শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

কড়া ও টাটকা রোদের মধ্যে দিয়ে সিটন গ্রামে যখন পৌঁছলাম তখন চারদিক থেকে ময়ূর ডাকছে ৷ এত জোরে এবং এতখানি একস্বরে ডাকছে ,মনে হল শান্ত পাহাড়ি গ্রামে বনময়ূরের দল লাঠিখেলা দেখাতে এসেছে বুঝি ৷ পৌঁছবার সামান্য পরেই পাহাড়ের ওদিকটায় ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল ৷ সিটনের দিকটায় সেই একই পরিমাণ রোদ ৷ রোদ ও মেঘের এমন চুলচেরা তফাৎ কোনোদিন কোনো দেশের আকাশে দেখিনি ৷ এদিকে গা পুড়ছে ৷ ওদিকে চা বাগান শেষ করেই বৃষ্টি আর বৃষ্টি ৷ না লাগল মেঘের গায়ে রোদ ৷ না হল রোদ বৃষ্টির মাখামাখি ৷ কেবল দেখলাম -বেলা বাড়লে মেঘ যেমন এক রয়ে গেল রোদের কিন্তু তেমন না ৷ রোদ পরিবর্তিত হল হরিণ রঙে ৷ আকাশের আঁধারে পৃথিবীর কালোর প্রতিচ্ছবি ৷ যেতে আর চায় না ৷ স্তুপ হয়ে বসে থাকে ৷ আর ঠিক পৃথিবীর মতো করেই আকাশ দ্বিখন্ডিত হয় আলো আর আঁধারে ৷ মাথাগরম করে বললাম – যত্তসব উজবুক মেঘ৷

রাগ স্থায়ী হতে দিল না রোদের হরিণরঙটা ৷ চান করে বাইরে বসতেই সেটা একেবারে আমাকে ছেঁকে ধরল ৷ গায়ে তরল হরিণ মেখে বসে আছি , দেখি দুইজন পাহাড়ি মজুর রাস্তায় কাজ করছেন ৷ যেখানে গিয়েছি সেখানের মানুষের দুটো কথা যদি বুকে করে না নিয়ে আসি তো কীসের প্রকৃতি ভালবাসলাম বল দিকিনি ! অধিবাসীর তপ্ত পরশ ছাড়া প্রকৃতি প্রাণ পায় নাকি গো ! জিজ্ঞেস করলাম – এখানে খুব ঠাণ্ডা তাই না ? বুড়ো মজুর উত্তর না দিয়ে ঘাম মুছল ৷ যুবকজন মুসলমান ৷ ফের প্রশ্ন -আপনাদের ঈদ তো আজ ৷ উত্তর নেই ৷ কোদাল দিয়ে পাথর সরাবার শব্দ শুধু ৷ হোম স্টের গায়েই চাবাগান ৷ এ হোম স্টে মেয়েরা চালান ৷ সমভূমির অতিথিদের জন্য কুড়িবার করে চা করে সর্পিল গতিতে নেমে যান চাবাগানে ৷ বারান্দা থেকে তাঁদের চাপাতা তোলার শব্দ শুনছিলাম ৷ সে শব্দে আধাশুকনো পাতা পড়ার শব্দগুলো মিশে আজব ধ্বনি ৷ শ্রমের ধ্বনি ৷ মানুষ ধনী কিংবা ভিক্ষুকে পরিণত হচ্ছে ৷ দুইয়ের মাঝে নিজ দমে বাঁচার যে সম্মানজনক পথটা ছিল তা ধীরে ধীরে ভুলে যাবে মানুষ ৷

ভয় পাচ্ছিলাম একলা বারন্দায় ৷ এ বাড়ির গৃহিণী দূরে কালো চশমা পরে চা পাতা তুলছেন ৷ এসেই দেখেছিলাম চোখে জোরদার ইনফেকশন ৷ এখনো দেখলাম একবার করে চশমা খুলেছেন ,চোখ মুছছেন ৷ আবার নিবিড় চোখে চা গাছে পাতা খুঁজছেন ৷

পাহাড়ের মানুষ কম কথা বলে ৷
শরীর ও ঘাম কখনো কখনো শব্দের থেকে বলীয়ান হয় ৷

আমাদের ছোট গ্রাম সিটন
তার এক আকাশে মেঘের ভেলা
আরেক আকাশে হরিণ খেলা ….

কাল সিটঙে অনেক রাতে বৃষ্টি নেমেছিল ৷ ততক্ষণে ওদিকের পাহাড়ে গেরস্থদের আলো নিভে গেছে ৷ ঝড়ে আমাদের এদিকে সবকটা হোম স্টের আলো চলে গিয়েছিল ৷ আঁধার ঘর থেকে আঁধারের বৃষ্টি দেখছিলাম ৷ বা শুনছিলাম ৷ পাথরের ওপর সাদা দানা পড়ার শব্দ তীক্ষ্ণ হচ্ছিল ৷ ঘুমিয়ে পড়েছিলাম একসময় ৷ সকালে উঠে অল্প রোদ এবং বেশি কুয়াশা ৷ সূর্য ওঠা দেখা গেল না বলে আমার মনখারাপ হয়নি ৷ পাহাড়কে যে মানুষের চাহিদামতো সূর্যোদয় দেখাতেই হবে এবং না দেখালে যে পাহাড়ের বাকি সৌন্দর্যের আর কোনো মানে থাকবে না এ আমি মানি নে ৷ এ গাঁয়ে এসে এবং এ গাঁয়ের মানুষদের শ্রমে নিষ্ঠা দেখে ,কেন জানি না আমার খালি মনে হয়েছে -পাহাড় তার সমস্ত মহানতা ও সৌন্দর্য নিয়ে এই মানুষগুলোর সুখে দুখে জড়িয়ে থাকুক ৷ সমতলের মানুষ ইতিমধ্যেই অনেক স্বাচ্ছন্দ্য অনেক সৌন্দর্যে জীবন চালাচ্ছে ৷ সুতরাং তাদের ইচ্ছেপূরণের দায় পাহাড়ের নেই ৷ এই দেখ !পাহাড়ের কথা লিখতে গিয়ে কখন যে তাকে জ্যান্ত মানুষ ভেবে বসে আছি ! পাহাড় ব্যাটা নিশ্চয় আমার ঘাড়ের কাছে মুখ রেখে তার জন্য লেখা শব্দগুলো পড়ছে একমনে৷

পার্বতী পিসি চা পাতা তুলে নীচে নেমে এলেন ৷ আজ ওপরের বাগানে গিয়েছিলেন ৷ কালকেই আমাকে বলেছিলেন পিসি ডাকতে হবে ৷ যাঁদের হোম স্টে তাঁদের সম্পর্কে পিসি হন পার্বতী ৷ তাই হয়ত আমার ক্ষেত্রেও পিসি ৷
আজকে তাঁর চোখের ইনফেকশন অনেক সেরেছে ৷ সেকথা বলতেই বললেন –আমি জড়িবুটি করেছি ৷ অবাক হয়ে বললাম – একটা মিনিমাম হাসপাতাল নেই ? আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন ৷ বোধহয় আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন আমার কাছে মিনিমাম চিকিৎসাটা ঠিক কী !

তাঁর মেয়ে দিব্যা মায়ের জন্য গরম চা নিয়ে এসেছে ৷ আরামের চুমুক দিতে দিতে পার্বতী বললেন -ওই কয়েকটা ডায়রিয়া আর জ্বরের ওষুধ রেখে দিই সবাই ৷ বাকি সব জড়িবুটি ৷ ও ছাড়া আর তো কিছু নেইও …৷

–বড় অসুখ হলে ?

–শিলিগুড়ি বা কারসিয়াং ৷ তাও তো নিয়ে যেতে পারলাম না বরটাকে ৷ প্রেসার হাই হয়ে গেল ৷ বাড়ির গাড়ি খারাপ হল সেদিনই ৷ তো মরে গেল ৷ শীতকাল তখন ৷ বরফ পড়েছিল সেবার ৷ শীতকাল এলে খারাপ লাগে …তবে সে চলে যাওয়ার পর কাজের চাপ তো বেড়েছে খুব ! কাজ করতে করতে পাঁচটা বেজে যায় ৷ তারপর এসে কিচেনের কাজ ..কাপড় কাচা ..এই করতে করতে ঘুম চলে এল ৷ ফের ভোর পাঁচটা ….৷

নারায়ণ এসে পা মুড়ে বসল পার্বতীর কাছে ৷ নারায়ণ একদিন গাড়ির তলায় ঘুমোচ্ছিল ৷ গাড়ি স্টার্ট দিতেই নারায়ণের একটা পা পিষে হাড় বেরিয়ে গেল ৷ এইসব সহ্যশক্তির গল্প শুনে হোম স্টের এই কুকুরটির নাম হয়ত নারায়ণ দিয়ে ফেললাম ৷ জীবনে এই প্রথমবার এক অঙ্গের হাড় বের করা জ্যান্ত জীব দেখলাম ৷ নারায়ণ হাঁটার সময় নিজের হাড় বের করা পা টা অন্য পা দিয়ে যত্ন করে ধরে রাখে ৷ দিব্যা নারায়ণের পায়ে সান্ধকালীন দাওয়াই লাগাচ্ছিল ৷ তারও হয়ত জড়িবুটি ৷ মানুষ আর মানুষের পোষ্য সবারই এক জড়িবুটি !

আজ নারায়ণ সারাটা দুপুর পাখিদের পিছু পিছু ছুটেছে ৷ এখানে পাখিগুলো হয়েছে বদের ধাড়ি ৷ সারাদিন গাছের আড়ালে থেকে ডাক দেবে ৷ ডাক দিয়ে দিয়ে প্রকৃতি মুখর করে রাখবে ৷ যদি একটুখানি পাখনা তাদের দেখতে পায় বার্ড ওয়াচাররা তো ফের উড়বে অন্য ডালে ৷ বার্ড ওয়াচারদের পাখি দেখাতে নিয়ে গিয়ে নারায়ণ নিজেই ক্লান্ত হয়ে গেছে ৷ পাহাড়ের মানুষ সমতলের মতো বিদেশী কুকুর কিনে ঘর সাজায় না ৷ শহরে মানুষের খাবারের চেয়েও পোষ্য লিজাদের খাবারের দাম বেশি ৷ পাহাড়ের মানুষ অন্যায্য নেয় না ৷ দেয়ও না ৷ তাদের ঠাণ্ডা কনকনে বাড়িগুলোতে কুকুর বিড়াল আপনি জোটে ৷ তাদের মতোই ভাত ডাল খায় ৷ মানুষের আচরণ রপ্ত করতে পারে অনেক বেশি ৷ গৃহমালিকদের মতো তারাও অতিথিদের দেখভাল করে ৷ দুপুরেও আমার একা বেরোনোর জো রাখেনি নারায়ণ ৷ পাখিদের সঙ্গেও তার বন্ধুত্ব খুব ৷ সিটঙ গাঁয়ে স্থলচর আর আকাশচর মিলেমিশে বড় হয় ৷

আমাদের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে কাজিয়া হয় না গো ৷ ওই দেখ -আমার ভাইজিরা হোম স্টে চালায় ৷ আমার মেয়েটা তার দিদিদের সঙ্গেই রান্না করে ৷ অতিথিদের কাজ করে ৷ ওইদিকটা ওদের জমি – ওদের হোম স্টে আর এদিকেরটা আমার জমি ৷ আমার বর এদিকে বাড়ি করল ৷ আমি আরো একটা ঘর বাড়াব ৷ চা পাতা রাখার গুদাম করব ৷…এত সহজ হিসেবের মধ্যে আমার একটা মুক্তিবোধ জন্মাচ্ছিল গো ৷ পার্বতীর চা খাওয়া শেষ হল ৷ সে এবার তার বরের বাড়ির ফুলের গাছে জল দেবে ৷ এখানে সবার বাড়ি ফুলে ফুলে ভরা ৷ ফুল আপনি বেড়ে আজন্ম এই শ্রমিকজাতির ঘর সাজায় ৷ দিব্যার চুলে হাত গেল ৷ইস ! কী সিল্কি আর নরম চুল ৷ একদম স্ট্রেট ৷ বললাম – এত সুন্দর চুলে ফুল লাগাও না কেন ! ফুল তো সব তোমাদের ৷ রোজ একটা করে ফুল লাগাবে ৷ মা মেয়ে হাসল ৷

সিটঙ আমাদের ছোট গ্রাম ৷
সেখানে ফুলগাছ যে দেখে তার !
গাছেই ফুলের ….

গাছেই জন্মান্তর ৷

সকালে সিটঙ যখন ছেড়ে আসছি তখনই আলাপ হল হিতেন বহুরূপীর সঙ্গে ৷ হিতেন তখন রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে নিখুঁত নেপালী ভাষায় কথা বলছিল আমাদের হোম স্টের মেয়েদের সঙ্গে ৷ তার দৃষ্টিপাতে বুঝলাম , আমাদের টেবিলে সাজানো মশলা আলুর দম দেখে হর্ষ করছে হিতেন এবং খুব করে সার্টিফিকেট দিচ্ছে নেপালী রান্নার ৷ আমি যে তাকে দেখে হাসছি আড়চোখে দেখে নিল হিতেন ৷ আর তখনই হিতেনের ভাষা রাষ্ট্রীয় হয়ে গেল ৷ এবার বিশুদ্ধ হিন্দীতে হিতেন মেয়েদের বোঝাতে লাগল – বাঙালি অতিথি কত ভালো ,কত শান্ত ৷ সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে গাড়িতে উঠছি ,দৌড়ে এল জিতেন ৷

—দিদি আমি বাঙালি গ !

আমি হাঁ ৷ সিটঙ গাঁয়ের পাথুরে চত্বরে দাঁড়িয়ে হিতেন শোনাল এক আশ্চর্য অভিমানীর কাহিনী ৷ দেশভাগে ও বাংলা থেকে একরাতের মধ্যেই সামান্য জিনিসপত্র আর বউ ছেলে নিয়ে পালিয়ে আসেন হিতেনের ঠাকুরদা ৷ পালিয়ে আসার পর পিঠে এক কোপ পড়েছিল ঠাকুরদার ৷ আসামে আশ্রয় নেবার পর ঠাকুরদা মুখ ফেরালেন বাংলা ভাষা থেকে ৷ মার খাওয়া এবং মার খেয়ে দেশ ছাড়ার সমস্ত রাগটা গিয়ে পড়ল তাঁর নিজের ভাষার ওপর ৷

যে দেশ থেকে ঘাড়ধাক্কা খেলেন দাঁতে দাঁত চেপে মা বলা ছাড়লেন হিতেনের ঠাকুরদা ৷ সারাদিন কোপের ওই দাগটার ওপরে হাত বোলাতেন আর রপ্ত করতে লাগলেন আসামী ভাষা ৷ দেশের একশোটা নারকেল গাছ কিংবা জমি পুকুর ছোটবেলার পাঠশালা কোনোকিছুর জন্য বিন্দুমাত্র খেদোক্তিটুকুও আর শোনা যায়নি হিতেনের ঠাকুরদার মুখে ৷ সারাদিন অসমিয়া ভাষায় গল্প ,অসমিয়াদের সঙ্গে দেদার মিশ্রণ ৷ হিতেনের গল্প আমার অবিশ্বাস্য লাগেনি ৷ কোন যন্ত্রণায় হিতেনের ঠাকুরদা দেশকে মা ভাবা ছেড়েছিলেন তা অনুভব করতে পারলাম আমার বাবার মুখে শোনা তাঁর ঠাকুমা হেমনলিনীর গল্প দিয়ে ৷ দেশ ছাড়ার সময় এগিয়ে আসছে বাবাদের ৷ দুর্গাপুজোও আসছে ৷ আমাদের ধূলিহর গ্রামের মুসলমানরা ঘিরে দাঁড়ালেন হিন্দুদের চারপাশে ৷ বললেন – প্রতিবছরের মতো এবারও এ গাঁয়ে পুজো হবে মা ৷ আমরা সব জোগাড় করে দেব ৷ হিন্দু মুসলমানের যুগ্ম চেষ্টায় সেবার পুজো হল ধূলিহরে ৷ এবারে চলে যেতে হবে ইছামতী পেরিয়ে দন্ডিরহাটে ৷ হেমনলিনী যাবার কালে ধূলিহর গ্রামে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করলেন – তোমাদের সঙ্গে আমার শেষ দুর্গাপুজো হল ৷ আর ও বাংলায় গিয়ে মায়ের মুখ কখনো দেখব না ৷ দেশ যার যায় মাও তাকে ছেড়ে যায় ৷ সিটঙে দাঁড়িয়ে হিতেন ড্রাইভারের গল্প শুনতে শুনতে না-দেখা প্রপিতামহীর যন্ত্রণাবিদ্ধ জেদ মনে পড়ল আমার ৷

হিতেনের ঠাকুরদা ও আমার প্রপিতামহী যেন দেশ ছাড়ার গল্প দিয়ে ভাইবোন হয়ে গেলেন ৷ নতুন দেশে আসার সময় একজন মুসলমানের দা-এর কোপ খেয়েছিলেন ৷ আর একজনকে মুসলমানরা ভালোবাসায় স্বদেশে শেষবারের মতো দুর্গাদর্শন করিয়েছিল ৷ অথচ কী আশ্চর্য ! যন্ত্রণা পাওয়ায় দুজনের পাল্লা সমান ! কী নিঠুর বিভাজন রে ভাই !

হিতেনের গল্প ডানা আরো খুলল সিটঙের কচি কমলার গাছের ডালে ৷

হিতেনের ঠাকুরদার অসহায় অবস্থা দেখে কিংবা সৌজন্য দেখে কেন জানি আসামের মানুষ আপন করে নিয়েছিল ঠাকুরদাকে ৷ ওখানেই ব্যবসাপাতি করলেন -তারপর বাড়িঘর সবকিছু আসামে ৷ শুধু কঠোর নির্দেশ রইল – ছেলে যেন না শেখে বাংলা ৷ ফলত হিতেনের বাবা ও হিতেন কেউই বাংলা শিখল না ৷ হিতেনের কথায় কোভিডের পর মাঝারি ব্যবসায়ীদের আর্থিক ক্ষতি হল ৷ বাপ মা নিয়ে হিতেন এল শিলিগুড়ি ও একটা গাড়ি কিনল ৷ পাহাড়ে ভ্রমনার্থী নিয়ে যাতায়াত করবে ৷

যাঁর দোকানে গাড়ি কিনল সে দোকানের মালিক বলল – বাংলাদেশে এসেছ হিতেন ৷ এবার তো শেখ নিজের ভাষা ৷ হিতেন বাংলা শিখল ৷ হিতেন হিন্দীও শিখল ৷ এক্ষণে পাঠকগণ আমরা তাহলে হিতেনের বিশেষণ দি বহুভাষী ৷ পশ্চিমবঙ্গ বহুরূপীতে ভরে গেছে ৷ হিতেনকে তাই কোনোমতেই বহুরূপী বলা যাবে না ৷ তাহলে তার এতকাল বাদে প্রায় বয়স্ক অবস্থায় মাতৃভাষা শেখার প্রয়াস মিছে হয়ে যাবে ৷

–এবার যাই হিতেন ৷

হিতেন হাসল —

রবীন্দ্রনাথের কথা ভালো করে জানলাম দিদি শিলিগুড়ি এসে ৷ এত বড় কবি মাপতেও পারি না দিদি ৷ আসলে অনেক বছর পেরিয়ে বাংলা শিখলাম তো ! মা বলে – বাংলা শিখলি শিখলি ! কাজে কম্মে হিন্দি বলছিস , বলছিস ! আবার নেপালী বই খুলে বসিস কেন সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ৷ আমি কী বলি জানেন দিদি ? এত্তবড় কবির দেশ ৷ সে দেশের মানুষ দুচারটে ভাষা বেশি শিখলে ক্ষতি কী ! তাছাড়া দিদি আমি নেপালীতে কথা বললে সিঁটঙের এই মেয়েরা খুব খুশি হয় ৷ ভাবে ওদের ভাষায় কথা বলে ওদের সম্মান দিচ্ছি ৷ দেশ আমার এই নিয়ে তিনটে হল ৷ ভাষাও তিনটে হোক ….

ছেলেটা এত হাসে ! এরমধ্যে আবার নিজের কাস্টমারের সঙ্গে গাড়ির ভাড়া নিয়ে ঝগড়া শুরু করে দিল ৷ খাইমাই করে চেঁচাচ্ছে হিতেন ..

ও তার মানবভাষা ৷
ও তার মনভাসা –একদেশ থেকে ভিনদেশ ৷

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
1 Comment
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Sulata
Sulata
3 months ago

দেশ বিদেশের ভাষা ভিন্ন হলেও মানুষের মনের ভাষা সে যে চিরকালের চিরদিনের। চিরনির্ভর
চিরবন্ধু চিরসখা।ভ্রমণের আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এই অনুভব রঙিন হয়ে উঠছে।অভিনন্দন।