“অতঃপর পলায়ন সুষ্ঠু সমাধান,
পঞ্চানন নিয়ে যাক ধান, ধাইব না পিছে।”
ধরুন সন্ধ্যা বেশ ঘনিয়ে এসেছে। কর্ম ক্লান্ত দিন শেষে, সদ্য গা ধুয়ে আপনি বসেছেন সোফায়। আপনার ‘সচিব-সখা’ হাতে দিয়েছেন এক কাপ ক্লান্তি নাশিনী চা, বিস্কুট। সেই চায়ের চুমুক আপনাকে নিয়ে যাচ্ছে ঘুম ঘুম ‘বাতাসিয়া লুপে’, বিস্কুট ভাঙছে আড়মোড়ার মত। আপনার সঙ্গীত তন্ত্রে তখন বাজছেন নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত্রির দ্বিতীয় প্রহরের জন্যে আপনার সেরা বাছাই জয়জয়ন্তীতে এই মাত্র তিনি লাগালেন শুদ্ধ গান্ধার। আপনার মুখ থেকে কেয়াবাত বেরোতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই মনের ঈশান কোনে চমকালো এক জমকালো তর্ক। জয়জয়ন্তী কাফি ঠাটের না কি খাম্বাজ ঠাটের? দুই গান্ধার ও দুই নিষাদ লাগছে – তা হলে কাফি। কিন্তু অবরোহণের কোমল গান্ধার শুধু দুর্বল ভাবে ছুঁয়ে যাওয়া – তবে তো খাম্বাজই প্রবল হল।’ ধূম লেগে যায় হৃদ কমলে’। দুখিরামের জিজ্ঞাসা – মুগ্ধ হয়ে শুনবেন না কি দগ্ধ হবেন তর্কের অনলে?
চায়ের কাপ নামিয়ে খুললেন বোকা বাক্স। হাঁই মাই করে আপনার চেতনায় ঝাঁপিয়ে পড়লেন ‘সমবেত যুযুৎসব’। বিষয় যা খুশি হতে পারে। পুতিনের কামানো গাল থেকে পুঁজিবাদের ট্যাঁস দালাল। রসগোল্লার জি আই প্রাপ্তি কিম্বা দুর্নীতির অমৃত যাত্রী। খাটের নিচের টাকা বনাম তোমার আমার ট্যাঁক ফাঁকা। শিরা ফুলিয়ে চেঁচাচ্ছেন গণ্ডা দুয়েক জ্ঞানী মানুষ। ভারি সুদর্শন এক সঞ্চালক মিটি মিটি হাসছেন আর মাঝে মাঝেই নিভন্ত ধুনীতে ধুনো ঢেলে উসকে দিচ্ছেন আগুন। রক্ষে এই যে সাত / আট মিনিট পরেই বিজ্ঞাপনের বিরতি। সেখানে আবার তর্ক নেই শুধু মেনে নেওয়া। ভ্রু মধ্যে টঙ্কার দিয়ে সুন্দরী বলছেন পুরুষদের জন্যে এই অন্তর্বাস টিই সেরা – মেনে নিন। অমুক সাবান মেখে তমুক তারকা চির সুন্দরী – সেও মানতে হবে। এমন কি সংসার ত্যাগী বাবাজি বলছেন এই মাদুলি ধারণ মাত্র ধনাঢ্য হবেন আপনি – তাও মানছেন সংসারী। এই মোহের গেরো – চলবে মিনিট বারো, তারপর আবার তর্ক। দুখিরামের প্রশ্ন – তর্কের এই তেরো পার্বণ শেষ পর্যন্ত কোন বালুকা বেলায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? এত তর্ক কেন?
দ্বিজেন্দ্রনাথ বলতেন “শোন হে আজ তোমরা কেউ কান্ট বা হেগেলের মতবাদের বিরুদ্ধে কিছু যুক্তি শানাও আর আমি নেবো তার পক্ষ। কিম্বা যদি তাতে আপত্তি থাকে তবে পক্ষে বলার ভার তোমরাই কেউ নাও, আমি নেব বিপক্ষে বলার ভার। জিতবো আমিই”। ভারি অমলিন শিশুসুলভ হাসি সেই মুখে। তর্কের মধ্যেই তার আনন্দ, জেতা তো নিশ্চিত হয়েই আছে। এরকমই একান্ত আলাপচারিতায় শ্রদ্ধাস্পদ বিধুশেখর শাস্ত্রী – উপনিষদের এক গুঢ় প্রশ্নের সামনে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন যে “একবার গুরুদেবের (অর্থাৎ কিনা রবীন্দ্রনাথের) মত নিলে হত না”? দ্বিজেন্দ্রনাথ হাত ঝাড়া দিয়ে বললেন “কে রবি? না না ও ছেলেমানুষ”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য মহর্ষির কনিষ্ঠ সন্তান তখন বনে যাবার বয়স পেরিয়েছেন আর গুণীজনের জগৎ সভায় তার আসন বিশেষ উচ্চতায় অধিষ্ঠিত। তাছাড়া বয়সেও তিনি বিধুশেখরের চেয়ে কিছুটা বড়।
আবার এই রবি কবি সৈয়দ মুজতবা আলিকে একবার শান্তিনিকেতনে পাকড়াও করে বললেন “তুই নাকি বরোদার মহারাজা হয়ে গেছিস”? সে সময়ে আলি সাহেব বরোদা কলেজে ধর্মশাস্ত্র পড়াতেন। তিনি তূষ্ণীভাব অবলম্বন করলেন। রবীন্দ্রনাথ ঈষৎ চিন্তা করে বললেন “না না মহারাজ নয় বোধকরি দেওয়ান-টেওয়ান কিছু।” এক্ষণেও আলি সাহেবের নীরবতা ঘুচলও না কারণ তিনি জানতেন যে রবীন্দ্রনাথকে নিরস্ত করার চেষ্টা বৃথা। তাহলে তিনি তার অতি উমদা কিসিমের যুক্তিজাল সাজিয়ে নিশ্চিত প্রমাণ করে ছাড়বেন যে আলি সাহেব ওই বরোদারই দেওয়ান না হোন আমির কিম্বা ওমরাহ কিছু একটা হবেন। তর্কে যখন কৃষ্ণ মিলবে না তখন তা নিরর্থক।
আলি সাহেবের ও অবশ্য গুরু মারা বিদ্যা কিছু কম ছিল না। কফি হৌস (তিনি এই নাম লিখতেন) খুব একটা মাড়াতেন না কিন্তু একবার সেখানে উপস্থিত হয়ে নেহাত নাবালকদের আড্ডায় বসেই ‘পাশুপত’ গোছের এক শরাঘাত করলেন। অর্থাৎ কিনা এক ছাপার অযোগ্য গল্প বলে তাদের সমবয়সী করে নিলেন নিজেকে। তারপর সেই টেবিলে বসা এক্কেবারে ‘বোল্ড আউট’ সদস্যদের এর-ওর-তার পরিচয় – পিতৃ নাম সহ – ফিরিস্তি চাইলেন। উপস্থিত কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (পিতা, ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়) তখনো রক্তিম কর্ণমূল সাদা হয় নি। তিনি অস্ফুটে তার পিতৃনাম বলতেই আলি সাহেব ভারি সমাদরের দৃষ্টিতে দেখলেন তাকে। তারপর বললেন ‘তোর বাবা কে তো স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ শারঙ্গ দেবের পরেই স্থান দিয়ে থাকেন। তা – ছিলেন ভালো সঙ্গীত জগত নিয়ে – তিনখানা উপন্যাস লেখার কি দরকার পড়েছিল?’ যদিও সেই অপরাধী উপন্যাস তিনটি পাঠক মহলে যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছিল কিন্তু কুমার প্রসাদ রা কাড়লেন না। তর্ক জমে না দেখে আলি সাহেব আবার সরব হলেন ‘তুই লিখিস টিকিস না কি’? কুমার বাবু সজোরে ঘাড় নাড়াতে – বললেন ‘লিখিস না। খাদ্যাভাব না হলে আমি কলম ছুঁই না।’ তারপর অন্য কারুর ঝুঁটি ধরতে উদ্যোগী হলেন। দুঃখের বিষয় সেই টেবিলে উপস্থিত মানুষ জনের অন্তত উপস্থিত বুদ্ধির অভাব ছিল না । কাজেই কিছুতেই সেই হিমালয় প্রমাণ পণ্ডিতের সঙ্গে কেউ তর্ক বাধাল না এবং হতোদ্যম আলি সাহেব ঘর ছাড়লেন।
শ্রীলঙ্কা থেকে আনা বুদ্ধদেবের পুণ্য অস্থি এসেছে ভারতে, মাথায় করে বহন করলেন শ্রদ্ধাস্পদ সাংবাদিক ও রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য অমল হোম। কোনো এক বুধ মণ্ডলীতে প্রবল বাদানুবাদ জন্ম নিল – বেম্মোজ্ঞানী অমল হোমের এই কাজের ফলে জগত রসাতলে গেল কি না। তর্ক যখন তুঙ্গ বিন্দুতে – শাঁটুল বাবু বললেন ‘ওহে এক কথায় বল না – ছিল হোম, হল ডোম’। তর্ক থামল অচিরাৎ, কিন্তু – রয়ে গেল ভদ্রতার সীমায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই বাক্যবন্ধ।
পণ্ডিত ‘ক’ বললেন ‘বাঙলা টপ্পার উদ্ভাবক রামনিধি গুপ্ত ওরফে নিধু বাবু’। পণ্ডিত ‘খ’ বললেন ‘ঘোর মুখ্খু একটি। কালি মির্জার নামই শোনেনি। উনিই বাঙলা টপ্পার জনক’। পণ্ডিত ‘গ’ বললেন ‘কালি মির্জা কার পিতা সে বিষয়ে যাচ্ছি না কিন্তু নিধু বাবু ছাড়া টপ্পার প্রচার ও প্রসার কিছুই হত না। বলে দিলাম … হ্যাঁ’। বাঁশ বেড়ের শ্রীধর কথক মশাই কল্পলোকের অন্তরালে মুচকি হেসে ধরলেন ‘ভালবাসি বলে ভালবাসি বলি না’। দুখিরামের চোখ বুজে এল।
সুস্থ বুদ্ধির সমাজে এমন তর্কের উদাহারণ কম নেই। গলাগলি বন্ধুরাও এই মহামারি এড়াতে পারেন নি। ধরা যাক প্রথম জীবনে মৃণাল-সত্যজিৎ এবং শেষ জীবনে সত্যজিৎ-চিদানন্দ। ধরা যাক, রাগের শুদ্ধ রূপ নিয়ে রবিশঙ্কর ও বিলায়েত। ধরা যাক ড্রিবলিং-এর শ্রেষ্ঠতা নিয়ে চুনী ও পিকে। ধরা যাক গাভাস্কার না শচীন। এরা সবাই ভারত তথা মহা বিশ্বের মাথার মণি। তবু এই তর্কের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রমাণ হয় তাঁরা দেবতা নন – মানুষ। আর মায়ের হাতের সুক্ত বনাম শাশুড়ি মায়ের দমপক্ত – কে বেশী রসনা রঞ্জন – সে তর্ক তো ঘরে ঘরে।
প্রাচীন পণ্ডিতরা শিক্ষা সম্পূর্ণ মনে করলে বেরুতেন মেধা-মেধ সন্ধানে। যেন আর এক অশ্বমেধ যজ্ঞ। রাজ্যে রাজ্যে ঘুরে তর্কে আহবান জানাতেন স্থানীয় জ্ঞানী গুণীকে এবং হয় পরাস্ত করে কিম্বা নিরস্ত হয়ে গৃহের রাস্তায় ফিরতেন আবার। প্রবল পণ্ডিত – আবার বালকোচিত দুষ্টবুদ্ধিতে পারঙ্গম – নবদ্বীপ চন্দ্র নাকি তর্কে হারলে বিজিত পণ্ডিতের বৈজয়ন্তী দাবী করে বসতেন।
এ সব তো হল – কিন্তু দুখিরাম ভাবে, মানুষ তর্ক করেই বা কেন? কি লাভ এই রক্তচাপ বাড়ানো ক্রিয়া কলাপের? এই ছার ভস্ম রচনার উদ্দেশ্য সেই তত্ত্ব তালাশ।
রাষ্ট্রপ্রধানরা তর্ক করছেন, মুখপাত্ররা উস্কানি দিচ্ছেন। একেক দেশের আমলারা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গরম বুলি ঝাড়ছেন। অন্যদেশের আমলারা তখন আধো ঘুমে শুনছেন আর নিজের পালা আসার অপেক্ষা করছেন। এলেই তিনি তুলো ধুনে দিচ্ছেন অন্যের যাবতীয় যুক্তি। যার কিছুটা স্বার্থ জড়িত – তিনি কায়দা করে জলে যদি বা নামছেন – বেণী ভেজাচ্ছেন না। ফলত -“দেশে দেশে নিন্দে রটে, পদে পদে বিপদ ঘটে”।
রাজনীতিতে হয়ত এমন তর্ক জিইয়ে রাখা অস্তিত্বে অবলম্বন। মানুষকে কোনো না কোনও বিষয়ে রাগিয়ে রাখা জরুরী কারণ তাতে মূল সমস্যার থেকে নজর ঘুরিয়ে রাখা যায়। কিন্তু দুখিরামের মত অন্ত্যজদের কি প্রয়োজন এই চড়ক পুজোর?
দুখিরাম যখন স্কুলিভুত বালক তখন জীবন ছিল নলেন গুড়ের মত সহজ। শিক্ষকদের বা অভিভাবকদের সঙ্গে কোনও তর্ক একটি প্রমাণেই সাব্যস্ত করা হত – সেটি হল – যেমন বলেছেন দ্বিজেন্দ্রলাল – “সেরা প্রমাণ লাঠির গুঁতো”। খুবই দুঃখের বিষয় সেকালের শৌর্য বীর্য গিলে খেয়েছেন একালের শিক্ষা দপ্তর। দুখিরাম শুনেছে কিল, গাঁট্টা দুর-স্থান – ছাত্রের যৎ সামান্য কান টানলেও শিক্ষকের মাথা নিয়ে টানা টানি পড়তে পারে। তাই চৌদিকে কল্কি অবতার, ঈশকুলেই হুলুস্থুলু।
কিন্তু পেয়াদা যদি ছাড় দেয় তাহলেই কি তর্কচঞ্চু হতে হবে? কেন সাধারণ্যে এত বাক্য বিস্ফোট? দুখিরাম তার মোটা বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে দু-একটি কারণ খুঁজে পেয়েছে। অল্প ব্যাখ্যা করা যাক।
সভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে জাগতিক সুখ, সমৃদ্ধি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে – পাল্লা দিয়ে বেড়েছে উদ্বেগ, অশান্তি, অস্থিরতা। রাস্তার পাশে নড়বড়ে বেঞ্চে বসে এক ভাঁড় চায়ের যে শান্তি ছিল – সাত তারা রেস্তোরাঁর দামী পেয়ালা পিরিচে – সে ডুবে গেছে। আরামের তামুক খাওয়া কমেছে , চিত্ত বিপর্যয়ের সিগারেট টানা বেড়েছে। রাষ্ট্রপ্রধান থেকে পথের ভিখারি সবাই ভাবছে এই বিপুলা পৃথিবীতে শুধু তাকেই অবহেলা করছে লোক। সমুচিত শিক্ষা দেওয়া কর্তব্য। কিন্তু চাইলেই তো দেওয়া যাচ্ছে না । তাই অন্তত হাবি যাবি হাঁক পেড়ে – তর্কের মাধ্যমে নিজে ক্ষোভ উগরে দেওয়া যাক। শিরোনাম যাই হোক – বকলমে কিছুটা ‘খুব টাইট দিয়েছি আজ’ গোছের অলীক মন জুড়াল।
আরেকটি কারণ রয়েছে গ্রীক পুরাণে। গালভারী নাম ‘নার্সিসাস কমপ্লেক্স’ সাদা বাংলায় বলা যায় ‘আমাকে দেখুন’। যেখানেই একশো চুয়াল্লিশ ধারা ভঙ্গ হচ্ছে – অর্থাৎ কিনা জনা পাঁচেকের বেশী সমাবেশ রয়েছে – সেখানে ‘কি নিয়ে কথা হচ্ছিল’ বলে প্রবেশ এবং সম্পূর্ণ স্রোতের বিপরীত একটি বাক্য বলা। তারপরেই হাঁ-হাঁ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল লোকে আর আপনি জ্ঞানগম্ভীর বাঁকা হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন মধ্যমণি হয়ে। চুনের আলোয় – (যাকে বাংলায় বলে ‘লাইম লাইট’) থাকা গেল সব সময়।
আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে পরমাণু সংসার ও দীর্ঘ জীবন। ঘরে ঘরে বুড়ো বুড়ি। স্বাস্থ্য মোটামুটি, মোটা ভাত কাপড়ের অভাব নেই, ছেলে-মেয়ে-বৌ-জামাই চাকুরে, খালি ঘরে সময় অফুরন্ত। ভারতবর্ষে মানসিক স্বাস্থ্য চিরকালই অবহেলিত আর তাতেই সমস্যা প্রবীণ নাগরিকদের। কথা বলতে গেলেই সমাজ পাস কাটায়। তাকে তেড়ে ধরতে গেলে মাততে হবে তর্কে। আন্তর্জাতিক যুদ্ধ পরিস্থিতি হোক কিম্বা কুমন সুমনের সু-সমাচার – একই গুরুত্ব পায় বয়স্কদের বয়স্য সভায়।
এছাড়াও যেটা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায় তা হল … … … সেটা অনুগ্রহ করে আপনি খুঁজে বার করুন। দুখিরাম কোনো দূরদর্শনের সঞ্চালক নয় যে ‘কাশীনাথের’ মত ‘আপনি গড়ি তোলে বিপদ জাল, আপনি কাটি দেয় তাহা’ । অর্থাৎ পাতি লেবু থেকে পান্তুয়া সব আপনার থালায় সাজিয়ে দেবে। লেখার দৈর্ঘ্য বেড়ে যাবার দরুন ব্যাজার সম্পাদক মশাইয়ের মুখ দেখতে দুখিরাম রাজী নয়।
শেষ কথা বলার অধিকার কারু নেই, তবে লেখা শেষ করতে হয়। প্রেমেন্দ্র মিত্র মশাইকে ছড়াকার করে ছিলেন আর এক তাবড় পদ্যকার – নীরেন্দ্রনাথ। ছড়ার ছড়া ছড়িয়ে দিয়ে ছিলেন আনন্দমেলায়। দু’জনেই ছন্দ নিয়ে ছিনি মিনি খেলতেন। তো – সেই মিত্র মশাই একখানা ছড়া লিখেছিলেন – যেখানে ‘এপারে তিনটে দাঁড় কাক – আর ওপারে সাতটা শালিক, / মামলা লড়ছে মাঝের নদীর কারা হক্কের মালিক’। দু পক্ষের শামলা-ওয়ালা রা যখন যুক্তি যুদ্ধে গলদ ঘর্ম তখন ‘এমন সময় কোথা থেকে এক পানকৌড়ির ছা, / মোকদ্দমার ধারও ধারল না’ এবং টপাত করে মাঝ নদী থেকে একটা মাছ ধরে উড়ে পালাল। (ছড়াটি উমদা কিসিমের। এখন কাছে নেই, স্মৃতিতেও ভাঙা ভাঙা রয়েছে। পারলে পাঠক / পাঠিকা পড়ে দেখবেন।) শিশুপাঠ্য ভেবে পড়েছিলাম। আজ এই বিশ্বব্যাপী তর্কের বাজারে মনে হয় এ খুবই প্রাসঙ্গিক। আমরা রইলাম তর্কে মজে – আর কোথাকার কোন পানকৌড়ি সেই ফাঁকে নিয়ে পালাল আমাদের সাধের তালুক। হালেই দেখুন না – সবাই যখন কি হবে কি হবে করে মাথা ঘামাচ্ছেন – বড় বড় সাদা চুলের দুই ভদ্রলোক পকেটে পুরলেন দুটি রাষ্ট্রকে। তার চেয়ে শিরোনামের পদ্যটি আর এক বার পড়ুন না। ছটাক খানেক বুদ্ধির ধান পঞ্চাননকে দিয়ে শান্তি পান সবাই। দুখিরাম তাই বলে।
তথ্যচুরি – প্রমথ নাথ বিশী, কুমার প্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ মুজতবা আলি, হোয়াটস আপ বিশ্ববিদ্যালয়।