২০১৮ সালের এক বৈশাখী সন্ধ্যা। জনাকয়েক বন্ধুর আগ্রহে ও পরিকল্পনায় জন্ম নিয়েছিল ‘রবিচক্র’ শিরোনামের ছোট্ট একটি সাংস্কৃতিক আড্ডার আসর। স্থির হয়েছিল, বাংলার শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির চর্চাই হবে রবিচক্রের উপজীব্য। প্রতি মাসের একটি রবি-সন্ধ্যায় উত্তর চব্বিশ পরগণার আগরপাড়ায় ইলিয়াস রোডস্থিত প্রভাসতীর্থের সভাঘরে বা পাঠঘরে বসবে বঙ্গসংস্কৃতি চর্চার আসর।
শুরু হয়েছিল ঘরোয়া আড্ডার পরিসরে। ধীরে ধীরে বৃহত্তর সুধীমণ্ডলীর উপস্থিতিতে কিছুটা বড় পরিসরে পৌঁছল রবিচক্র। আসরগুলো আলোকিত হতে থাকল নানা বিদ্বজ্জন ও শিল্পীদের সমাগমে ও আলোচনায়। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে “রবিচক্র” নামাঙ্কিত সংগঠনের মুখবই অর্থাৎ ফেসবুক। এখানে যুক্ত হলেন বহু কাছের ও দূরের বন্ধুরা, বিশিষ্ট মননশীল মানুষজনেরা। লেখায়, রেখায়, গানে, আবৃত্তির পরিবেশনে জমে উঠল রবিচক্রের দেওয়াল বা পাতা। বর্তমানে এই পাতার সদস্যসংখ্যা বাড়তে বাড়তে সাড়ে চার হাজার অতিক্রম করেছে।
ইতিমধ্যে আতঙ্কের মহামারীতে দুটি বছর রবিচক্রের নিয়মিত আসর সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও প্রবলভাবে চলমান থেকেছে সংগঠনের মুখবই “রবিচক্র” এবং “বাংলার মুখ ও মনন” সাংস্কৃতিক ইউটিউব চ্যানেলের আন্তর্জালিক পরিবেশনার কাজ। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষ্যে উক্ত ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর গাওয়া গানের দুটি ভিডিও। সুখের কথা, মহামারীর সমাপ্তিতে আবার পূর্ণোদ্যমে শুরু হয়েছিল রবিচক্রের আসরগুলি।
বিগত ছ’টি বছরের দিকে ফিরে তাকালে দেখতে পাওয়া যায়, রবিচক্রের আসরগুলি আলোকিত হয়েছে বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, স্বনামধন্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে। এই সময়কালে বক্তা ও আলোচকের ভূমিকায় রবিচক্র পেয়েছে অধ্যাপক পিনাকেশ সরকার, অধ্যাপক পবিত্র সরকার, অধ্যাপক সুদিন চট্টোপাধ্যায়, ঔপন্যাসিক ও শিক্ষক সাধন চট্টোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়-পুত্র সুকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যকার চন্দন সেন, নাট্য-বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অপূর্ব দে, অধ্যাপক তরুণ দাশ, অধ্যাপক আশিস খাস্তগীর, অধ্যাপক সৌমিত্র বসু, অধ্যাপক বিশ্বজিৎ রায়, অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, স্বামী বিবেকানন্দের জীবন ও বাণীর স্বনামধন্য ভাষ্যকার তরুণ গোস্বামী, শিক্ষক ও সুবক্তা কৃশানু ভট্টাচার্য্য, লেখিকা ঝুমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখকে।
সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে রবিচক্রের আসরকে আনন্দ দিয়েছেন শ্রাবণী নাগ, গোপা কুন্ডু, শুক্লা দাশ, মৈত্রেয়ী রায়চৌধুরী, বৈশাখী চক্রবর্তী, মিতা কুন্ডু, সপ্তর্ষি ঘটক, অরিজিৎ মুখোপাধ্যায়, ডক্টর কৃষ্ণেন্দু সেনগুপ্ত, শৌভিক দে, শিবাংশু দে, অরিন চট্টোপাধ্যায়, কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্রেষ্ঠা মজুমদারের মতো গুণী ও সুকণ্ঠী সঙ্গীতশিল্পীরা। বাচিক শিল্পে আমাদের মুগ্ধ করেছেন অমিত চক্রবর্তী, বৈশাখী ঘোষ ও দোলনচাঁপা সরকার, বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়, অনামিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো গুণী বাচিক শিল্পীরা। একক অভিনয়ে বর্ষীয়ান অভিনেতা সুনীল কোলে আমাদের মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছেন একাধিক আসরে।
এই পাঁচ বছরে রবিচক্রের ঘরের মানুষদের ভূমিকাও কম ছিল না। বাচিক শিল্প ও অভিনয়ে নজর কেড়েছেন তপন চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর পাল, স্বপ্না পাল, প্রবীর রায়, পিঙ্কু ভট্টাচার্য গোস্বামী, দেবলীনা চক্রবর্তী, রঞ্জিতা বসু, সঞ্চিতা বসু, সায়ন্তী মজুমদার প্রমুখেরা। যে তথ্যটি বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে, তা হল, রবিচক্রের সংগঠনে সঞ্চালক, বাচিক শিল্পী ও গল্পকথক হিসেবে সৌরভ হাওলাদারের উজ্জ্বল ও জনচিত্তজয়ী ভূমিকা।
রবিচক্রের একের পর এক আসরে গানের পরিবেশনে নিরলস ও অসামান্য ছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায় ও দ্বৈপায়ন গোস্বামী। অন্য ধারার গানে মাঝেমধ্যে রবিচক্রের আসরকে প্রাণময় করেছেন আশিস সেন। পরবর্তীকালে এসেছেন সিঞ্চিতা চট্টোপাধ্যায়, মিহির দে ও সুতপা কর গোস্বামী। ওঁদের সংযোজনে সমৃদ্ধ হয়েছে রবিচক্রের গানের ভুবনটি। সুকান্ত ভট্টাচার্যের হারমোনিকা বাদন ও কিশোরী দৃশানা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিবিধ যন্ত্রসঙ্গীত বাদন আসরকে প্রায়শই বর্ণময় করে তুলেছে।
বিগত ছ’বছরে ‘রবিচক্র’ তৈরি করেছে কিছু পরম্পরা। সংগঠনের প্রত্যেকটি আসর শুরু হয় সদস্যদের সমবেত মঙ্গলাচরণ ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ’ সঙ্গীতের ঝর্ণাধারায়। একনিষ্ঠ নিয়মানুবর্তিতায় প্রত্যেকটি আসর শুরু হয় সুনির্দিষ্ট সময়ে।
এই প্রসঙ্গে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য রবিচক্রের দুই প্রবাসী সদস্যের নাম, যাঁরা বাংলা সংস্কৃতির টানে বহুদূরে থেকেও সঙ্গে থাকেন, নিয়মিতভাবে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন রবিচক্রের কর্মকান্ডে। এঁরা হলেন শ্রী পবিত্র চক্রবর্তী (কানাডা অভিবাসী) এবং শ্রী সন্দীপ চ্যাটার্জি (বেনারসবাসী)।
রবিচক্রের যে সব সদস্য সংগঠনের জন্মলগ্ন থেকে বা মধ্যবর্তী সময় থেকে নানাভাবে প্রত্যক্ষ কর্মী ও সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁরা হলেন, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তপন চট্টোপাধ্যায়, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং প্রতিষ্ঠাতা সদস্য (প্রয়াত) দিলীপ মুখোপাধ্যায়, দুলাল চক্রবর্তী, অনুপ হোমরায়, দেবিদাস মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ আদক ও জ্যোতিপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য। পরবর্তীকালে এসে যাঁরা রবিচক্রকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁরা হলেন, মৃদুল মজুমদার, গৌতম মৌলিক, আশিস সেন, সৌরভ হাওলাদার, সুবীর ভট্টাচার্য্য, দীপঙ্কর সিনহা, চন্দন সেনগুপ্ত, রণদেব চক্রবর্তী। সম্প্রতি রবিচক্রের পরিসরে নিজেদের যুক্ত করেছেন তাপস ভট্টাচার্য্য, অমরনাথ কুন্ডু, অসীম দাশ ও মিহির দে। আর উল্লেখযোগ্য তরুণ আলোকচিত্রী সুকান্ত মুখোপাধ্যায়ের নাম, যার সহায়তা ব্যতিরেকে রবিচক্রের আসরগুলির চলমান ও স্থিরচিত্রগুলি অধরা থেকে যেত।
সংগঠনের পথ চলায় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তিন বিদগ্ধ ব্যাক্তির নাম, রবিচক্রের আসরে যাঁদের অংশগ্রহণ, বিবিধ বিষয়ে যাঁদের পরামর্শ, এমনকি ব্যক্তিগত পরিসরের আলোচনা রবিচক্রের কর্মধারাকে সঞ্জীবিত করে চলেছে। তাঁরা হলেন সর্বশ্রী হিমাদ্রী কুমার দাশগুপ্ত, সোমেন দে এবং অধ্যাপক গৌতম নাগ।
বাংলা সংস্কৃতির নিরন্তর চর্চায় ও প্রসারে অব্যাহত থাকুক রবিচক্রের পরিক্রমা – এইটিই আজকের কামনা। বিগত ছ’টি বছরের এই যাত্রাপথের প্রান্তে পৌঁছে আজ, ১লা বৈশাখ, ১৪৩১, নববর্ষের দিনে একটি আন্তর্জালিক পত্রিকার উদ্বোধন রবিচক্রের মুকুটে এক নতুন সংযোজন বিশেষ।
নতুন এই পত্রিকার এগিয়ে চলার পথে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা রইলো।সম্পাদক দুজনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই পত্রিকা।তাঁদের নিরলস প্রচেষ্টা সার্থক হোক এই কামনা করি।
রবিচক্রের সাথে যুক্ত হওয়ায় আমার নিঃসঙ্গতা দুর হয়েছে।আমি বেশ কিছু গুণী মানুষের সাথে পরিচিত হতে পেরেছি এবং সমৃদ্ধ হয়েছি নানাভাবে।তাঁদের সবাইকেই আমার শ্রদ্ধা জানাই।
রবিচক্রের ই-পত্রিকার আবির্ভাবের সংবাদে খুশি হলাম। “অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু!”
রবিচক্রের মুকুটে বাংলা নববর্ষের শুভদিনে নতুন একটি পালক যোগ হল। বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী ধারাটি বর্তমান বাণিজ্যসর্বস্ব যুগে যখন ক্রমশ ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে, তখন রবিচক্রের মত একটি ছোট্ট সংস্থা তার কতিপয় পৃষ্ঠপোষকের স্বেচ্ছাশ্রম এবং অনুদানে সেই ধারাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য অন্ধকারের মধ্যে প্রদীপের শিখা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই উদ্যোগ এবং উদ্যমের প্রাণপুরুষ তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। শ্রদ্ধেয় হিমাদ্রিকুমার দাশগুপ্ত, সোমেন দে, গৌতম নাগ ও আরো অনেক গুণীজনের প্রত্যক্ষ সান্নিধ্য ও অভিভাবকত্বে রবিচক্রের শিখা আরো প্রজ্জ্বলিত হয়ে আগামী প্রজন্মকে তাদের মাটি ও শেকড়ের সাথে সম্পৃক্ত করবে এই কামনা করি।
বাংলা শুভ নববর্ষ ১৪৩১ এর প্রথম ঊষা লগ্নে রবিচক্রের আন্তর্জালিক প্রত্রিকার উদয় মূহুর্তে তার পরিচালক মন্ডলী , পাঠক মহলে ও তার সর্বস্তরের লেখক শিল্পী সাহিত্যিক মন্ডলী কে আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানাই।
এই প্রত্রিকা আগামী দিনে খরস্রোতা নদী থেকে সাগরের রূপে বাংলা সাহিত্যে সংস্কৃতি চর্চায় বিদ্যমান থাকে।
নববর্ষের আগামী দিনে সবাই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।
মস্ত কাজ করলেন বন্ধুপ্রতিম দুই সম্পাদক। কী পরিচ্ছন্ন সম্পাদনা আর অলংকরণ। নিশ্চয় জানি, তাঁদের মননের বিকাশ ও বিস্তার ‘রবিচক্র’কে নিয়ে যাবে দূরে, আরও অনেক দূরে।
রবিচক্রের ই-পত্রিকার আবির্ভাবের সংবাদে খুশি হলাম। “অয়মারম্ভ শুভায় ভবতু!”
রবিচক্র পরিবারে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। সঙ্গে থাকবেন।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩১ এ শুভারম্ভে রবিচক্রের এগিয়ে চলার পথে অনেক অনেক শুভেচ্ছা র ফুল ছড়িয়ে দিলাম। সম্পাদকীয় পড়ে অভিভুত হলাম। রবিচক্রের আলো যেন দিগন্তপ্রসারী হয় এই শুভকামনা করি।
অনেক ধন্যবাদ। এই পরিকল্পনার সহযাত্রী থাকার অনুরোধ রইল।