যাতে,
অতিক্রমিয়া প্রবেশ করিও ক্রৌঞ্চরন্ধ্রপথে।
হেথা হতে শুরু উত্তরগামী হংসসারির পথ;
এই পথ ধরি চলেছিল কবে, ভৃগুপতি- যশোরথ।
বলির গর্ব খর্ব করিতে বিষ্ণুর পদসম,
দীর্ঘ, আয়ত, তীর্যক্ মেঘ সেই পথ অনুগম।

দশাননহাতে বিভাজিত সানু থেকো কৈলাশশিরে,
সুরযুবতীর দর্পণহেন রজতকান্তি ঘিরে,
শুভ্রকুন্দকুসুমধবল,পরিতঃ ব্যাপ্ত নীলাকাশ,
অযুতবর্ষ সঞ্চিত যেন দেবাদিদেবের অট্টহাস।

ভুজগবলয়রিক্তহস্ত মহাদেবহাতে রাখিয়া হাত
এই পর্বতে পার্বতী যদি করেন আদরে চরণপাত;
নিরুদ্ধবারি নিজেরে রচিও সোপানের মতো তাঁরি।
পর্বতপথে চলিবেন যবে মণিতট অভিসারী।

কণকপদ্ম প্রস্ফুট সরঃ সেবন করিয়া মানসজল,
নন্দিত কোরো ঐরাবতেরে মুখ আবরণ করি সৃজন।
কল্পতরুর রেশমকোমল নবকিশলয়ে তব পরশ,
আনিবে কাঁপন,উপভোগ কোরো পরাণ ভরিয়া তার হরষ।

অলকা নগরী মনোরমা অতি চিনিবে তাহারে জানি,
স্বেচ্ছাবিহারী নব জলধর! এইকথা মনে মানি।
চলচঞ্চলা, স্খলদঞ্চলা হিমবান্ ক্রোড়ে গঙ্গা,
প্রণয়ীর বুকে প্রণয়িণীসম বহিছে খর-তরঙ্গা।
রমণীর কালো কেশের মতন গ্রথিত তাহাতে মুক্তাজাল,
পুঞ্জিত মেঘ অলকারে ছায় যবে ফিরে আসে বর্ষাকাল।

(পূর্বমেঘ সমাপ্ত)

[পর্ব – ৯]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.