শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

মেঘদূত ভাবানুবাদ (পর্ব – ৯)

পূর্বকথনঃ
ধনপতি কুবের। কৈলাসে তার আবাস। নগরীর নাম অলকা। পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের ধাম। সুউচ্চ প্রাসাদ ভবন নগরীর আকাশকে স্পর্শ করছে। ভবনের ছাদ শিখীর নৃত্যে ছন্দিত। মধুপ গুঞ্জরিত শতশতদলে সরোবরগুলি সদা আন্দোলিত। রাত্রি নিত্য জ্যোৎস্নাজড়িত। আনন্দাশ্রুছাড়া নয়নসলিল সেখানে বিরল। আর বয়স তো যৌবনেই আবদ্ধ। কুবেরের কর্মসচিব যক্ষ। তরুণবয়স সদ্যপরিণীত। সুন্দরী বধূটি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা, তন্বী, শিখরীদশনা,পাকা বিম্বফলের মতো অধর। হরিণনয়না, ক্ষীণকটি, নিম্ননাভি। যক্ষের কাজে ঘটে প্রমাদ। মন চলে যায় নিজ কক্ষের বাতায়নপথে। তার কর্মশৈথিল্যে ক্রুদ্ধ কুবের ধৈর্য হারালেন। নির্বাসন দিলেন অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে ।একাকী যক্ষ চলে এলেন সেই আশ্রমে। ক্ষীণদেহ, প্রিয়াবিযুক্ত। কণকবলয় হাত থেকে যাচ্ছে খুলে। ঘনিয়ে এল নীল নব মেঘমালা নিয়ে আষাঢ় মাস।

জনপদে যবে প্রবেশিবে তুমি ব্রহ্মাবর্তনাম,

দেখিবে ক্ষাত্রসংঘাতক্ষত কুরুক্ষেত্র ধাম।

শতদলপরে বর্ষণসম তব,

রাজন্যগণে বিদ্ধ করেন অর্জুন পান্ডব।

স্বজনের প্রতি প্রীতি পরবশ বলরাম,

ত্যজিয়াছিলেন রেবতীলোচন বিম্বিতসুরাপান

সরস্বতীর স্বাদু জলপানে তৃপ্ত তাঁহারই সম,

বাহিরে কৃষ্ণ, অন্তরে শুচি হইও হে অনুপম।

কনখল থেকে নাতিদূরস্থ হিমালয় অবতীর্ণা

গঙ্গাসমীপে যাইও হে মেঘ, জহ্নুমুনির কন্যা।

একশত ষাট সগরতনয় যাহার পুণ্যপরশে,

চেতনা লভিয়া স্বর্গে গমন করিল পরম হরষে।

গৌরীর মুখভ্রূকুটীরে নদী, ফেনহাসে উপহসি;

তরঙ্গকর প্রসরিয়া যেন পরশেন শিরঃশশী।

অম্বরে নীল পশ্চাৎ রাখি গজসম অমরার,

পান কোর মেঘ, স্ফটিকস্বচ্ছ জল তুমি গঙ্গার,

তব শ্যাম ছায়া প্রতিবিম্বিত হলে গঙ্গার জলে।

অস্থানে যেন মিলিবে গঙ্গা কালো যমুনার কোলে।

গঙ্গার সেই আদি স্রোতোধারা মৃগনাভি-সুরভিত,

তুষারশুভ্র সে গিরিশিখরে ক্ষণিক বিশ্রামিত;

হরবৃষভের শৃঙ্গোৎখাত মৃত্তিকাশ্যাম মেঘ

সমাসীন হলে ধবলশিখর শোভিবে অতুলনীয়।

বনাগ্নি যদি জ্বলে ওঠে সেথা তীব্র ঝড়ের বেগে,

চমরী গাভীর পুচ্ছের কেশে অনল যদি বা লাগে,

নিবারিও ক্লেশ তুমি তাহাদের তব বর্ষণধারে।

মহতের ধন হয় সার্থক আর্তজনের ত্রাণে।

সেথা প্রস্তরে আছে চিহ্নিত চন্দ্রশেখর – চরণপাত,

শ্রদ্ধানম্র সিদ্ধেরা পূজে অর্ঘ্যপূর্ণ দুইটি হাত,

সেই পর্বতে উপনীত হয়ে করিও সে দেবে নমস্কার।

অপগতপাপ হবে দর্শনে, মরণান্তেও তিনিই সার।

বায়ুপূর্ণিত কীচকের বাঁশি বাজিবে মধুর রবে,

ত্রিপুরবিজয় সঙ্গীত গায় কিন্নরী মিলি সবে,

গিরিগুহাতটে ধ্বনিত তোমার দুন্দুভি গরজন,

মিলিলে সেথায় সার্থক হবে পশুপতি আরাধন।

(ক্রমশ)

[পর্ব-৮]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.