শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

“তোমার রঙে রঙে রাঙা হল”

দোহাই আপনাদের, এই পোষ্টের মধ্যে দয়া করে কেউ রাজনীতি খুঁজবেন না। এই পোষ্টের আলোচ্য বিষয় রঙ — মূলত একটি বিশেষ রঙ: লাল। কিন্তু কোন রাজনৈতিক মতবাদকে মহিমান্বিত করা বা খণ্ডন করা আদৌ আমার উদ্দেশ্য নয়। নিতান্ত লঘুরসের এই রচনাকে কেউ রংবাজি বলতে চান বলুন, কিন্তু রাজনীতি নৈব নৈব চ।

আমরা প্রথমে দেখব আমাদের সংস্কৃতি এবং সেই সঙ্গে পাশ্চাত্যের সংস্কৃতির যে দিকটির সঙ্গে আমরা সাধারণ বাঙালিরা পরিচিত সেখানে লালের স্থান কোথায়। আমরা দেখব লালের বিভিন্ন আলঙ্কারিক বা প্রতীকী প্রয়োগ — যেমন বিভিন্ন প্রবচনে এই বিশেষণটির প্রয়োগ, বা বিভিন্ন সামাজিক পরস্থিতিতে এই বর্ণের বস্তুর ব্যবহারের রীতি।

এখন বলে রাখি আমি আমার অতি সীমিত জ্ঞানে শুধু আমার জানা প্রবচন এবং সামাজিক রীতিনীতির কথাই উল্লেখ করেছি। হয়তো তার মধ্যেও কিছু বাদ পড়ে থাকতে পারে। এখানে সুধী পাঠক যদি সংযোজন করেন তবে কৃতজ্ঞ থাকব।

এই আলোচনার সমাপ্তি ঘটবে যাকে ঘিরে বাঙালির সব ভাবনার শুরু এবং শেষ সেই রবীন্দ্রনাথেই। আলোচ্য রঙটি সম্বন্ধে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁর প্রিয় রঙ — তাঁর বর্ণভাবনার প্রসঙ্গটি দ্রুত একবার ছুঁয়ে যাব।

এখানেও সুধী পাঠকবর্গের কাছ থেকে সংযোজন আশা করছি। আর যারা রবীন্দ্রনাথের গানের উপর আমার লেখা দেখে দেখে বিরক্ত হয়ে গেছেন তাঁদের উদ্দেশে বলি এবার একটু স্বাদবদলের চেষ্টা করেছি।


রাজনৈতিক স্তরে লাল কারও কাছে বিপ্লবী চেতনার প্রতীক, মুক্তির প্রতীক, কারও কাছে আবার সন্ত্রসের প্রতীক। কারা ঠিক বা কারা ভুল তা এখানে বিচার্য নয়। কিন্তু এই রাজনৈতিক দর্শনের যারা সমর্থক, যারা বিরোধী, কোনপক্ষই অস্বীকার করতে পারবেন না যে রাজনীতির পরিসরের বাইরেও এই রঙকে ঘিরে জড়িয়ে আছে বহু বিচিত্র, বিপরীত অনুষঙ্গ — কখনও ইতিবাচক, কখনও নেতিবাচক। আমরা দেখব এমন অনুষঙ্গবৈচিত্র্য অন্য কোন রঙের নেই।

লালের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বোধহয় সহজাত। শিশুর চেতনার পরিপূর্ণ উন্মেষের পূর্বে এই বর্ণের বস্তুর প্রতি সে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আকৃষ্ট হয়। তাই শিশুর ব্যবহার্য সামগ্রীতে— খেলনা (পুতুল, বল, ঝুমঝুমি…), পরিধেয় (জামা, জুতো) — সবেতেই চিরাচরিতভাবে লালেরই আধিপত্য। আজকাল অবশ্য উক্ত পণ্যসম্ভারে বিপুল বর্ণবৈচিত্র্য দেখা যায়। কিন্তু একক যদি কোন রঙ বেছে নিতে দেওয়া হয় তাহলে এখনকার দিনের শিশুও লালের প্রতি আকৃষ্ট হবে বলেই আমার মনে হয়েছে। লালের এমন মনোরঞ্জক ভূমিকার স্মরণীয় দৃষ্টান্ত হল শৈশবে বহুশ্রুত এই ছড়াটি:

“খোকাবাবু যায় / লাল জুতো পায় / বড় বড় দিদিরা / উঁকি মেরে চায়।”

বাস্তবিক এই “ছেলে ভুলানো” ছড়ার সম্বন্ধে লিঙ্গবৈষম্যের অভিযোগ তোলা যেতে পারে। এই লাল জুতো দেখে বড় বড় দিদিদের হয়তো তাদের খুকুমণি থাকার সময়ের কথা মনে পড়ে যায়। সেইসময়ে বহু পরিবারে তাদের পায়ে দেওয়ার জুতোই জুটত না, সব ভালো ভালো জিনিষ তো খোকাবাবুরই প্রাপ্য। তবে নিঃসন্দেহে বলা চলে, জুতোর রঙ শুধু বড় বড় দিদিদেরই নয়, বড় বড় দাদাদেরও ঈর্ষারও উদ্রেক করবে। লাল জুতোর বদলে কালো জুতো — এই বর্ণপরিবর্তন তো জীবনের এক পর্বান্তরের ইঙ্গিত। লাল জুতোর সঙ্গে জড়িয়ে প্রথম চরণসম্পাতের অনাবিল আনন্দ। আর কালো জুতো মানেই তো পায়ের বেড়ি, লাল জুতোর মত সে তো শিশুর সাজসজ্জার উপকরণ নয়, সে তো স্কুল ইউনিফর্মের অঙ্গ। আনন্দময় শৈশবের অবসান, স্কুলজীবনের শুরু, বড় হওয়ার প্রথম ধাপ।

আমাদের দেশি ছড়ায় পায়ের জুতোর রঙের সমান্তরালে মনে আসে পাশ্চাত্য রূপকথায় মাথার টুপির কথা। লাল টুপির প্রতি প্রবল আকর্ষণের কারণে গ্রামের ছোট্ট মেয়েটির নাম হয়ে গেল Little Red Riding Hood. পাশ্চাত্য রূপকথায় (অন্তত সবচেয়ে পরিচিত আখ্যানগুলির মধ্যে) নামের মধ্যে বর্ণের উপস্থিতির আর একটিমাত্র দৃষ্টান্ত দেখা যায় : Snow White.কিন্তু এখানে শিশুকন্যার নামকরণে তার নিজস্ব কোন ভূমিকা নেই, নামটি তার মায়ের পছন্দের। শিশুর নিজস্ব ভালোবাসার কারণে যে রঙ তার নামের মধ্যেই স্থান করে নিতে পারে তা হল লাল এবং শুধুই লাল। দেশে বিদেশে, শিশুর পায়ের জুতো থেকে মাথার টুপি পর্যন্ত সর্বত্র লালেরই প্রাধান্য। আর সেই কারণেই সান্তা ক্লজও আপাদমস্তক লাল পোষাকে আবৃত।

শিশুর বর্ণচেতনায় লালের যে গুরুত্ব সেই ধারা জীবনের পরবর্তী সব অধ্যায়ে অব্যাহত থাকে। লালের প্রতি শিশুর অনুভূতির প্রাবল্য পরিণত মনে আরও জটিল রূপ নেয়। বিভিন্ন সময়ে এই রঙকে ঘিরে সঞ্চারিত হয় অনুভূতির নানা বৈচিত্র্য — যা এই রঙের গুরুত্বেরই পরিচয়বাহী। তারই বহিঃপ্রকাশ নানা সামাজিক রীতিনীতির মধ্যে।

শিশুর মত নববধূর সাজসজ্জায়, প্রসাধনেও লালেরই প্রাধান্য— লাল বেনারসি, লাল চেলি, লাল পলা, লাল সিঁদুর। আবার তান্ত্রিক বা কাপালিকের পরিধেয় রক্তবস্ত্র। বধূর লালাটে সীমন্ত শোভমান যে লাল সিঁদুরের সঙ্গে বিজড়িত গার্হস্থ্য জীবনের মাধুর্য, ডাকাতের কপালের সেই সিঁদুরই আবার গভীর ত্রাসে সঞ্চার করে। অনুরূপ অনুভূতির বৈপরীত্য সঞ্চারিত হয় নববধূর এবং তান্ত্রিক বা কাপালিকের পরিধেয় বস্ত্রের রঙ ঘিরে।

Red letter dayর ধারণা বাংলায় গড়ে না উঠলেও বাংলা ক্যালেণ্ডারেও ছুটির দিনগুলি চিহ্নিত করা হয় লাল রঙে। অথচ যে রঙে অবকশের মুহূর্ত, উপভোগের মুহূর্ত নির্দেশ করে সেই রঙই আবার দৈনন্দিন যানচলাচল ব্যবস্থায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে বিপদসঙ্কেতবাহী হয়ে দেখা দেয়। বর্তমানে করোনা ভাইরাস আক্রমণের পটভূমিতে লালের এই ভূমিকার কথা আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। যারা এই মুহূর্তে red zone এ বসবাস করছেন তাঁদের কাছে লালের চেয়ে অপ্রিয় রঙ আর কিছু নেই। এখানে লক্ষণীয় “লাল সতর্কতা” শব্দবন্ধটি বাংলায় দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহীত হলেও red zoneএর বঙ্গানুবাদ এখনও ঘটে নি।

ত্রাস বা বিপদের সঙ্কেতবাহী লাল সেবা বা আর্তত্রাণের প্রতীকও হতে পারে। প্রথমেই মনে আসে লাল রঙের ক্রশচিহ্নের কথা। পীড়িত ও বিপর্যস্ত মানুষের সেবায় নিয়োজিত বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত রেড ক্রস সংস্থার এই প্রতীকচিহ্নটি সর্বাপেক্ষা পরিচিত হলেও এই সংস্থার অন্যান্য স্বীকৃত প্রতীকচিহ্ন হল লাল অর্ধচন্দ্র, (Red Crescent), লাল স্ফটিক (Red Crystal) । আর একটি স্বীকৃত প্রতীক হল লাল সিংহ ও সূর্য (Red Lion and Sun)। স্বীকৃত প্রতীকচিহ্নের তালিকায় থাকলেও আজ শেষোক্ত প্রতীকচিহ্নটির ব্যবহার নেই। ইজরায়েল প্রতীকচিহ্নরূপে ডেভিডের লাল তারার (The Red Star of David) অনুরোধ করলেও তা স্বীকৃত হয় নি। রেড সংস্থার প্রতীক নিয়ে যতই মতান্তর থাকুক, দেশ কাল অনুসারে তার যতই রূপভেদ থাকুক, সমস্ত কিছুর ঐক্য হল রঙে। অন্যান্য সময়ে কোন কোন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অন্য প্রতীকের অনুরোধ করা হয়েছিল, তা স্বীকৃত হয় নি যেমন; লাল শিখা (ভূতপূর্ব শ্যামদেশ), লাল মেষশাবক (কঙ্গো) লাল সূর্য (পারস্য) লাল গণ্ডার (সুদান), লাল ত্রিভুজ (সুদান) ইত্যাদি।

প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রার্থিত প্রতীকের রঙ কিন্তু লাল। ১৮৬৩ সালে রেড ক্রস সংস্থার জন্মলগ্ন থেকে প্রতীকের লাল রঙ নিয়ে কখনও কোন প্রশ্ন ওঠে নি।

ব্যবসায়ে বিপুল লাভ হলে বলা হয়“লালে লাল হয়ে যাওয়া”। আবার দেউলিয়া হয়ে যাওয়া বোঝাতে বলা হয় “লালবাতি জ্বালা”। একই রঙ সর্বোচ্চ সাফল্য আবার চূড়ান্ত ব্যর্থতার প্রতীক হতে পারে। Red tapism এর বাংলা প্রতিরূপ সৃষ্টি না হলেও আমলাতান্ত্রিক নিয়মাবলীর কারণে অহেতুক বিলম্ব বোঝাতে লাল ফিতের বাঁধনের বা ফাঁসের কথা বলা হয়ে থাকে। মনে করা হয় ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনের পঞ্চম চার্লস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলি চিহ্নিত করার জন্য লাল ফিতে ব্যবহারের রীতি প্রথম প্রচলন করেন। আজকের দিনে সমস্ত সরকারী ফাইল বাঁধার জন্য যে লাল ফিতে ব্যবহার হয় এমন তো নয় কিন্তু সেই ভাষাগত উত্তরাধিকার আমরা আজও বহন করে চলেছি। যে লাল রঙ আদিতে ছিল গুরুত্বপূর্ণ সংরক্ষণের অনুষঙ্গবিজড়িত, কালক্রমে তাই হয়ে উঠল দীর্ঘসূত্রিতার প্রতীক।

সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারীকে লাল গালিচা বিছিয়ে সংবর্ধনা জানানোর রীতি দীর্ঘদিনের। তার সর্বপ্রথম দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় সম্ভবত এস্কাইলাসের “আগামেমনন” নাটকে ট্রয় থেকে প্রত্যাবৃত্ত আগামেমননকে হত্যার পূর্বে স্ত্রী ক্লুতাইমেনস্ত্রা কর্তৃক প্রদত্ত অভূতপূর্ব বিলাসবহুল সংবর্ধনার পরিকল্পনায়।

আজ সবসময় আক্ষরিক অর্থে লাল গালিচা বিছানো না হলেও red carpet treatment আলঙ্কারিক শব্দবন্ধটি ইংরজিতে স্থায়ী আসন নিয়েছে। আবার ফুটবল মাঠে কোন খেলোয়াড়কে অভব্য আচরণের জন্য বহিষ্কারের জন্য যে কার্ড দেখানো হয় তার রঙও লাল। সর্বোচ্চ সম্মানদ্যোতক এই লালই আবার চূড়ান্ত অসম্মানের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।

একটি ক্ষেত্রে লালরঙ বিশেষ অধিকার বা ক্ষমতার প্রতীক। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লাল কালি ব্যবহারের অধিকারী শুধু শিক্ষক। সংশোধনের জন্য, মূল্যায়নের জন্য এই রঙের ব্যবহার সর্বত্র প্রচলিত। পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা চিহ্নিত করা হয় লাল দাগ দিয়ে। মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এই রঙের ভূমিকা সম্পূর্ণভাবেই নেতিবাচক। তবে শিক্ষকের এই বিশেষ অধিকার তাঁর শিক্ষকতার পরিসরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেই পরিসরের বাইরে —- চিঠিপত্র লিখতে, কোন নথি প্রস্তুত করতে, স্বাক্ষর করতে এই রঙের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ।

ইংরাজিতে নিষিদ্ধ পল্লীকেও লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়: red light area. বাংলায় এই রীতি নেই। তবে মদকে ব্যঙ্গ করে “লাল জল” বলা হয়ে থাকে যদিও মদ মাত্রই লাল হয় এমন তো নয়।

পূর্ববর্তী বিভিন্ন উদাহরণগুলির মধ্যে একটা অন্তর্লীন ঐক্য ধরা পড়ে। আনন্দ হোক বা আতঙ্ক, সম্মান বা অসম্মান —- সমস্ত ক্ষেত্রেই সঞ্চারিত অনুভূতির তীব্রতা প্রকাশ পেয়েছে। লালের দৃষ্টি আকর্ষণী শক্তিই বোধহয় তার এই ব্যাপক প্রয়োগবৈচিত্র্যের কারণ। বৈষ্ণব কাব্যে আমরা এই বর্ণটির একটি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী ব্যবহার লক্ষ্য করি। চণ্ডীদাসের কাব্যে পূর্বরাগে রাধার প্রথাগত নীলাম্বরী রূপের পরিবর্তে দেখি ভিন্নতর এক রূপ :

“সদাই ধেয়ানে চাহে মেঘপানে, না চলে নয়নতারা

বিরতি আহারে রাঙা বাস পরে যেমত যোগিনী পারা।”

বিরহবিধুরা রাধা যখন অন্নজল ত্যাগ করেছে, যখন বিশ্বসংসারের প্রতি সামান্যতম আকর্ষণ অনুভব করছে না, তখন তার পরিধেয় বস্ত্রের রঙ লাল !!! এ তো তার অভিসারসাজ নয়, বৈচিত্র্য আনার জন্য নীলের পরিবর্তে লাল নির্বাচন করা হয় নি। এই বর্ণটি যে বৈচিত্র্যময় অনুভূতির সঞ্চার করে তার কোনটির সঙ্গেই এই চিত্রকল্পটি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। চিরাচরিতভাবে যে লাল রঙ অনুভূতির তীব্রতার প্রকাশবাহী, সেই বর্ণটিই বৈষ্ণবকবির ভাবনায় নিঃস্পৃহতা, ঔদাসীন্যের অভিব্যক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। নিতান্ত বিরল ব্যতিক্রমী প্রয়োগ সন্দেহ নেই, কিন্তু এই বর্ণের আবেদনবৈচিত্র্যের দৃষ্টান্তরূপে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।


বর্ণের পরিধির দুই চরম মেরুতে অবস্থানকারী সাদা এবং কালো বাদ দিলে যদি একসঙ্গে একাধিক রঙের নাম করতে হয় তবে বাংলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলা হয় “লাল, নীল, হলুদ, সবুজ”। দেখা যাচ্ছে লালেরই অগ্রাধিকার। জ্যেষ্ঠের নাম যখন লালকমল, কনিষ্ঠের নাম নীলকমল। রূপকথার গল্পে একইভাবে শোনা যায় লাল সুতো নীল সুতোর কথা।

সাদা কালো বাদ দিলে বাংলায় লাল হল একমাত্র বর্ণদ্যোতক বিশেষণ যার সঙ্গে ধ্বন্যাত্মক শব্দ ব্যবহার হতে পারে : টকটকে লাল/ টুকটুকে লাল।এই রঙের সঙ্গে যুক্ত দুটি ধ্বন্যাত্মক শব্দের মধ্যে যে সূক্ষ্ম তারতম্য রয়েছে “সাদা”“কালো”র ক্ষেত্রে কিন্তু তা অনুপস্থিত। “টকটকে”র মধ্য দিয়ে তীব্রতা প্রকাশ পায়, অন্যদিকে “টুকটুকে”র সঙ্গে মাধুর্যের অনুষঙ্গ বিজড়িত। কিন্তু“সাদা” শুধুই “ধবধবে সাদা”, কালো শুধুই “কুচকুচে কালো”। আর নীল, হলুদ, সবুজ বা অন্য কোন রঙের জন্য বাংলাতে কোন ধ্বন্যাত্মক শব্দই নেই।

“লাল”-এর সমার্থক “রাঙা” হল একমাত্র বর্ণদ্যোতক বিশেষণ যার থেকে ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়। যেমন ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য “রাঙানো” অসমাপিকা ক্রিয়ারূপ “রাঙিয়ে”, সমাপিকা রূপ “রাঙাব”,“রাঙাল” ইত্যাদি। কিন্তু নীল, হলুদ, সবুজ থেকে “নীলানো” “হলুদানো’ “সবুজানো” ইত্যাদি ক্রিয়াপদ গঠন করা যায় না।

ইংরাজিতে অবশ্য যেমন red >redden হয় তেমনি হয় white > whiten, black > blacken. তবে এছাড়া অন্য কোন বর্ণনির্দেশক বিশেষণ থেকে ইংরাজিতেও ক্রিয়াপদ গঠন করা যায় না। ফরাসি ভাষা অবশ্য তুলনায় কিছুটা সমদর্শী। সাদা কালো ছাড়াও “নীল,“হলুদ”, “সবুজ”, “বাদামি”এই বর্ণদ্যোতক বিশেষণগুলো থেকে ক্রিয়াপদ গঠন করা যায়।

“রাঙা বউ” বা “রাঙা টুকটুকে বউ” শব্দবন্ধে বিশেষণ “রাঙা” রক্তিম গাত্রবর্ণ নির্দেশ করে না। রাঙা এখানে দুধে আলতা অর্থেই ব্যবহৃত হয়, লালের সঙ্গে সাদার মিশেল। বলা চলে এখানে রঙের চেয়ে উল্লিখিত নারীর রূপলাবণ্যই বিশেষভাবে নির্দেশ করা হচ্ছে। এইখানে বিশেষভাবে উলেখ্য বহুশ্রুত এই ছড়াটিতে বিশেষণ “রাঙা”র প্রয়োগ।

দোল দোল দুলুনি / রাঙা মাথায় চিরুণি / বর আসবে এক্ষুণি/ নিয়ে যাবে তক্ষুণি…বলা বাহুল্য এখানে “রাঙা” কোন বর্ণ নির্দেশ করছে না। আজকাল অবশ্য আক্ষরিক অর্থেই রাঙা মাথা হতে পারে। রাঙা কেন, অনেক রঙেই চুল রঙিন করা সম্ভব। কিন্তু যে যুগে ছড়াটি রচিত হয়, যখন সৌন্দর্যের অন্যতম মানদণ্ড ছিল“মেঘবরণ কেশ” সেইসময় বর বোধহয় আক্ষরিক অর্থে“রাঙা মাথা” দেখলে মুগ্ধ হয়ে যেত না। লাল চুল কোনভাবেই কনেকে আকর্ষণীয় করে তুলত না। তেমন হলে বর হয়তো তক্ষুণি চলে যেত কনেকে না নিয়েই। সুতরাং এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে রাঙা তার প্রাথমিক অর্থের পরিসর অতিক্রম করে গেছে; প্রাথমিকভাবে বর্ণদ্যোতক এই বিশেষণ ”সুন্দর” বা “আকর্ষণীয়”র সমার্থক হয়ে উঠেছে।

“রাঙা”র অর্থগত সম্প্রসারণের আরো একটি উদাহরণ।এটি একমাত্র বর্ণদ্যোতক বিশেষণ যা বাংলার পারিবারিক সম্পর্কের মধ্যেও স্থান করে নিয়েছে। রাঙাদা, রাঙাদি, রাঙাবৌদি, রাঙাকাকা, রাঙামাসি, রাঙাপিসি, রাঙামামা ইত্যাদি ডাকগুলির সঙ্গে আমরা পরিচিত কিন্তু কখনও শুনি না নীলদা, হলুদমাসি, সবুজমামা, গোলাপিকাকা, ইত্যাদি। কোন কোন পরিবারে হয়তো তেমন ডাকের চল থাকতে পারে কিন্তু সেটা সম্পূর্ণভাবে সংশ্লিষ্ট পরিবারের নিজস্ব রীতি। বাংলাভাষায় শেষোক্ত সম্বোধনগুলি স্বীকৃত নয়, এখানে ”রাঙা”রই একচ্ছত্র আধিপত্য।

লাল, নীল হলুদ, সবুজ — বাঙালির বর্ণভাবনায় লালের ঠিক পরেই নীলের স্থান কিন্তু ব্যঞ্জনাবৈচিত্র্যে দুইয়ের মধ্যে কোন তুলনাই চলে না। বাংলায় সেই অর্থে নীলের কোন আলঙ্কারিক প্রয়োগ মনে করতে পারছি না। বাংলায় বিষের সঙ্গে নীলের অনুষঙ্গ রয়েছে কিন্তু তাকে আলঙ্কারিক প্রয়োগ বলা চলে না।

সামান্য প্রয়োগবৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায় ইংরাজিতে। একদিকে blue blood অন্যদিকে blue film. একই রঙ কখনও আভিজাত্যের প্রতীক, কখনও আবার অশ্লীলতাদ্যোতক।

আলঙ্কারিক প্রয়োগ বা দৈনন্দিন জীবনে সংশ্লিষ্ট বর্ণযুক্ত বস্তুর ব্যবহারে পরবর্তী দুটি রঙ একমাত্রিক ব্যঞ্জনাবাহী। হলুদ রংটি নেতিবাচক অনুষঙ্গবাহী। বাংলায় এই রঙটির কোন আলঙ্কারিক প্রয়োগের কথা মনে করতে পারছি না। ইংরাজিতে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এমন একটি প্রয়োগ হয় : yellow journalism. ক্রীড়াক্ষেত্রেও এই বর্ণটি নেতিবাচক অনুষঙ্গবিজড়িত : মাঠে অভব্য আচরণের জন্য সতর্কীকরণের জন্য প্রথম যে কার্ড প্রদর্শন করা হয় তার রঙটি হলুদ। এইক্ষেত্রে ফরাসিতে ব্যবহৃত একটি শব্দবন্ধ প্রাসঙ্গিক : বাংলায় আক্ষরিক অনুবাদ করলে হবে“হলুদ হাসি”। চেষ্টাকৃত হাসি নির্দেশ করতে এই শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়। হলুদের কোন ইতিবাচক অনুষঙ্গবাহী ব্যবহার মনে করতে পারছি না।

“সবুজ”এর যত ব্যবহার স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনে আসে সবই ইতিবাচক অনুষঙ্গবিজড়িত। এই রঙটি চিরাচরিতভাবে তারুণ্যের প্রতীক। ইংরাজির অনুকরণে সৃষ্ট “সবুজ সঙ্কেত” (অনুমোদন অর্থে) শব্দবন্ধটি বাংলায় দীর্ঘদিন ধরেই স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। আজ পরিবেশচর্চার প্রসারের যুগে সবুজ একটা অন্য মাত্রা পেয়েছে; এই রঙটির সঙ্গে বিজড়িত বৃক্ষরোপণ তথা পরিবেশ সংরক্ষণের অনুষঙ্গ।

সাম্প্রতিককালে শুধুমাত্র বিশেষণ “সবুজ” থেকে বিশেষ্যপদ গঠন করা হয়: সবুজায়ন। এমনটা অন্য কোন বর্ণদ্যোতক বিশেষণের ক্ষেত্রে এখনও হয় না, এমনকি“লাল” বা “রাঙা”র ক্ষেত্রেও নয় (বাংলায় “লালায়ন” বা “রাঙায়ন” হয় না)। এখানে ফরাসিতে একটি ভিন্নতর প্রয়োগের কথা মনে আসে। ঈর্ষার তীব্রতা নির্দেশ করতে বলা হয়ে থাকে “ঈর্ষায় সবুজ হয়ে যাওয়া”। তবে সামগ্রিকভাবে বলা চলে সবুজের অনুষঙ্গ ইতিবাচক।

অন্যান্য রঙের মধ্যে “গৈরিক” এর রাজনৈতিক অনুষঙ্গ রয়েছে। আমরা আগেই বলেছি রাজনীতি এখানে আমাদের আলোচ্য নয়। রাজনৈতিক পরিসরের বাইরে গৈরিক বৈরাগ্যের অনুষঙ্গবাহী, অন্য কোন বিপরীত অনুষঙ্গ এই রঙের সঙ্গে বিজড়িত নয়।

ফেলে আসা করোনা অতিমারীর যুগে “কমলা” রঙ কিছুটা গুরুত্ব পেয়েছিল। করোনা সংক্রমণের তীব্রতা অনুসারে অঞ্চলবিভাজনের ক্ষেত্রে red zone এবং green zoneএর মাঝে নির্দিষ্ট হয়েছিল orange zone. এছাড়া অন্যন্য রঙের তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রতীকী বা আলঙ্কারিক প্রয়োগ আছে বলে আমার জানা নেই।

এবার রঙ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের অনুভূতির প্রসঙ্গে আসি। রবীন্দ্রনাথের কাছের মানুষদের বিবরণ থেকে জানা যায় তাঁর সর্বাপেক্ষা প্রিয় রঙ ছিল নীল।

নির্মলকুমারী মহলানবিশ (বাইশে শ্রাবণ, পৃ ৩৫) জানিয়েছেন :“… তিনি নীল রঙের বড় ভক্ত ছিলেন। বলতেন, সব রঙের মধ্যে নীল রঙটাই আমার মনকে বেশী করে নাড়া দেয়।“

সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ আংশিক বর্ণান্ধ ছিলেনঃ “পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল যে উনি রঙ-কানা ছিলেন।… লাল রঙটা বেশি চোখে পড়তো না, মানে লাল আর সবুজের বেশি পার্থক্য বুঝতে পারতেন না। কিন্তু কোনো জায়গায় নীলের একটু আভাসমাত্র থাকলেও সেটি তাঁর দৃষ্টি এড়াতো না। বাগান ঘাসের মধ্যেও খুব ছোট নীল রঙের জংলী ফুল ফুটে থাকলে ঠিক ওর চোখে পড়তো। … অথচ আমরা হয়তো খুব লক্ষ্য করেও ফুলটি খুঁজে বের করতে মুশকিলে পড়তাম।“

রবীন্দ্রনাথের বর্ণান্ধতা সম্বন্ধে তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি তুলে ধরেছেন রানী চন্দ (গুরুদেব, পৃ ১২৫): “গুরুদেব বলতেন তিনি নাকি রঙ-কানা, বিশেষ করে লাল রঙটা নাকি তার চোখেই পড়ে না।”

নীল রঙের প্রতি কবির অনুভূতি সম্বন্ধে শ্রীমতী মহলানবিশ যা বলেছেন শ্রীমতী চন্দের রচনাতেও তাঁর সমর্থন মেলে।

“… দেখেছি অতি হালকা নীলও তাঁর চোখ এড়ায় না। একেবারে বিদেশে কোথায় যেন তিনি দেখেছেন অজস্র ছোটো ছোটো নীলফুল ফুটে আছে রেল-লাইনের দুধারের ঘাসে। গুরুদেব বলতেন, আমি যত বউমাদের ডেকে ডেকে সে ফুল দেখাচ্ছি তারা তা দেখতেই পাচ্ছিলেন না। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছিলুম এমন রঙও লোকের দৃষ্টি এড়ায়!”

লাল ও নীলের তুলনামূলক আলোচনা করে রবীন্দ্রনাথ যা বলেছেন শ্রীমতী মহলানবিশের বিবরণে তার উলেখ পাওয়া যায় :

“নীল রঙটা যে পৃথিবীর রঙ, আকাশের শান্তির রঙ তাই ওটার মধ্যে আমার চোখ ডুবে যায়; আর লাল রঙটা রক্তের রঙ, আগুনের রঙ, প্রলয়ের রঙ, মৃত্যুর রঙ — কাজেই বেশি না দেখতে পেলে দোষ কি?”

প্রশ্ন ওঠে লাল সম্বন্ধে কবি যা বলেছেন সে কি তার প্রকৃত মনোভাব নাকি শুধুমাত্র তর্ক করার আনন্দেই তিনি এমন কথা বলেছেন।

এই বিষয়ে রানী চন্দও বিস্ময় প্রকাশ করেছেনঃ দেখেছি গুরুদেবের ছবিতে লালের প্রাচুর্য, তবু নাকি লাল রঙ তাঁর চোখে পড়ত না। অথচ নীল রঙ দেবার বেলায় কত কার্পণ্য করতেন। সে কথা বলাতে কয়েকটা ছবিতে নীল রঙ ঢেলে দিলেন, যেন জোর করেই লাগালেন রঙ।“

নিজের ছবির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কাল্পনিক সংলাপের যে উল্লেখ পাওয়া যায় রানী তাও এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক।

“ছবি আঁকতে আঁকতে ছবির সঙ্গে কথা কইতেন কত : কি গো মুখ ভার করে আছ কেন ? আর-একটু রঙ চাই তোমার? সবুজ রঙটা তোমার পছন্দ হল না বুঝি? আচ্ছা এই নাও লাল।”

এখানেও সেই লালেরই গুরুত্ব।

প্রশ্ন রয়েই যায় রবীন্দ্রনাথ লাল সম্বন্ধে যা বলেছিলেন সে কি সত্যিই তাঁর মনের কথা?


রঙ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের যে মনোভাব নিকটজনেদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপচারিতায় প্রকাশিত তার প্রতিফলন তাঁর সৃষ্টিতে কিভাবে ঘটেছে তা দীর্ঘ গবেষণাসাপেক্ষ। এমন একটি বিষয়ের উপর মন্তব্য করার মত ধৃষ্টতা আমার নেই। আমি কেবল তাঁর বিপুল সৃষ্টির একটি অতি ক্ষুদ্র অংশের উপর আলোকপাত করার চেষ্টা করব। প্রাথমিক পর্যালোচনার পর শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় লাল রঙের যে স্থান দেখেছি তা আমাকে বিস্মিত করেছে। জানিনা এ কি নিছক সমাপতন নাকি এর গভীরতর কোন তাৎপর্য আছে।

রবীন্দ্রনাথ তাঁর “ইংরাজি সহজশিক্ষা” গ্রন্থের প্রথম ভাগে ইংরাজি ব্যাকরণরীতি ব্যাখ্যা করতে যত উদাহরণবাক্য ব্যবহার করেছেন, এবং যত বাক্য বা শব্দবন্ধ অনুবাদ করতে দিয়েছেন তার মধ্যে ব্যবহৃত বিভিন্ন বর্ণবাচক বিশেষণের সংখ্যার একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যাকঃ

বর্ণবাচক বিশেষণ (বাংলা/ ইংরাজি)বিভিন্ন উদাহরণবাক্য বা অনুশীলনবাক্যে প্রয়োগসংখ্যা
লাল / red১৭ + ২৩= ৪০
সাদা / white৪ + ৩ = ৭
কালো/ black২ + ২ = ৪
সবুজ / green২ + ১ = ৩
নীল / blue১ + ১ = ২
হলুদ / yellow০ + ১ = ১

দেখা যাচ্ছে যে লাল রঙ “প্রলয়ের রঙ মৃত্যুর রঙ”, সেই রঙই শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছে। কেউ বলতে পারেন যে সংখ্যাই এক্ষেত্রে একমাত্র বিচার্য নয়। কিন্তু একথা তো অনস্বীকার্য যে লালরঙযুক্ত বস্তু বা প্রাণী রবীন্দ্রনাথের চিন্তার বৃহত্তর অংশ জুড়ে রয়েছে। অন্য সমস্ত রঙ লালের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। যে নীল রঙ তাঁর নিকটজনেদের বয়ান অনুযায়ী তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সেই রঙের স্থান এখানে প্রায় সর্বনিম্নে। প্রয়োগসংখ্যার বিচারে তার স্থান “সাদা” “কালো” বা “সবুজ”এরও নীচে।

প্রথম পাঠে তিনি শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলা প্রতিরূপ সমেত কিছু ইংরাজি শব্দ বোর্ডে লিখে দিতে । যেমন, The man মানুষ, The boy ছেলে, The cat বিড়াল, ইত্যাদি। অনুশীলনীয় প্রথম শব্দতালিকায় একমাত্র বর্ণদ্যোতক বিশেষণ হল red /লাল। দ্বিতীয় পাঠে বিশেষণ সহযোগে বিশেষ্যের ব্যবহার শেখানো হয়েছে — সেখানেও শুধুমাত্র red / লাল-এর উপস্থিতি। পঞ্চদশ পাঠ পর্যন্ত এই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।

অবশ্য প্রতিটি পাঠেই red / লাল রয়েছে এমন নয়, কোন কোন ক্ষেত্রে একই পাঠে এই বিশেষণটির পুনরাবৃত্তি হয়েছে কিন্তু কোথাও লাল ছাড়া আর কোন রঙের উপস্থিতি দেখা যায় না। ষোড়শ পাঠে প্রথম অন্য কোন রঙের ব্যবহার দেখা যায়: সাদা। অনুবাদ করতে দেওয়া হয়েছে “বালকটির একটি সাদা মেষশাবক আছে।” তাঁর প্রিয় রঙ “নীল /blue” এসেছে কুড়ি নং পাঠে প্রথম ও শেষবার : blue stones, অনুবাদ করতে দেওয়া হয়েছে “নীল পাথরগুলি সুশ্রী।”

যখন ইংরাজির কোন বাক্যগঠনরীতি ব্যাখ্যা করতে একাধিক উদাহরণবাক্য ব্যবহার করতে হয়েছে তখনও red বা লালেরই আধিপত্য দেখা যায়। কুড়ি নং পাঠে বহুবচন বিশেষ্যের সঙ্গে বিশেষণের প্রয়োগ শেখাতে দশটি উদাহরণবাক্য ব্যবহার করা হয়েছে; তার মধ্যে বিশেষ্য ballএর সঙ্গে red বিশেষণটি নয়বার ব্যবহার করা হয়েছে। সেখানে whiteএর ব্যবহার মাত্র দুইবার।“Are the big balls white? No, the big balls are not white, the big balls are red”. এর ঠিক পরের পাঠেই শেখানো হয়েছে ইংরাজিতে কিভাবে একাধিক বস্তু বা প্রাণীর অবস্থান নির্দেশ করা হয়। এখানে এক অংশে নয়টি প্রশ্নবাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। তার মধ্যে সাতটিতেই আছে “red” towel অন্য কোন বর্ণযুক্ত বস্তুর একটি উদাহরণও দেওয়া হয়নি।

লাল বা red এর গুরুত্ব কিন্তু শুধুমাত্র সংখ্যাধিক্যের কারণে নয়। একমাত্র লাল ছাড়া অন্য আর যে সমস্ত রঙনির্দেশক বিশেষণ বিভিন্ন পাঠে দেখা যায় তাদের কোনটির প্রয়োগে কোন অভিনবত্ব দেখা যায় না। যেমন সাদা : সাদা মেঘ, সাদা মেষশাবক ; কালো : কালো তক্তা, কালো ভল্লুক, black board; সবুজ: সবুজ পাথর, সবুজ কাঠি, green sticks নীল : নীল পাথর, blue stones; হলুদ : yellow flowers । উক্ত রঙযুক্ত বস্তু বা প্রাণী দেখতে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু লালরঙের ব্যবহার কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একদিকে আমরা দেখি আমাদের অতি পরিচিত লাল বল/red ball, লাল কালি, লাল দেয়াল, লাল গোলা, লাল তোয়ালে, তেমনি আমরা দেখি লাল বিড়াল/red cat, (২) লালকুকুর, (পাঠ ৬) লাল ছাগল, (পাঠ ৬) লাল গাভী(পাঠ ৬) , লাল সিংহ (পাঠ ১১) । শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কল্পনা শুধুই লালকে ঘিরেই উদ্দীপ্ত হয়ে উঠেছ। আরও আশ্চর্যের বিষয় যে নীল রঙ তাঁর কাছে প্রিয় ”আকাশের শান্তির রঙ”বলে সেই নীল রঙের আকা কোন ছবিই এই শিক্ষাগ্রন্থের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। আকাশের চিত্রকল্পটির সঙ্গে শুধু একবারমাত্র একটি বর্ণ যুক্ত হয়েছে এবং তা হল “লাল”। ১৫নং পাঠে অনুবাদ করতে দেওয়া হয়েছে “সুন্দর পাখি লাল আকাশে নাই।

লালের প্রতি এই অতিরিক্ত গুরুত্ব আরোপকে এই রঙের প্রতি বালকহৃদয়ের স্বতঃস্ফূর্ত আকর্ষণের স্বীকৃতি বলে ব্যাখ্যা করা বোধহয় ভুল হবে না। এই রঙ সম্বন্ধে তাঁর ব্যক্তিগত অনুভূতি যাই হোক না কেন, তাকে পরিহার করে শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ সম্ভবত শিক্ষার্থীর পছন্দকেই মর্যাদা দিয়েছেন। তাঁর নিজের প্রিয় রঙকে তিনি কোন বাড়তি গুরুত্ব দেন নি।

“রাজা” নাটকের পঞ্চম দৃশ্যে বসন্তোৎসব শেষে কুঞ্জদ্বারে ঠাকুরদার সঙ্গে উৎসবে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের কথোপকথনে লালরঙ সম্বন্ধ যে ভাবনবৈচিত্র্যের ছোঁওয়া পাওয়া যায় এই আলোচনায় তা বিশেষ প্রাসঙ্গিকঃ

“ঠাকুরদা। কী ভাই, হল তোমাদের?

প্রথম। খুব হল ঠাকুরদা। এই দেখো-না, একেবারে লালে লাল করে দিয়েছে। কেউ বাকি নেই।

ঠাকুরদা। বলিস কী। রাজাগুলোকে সুদ্ধ রাঙিয়েছে নাকি।

দ্বিতীয়। ওরে বাস রে! কাছে ঘেঁষে কে। তারা সব বেড়ার মধ্যে খাড়া হয়ে রইল।

ঠাকুরদা। হায় হায়, বড়ো ফাঁকিতে পড়েছে। একটুও রঙ ধরাতে পারলি নে? জোর করে ঢুকে পড়তে হয়।

তৃতীয়। ও দাদা, তাদের রাঙা সে আর-এক রঙের। তাদের চক্ষু রাঙা, তাদের পাইকগুলোর পাগড়ি রাঙা; তার উপরে খোলা তলোয়ারের যেরকম ভঙ্গি দেখলুম, একটু কাছে ঘেঁষলেই একেবারে চরম রাঙা রাঙিয়ে দিত।”

এই লাল রঙে একদিকে অভিব্যক্ত উৎসবের আনন্দের সার্বজনীনতা ও পরিব্যাপ্তি। এই রঙই পারে সমস্ত শ্রেণি-বিভেদকে ঘুচিয়ে দিয়ে আনন্দধারায় দেশকে উদ্বেল করে তুলতে — ঠাকুরদার প্রশ্নের মধ্যে সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত। আবার সেই লাল রঙই ক্ষমতার অভিমানের প্রতীক হয়ে, ত্রাসের প্রতীক হয়ে দেখা দেয়। তৃতীয় ব্যক্তির উক্তিতে লালের এই প্রকারভেদ, সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেমন আমরা দেখি একই লালরঙ কখনও ইতিবাচক কখনও নেতিবাচক অনুষঙ্গদ্যোতক এই অতি স্বল্পপরিসরে সেই বাস্তবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। নিকটজনেদের সঙ্গে আলাপচারিতায় যে রঙকে রবীন্দ্রনাথ শুধুই “রক্তের রঙ, প্রলয়ের রঙ, মৃত্যুর রঙ” রূপে অভিহিত করেছেন, এই সংলাপের মধ্যে যেমন সেই ভাবনার প্রকাশ রয়েছে, তেমনি একইসঙ্গে সেই রঙের আনন্দময় সমদর্শিতার অনুষঙ্গকেও তিনি সুস্পষ্ট স্বীকৃতি দিয়েছেন।


“রাজা” নাটকের উদ্ধৃতাংশের ঠিক পরে বাউলদের যে গানটি আছে তাই দিয়ে এই আলোচনার ইতি টানবঃ

“যা ছিল কালো ধলো”। এই গানের সবটুকু জুড়ে রাঙা বরণের জয়জয়কার।

“কালো –ধলো” — সাদা কালোর দ্বন্দ্বে গানটির সূচনা। এই প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথের গানে বিপরীতের প্রয়োগ সম্বন্ধে কিছু বলা প্রয়োজন। এখানে দুটি ধারা বিদ্যমান।

কিছু গানে আমরা দেখি দুই বিপ্রতীপের যুগল উপস্থিতি। যেমন হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, মিলন-বিরহ, জীবন-মৃত্যু। যেমন “মম চিত্তে নিতি নৃত্যে গানটিতে নৃত্যচ্ছন্দে বাঁধা পড়ে ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, মুক্তি-বন্ধন, জন্ম-মৃত্যু। এখানে প্রতিটি একক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজিত। এই বিপরীতের সহাবস্থানে জীবন ধরা পড়ে তার অন্তহীন বৈচিত্র্যে। রঙের আলোচনায় বিশেষ প্রাসঙ্গিক “দুই হাতে কালের মন্দিরা যে” এবং“সাদা কালোর দ্বন্দ্বে যে ওই ছন্দে নানান রঙ জাগে।”

এখানে দেখা যাচ্ছে সাদা ও কালোর সুস্পষ্ট স্বতন্ত্র সত্তা; দুইয়ের সীমানা সুস্পষ্টরূপে চিহ্নিত। দুইয়ের সংঘাতে নিহিত সব বর্ণবৈচিত্র্যের উৎস।

আর এক শ্রেণির গানে দেখা যায় দুই বিপ্রতীপের মধ্যবর্তী সব বিভাজনরেখা অবলুপ্ত হয়ে যায়। দুই একক। একে অন্যের প্রতিরূপ হয়ে ওঠে। এক মহান ঐকতানে তারা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়।

যেমন সুখ-দুঃখ নিয়ে কোন বৃহত্তর বৃত্ত রচিত হওয়ার পরিবর্তে দুঃখের পূর্ণ রূপান্তর ঘটে সুখে।

“এবার দুঃখ আমার অসীম পাথার পার হল যে, পার হল।

তোমার পায়ে এসে ঠেকল শেষে, সকল সুখের সার হল ॥”

অনুরূপ ভূমিকায় দেখি জীবন ও মৃত্যুকে “মেঘ বলেছে যাব যাব” গানটিতে।

“মরণ বলে আমি তোমার জীবনতরী বাই।”

এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত আমাদের আলোচ্য গানটির সূচনা হয়েছে সাদা কালোর বৈপরীত্যে। কিন্তু সেই সহাবস্থান সম্পূর্ণভাবেই অতীতের — যা “ছিল”… । এখন শুধু সাদা কালোই নয়, এখন সমস্ত বর্ণের বিভেদ, সমস্ত শ্রেণিবিন্যাস ঘুচে গেছে, সব বর্ণের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে গেছে একটি রঙে — রাঙা। এই একটি রঙের বন্যাধারা যেন সমস্ত কিছুকেই প্লাবিত করে দিয়েছে। এই রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠে শুধু বসন-ভূষণের মত মূর্ত বস্তু নয় স্বপ্নের মত, মনের মত অমূর্ত সত্তাকেও। বর্ণবৈচিত্র্য নয়, বর্ণের এক নীরব ঐকতান রচনাই রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য।

কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন এই গানে অভিব্যক্ত বর্ণভাবনা বাউলদের ভাবনা হতে পারে, সেই ভাবনাকেই হয়তো রবীন্দ্রনাথ তুলে ধরেছেন, এ রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত ভাবনা নাও হতে পারে। এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য নয় কেননা এই ভাবনাকে তো নাটকে আর কোথায় খণ্ডন করা হয় নি। রঙের নির্বাচনে শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের কিছু বাধ্যবাধকতা থেকে থাকতে পারে, শিক্ষার্থীর পছন্দকে তাঁকে গুরুত্ব দিতে হতে পারে, নাট্যকার রবীন্দ্রনাথের তো তেমন কোন বাধ্যবাধকতা থাকার কথা নয়। নিঃসন্দেহে বলা যায় লাল রঙকে রবীন্দ্রনাথ নিজেই নির্বাচন করেছেন সমস্ত রঙের ঐকতানের প্রতীকরূপে।

এরপরেও কি বলা যায় লাল রঙ রবীন্দ্রনাথের অপ্রিয় ছিল?

“যা ছিল কালো ধলো তোমার রঙে রঙে রাঙা হল।

যেমন রাঙাবরন তোমার চরণ তার সনে আর ভেদ না র’ল॥

রাঙা হল বসন ভূষণ, রাঙা হল শয়ন স্বপন–

মন হল কেমন দেখ্‌ রে, যেমন রাঙা কমল টলমল॥”


[কৃতজ্ঞতা স্বীকার : শ্রী তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় এবং শ্রী অনুপ হোম রায় মহাশয়কে। এটা অবশ্য বহুদিন আগের কথা। শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বাগানে ফোটা একটি ফুলের ছবি দিয়ে তাঁর নিজস্ব টাইমলাইনে একটি পোষ্ট করেন। ফুলটির লাল রঙের প্রতি তাঁর ভালবাসা জানাতে গিয়ে তিনি যা বলেন এবং তাঁর উত্তরে শ্রী হোম রায়ের মন্তব্য এবং শ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিমন্তব্য—- এখান থেকেই সূত্রপাত। লাল রংকে ঘিরে সুহৃদদ্বয়ের সেই উত্তর প্রত্যুত্তর বিনিময় (খুনসুটি বললেই যথার্থ হয়) দেখে ভাবনাটা মাথায় এসেছিল।]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.


0 0 votes
Article Rating
6 Comments
Oldest
Newest Most Voted
Inline Feedbacks
View all comments
Shouvik
Shouvik
3 months ago

সামান্য লঘু চলনে লেখাটি শুরু হলেও অচিরেই হাসি লোপ পেয়েছে পাঠকের। তার চেতনার রং তখন রাঙ্গা হয়ে উঠেছে। এত ব্যাপক পড়াশোনা রয়েছে এই একটি লেখার পশ্চাৎ পটে। কুর্নিশ। কিন্তু একটি অনুযোগ রয়ে গেল। লেখক আমাদের মত গণ্ডুশ মাত্র জলের মাছকে রসগোল্লা দেখিয়ে সটকে পড়িয়ে দিলেন।

সৌরভ হাওলাদার
সৌরভ হাওলাদার
3 months ago

আলোক বর্ণালী বেনিআসহকলা, যার শুরু বেগুনী এবং শেষে লাল। প্রত্যেকে রঙের নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য হয়। মানব মস্তিষ্ক মোটামুটি ৩৮০ থেকে ৭০০ ন্যানোমিটার দৈর্ঘ্য-র রঙকে চিহ্নিত করতে পারে, এইটি বেগুনি বা এইটি লাল।
এই লেখা থেকে সেই ভাবনাটিই উসকে দিল। সবচেয়ে লম্বা তরঙ্গ-দৈর্ঘ্য ৭০০ ন্যানোমিটারের অধিকারী, সে আর কেউ নয়, লাল। এই কারণেই লাল রঙ রেলপথ, সড়ক, জলপথ বা আকাশপথে চালকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয়। তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কারণে সবচেয়ে দূর থেকে এই লাল রঙই অন্য রঙের আগে দৃষ্টিগোচর হয়।

এমন চমৎকার বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

Last edited 3 months ago by সৌরভ হাওলাদার
Himadri Kumar Das Gupta
Himadri Kumar Das Gupta
3 months ago

বেশ লেখা। তবে আপনার সংকোচের কারণ নেই। আগে আবির বলতে তো লালই বুঝতাম -দলমত নির্বিশেষে।তারপর ১৯৭২ সালে কার মাথায় যে কী ভূত চাপল! দোলের দিন শান্তিনিকেতনের সেই রক্তিম পরিবেশকে একেবারেই এখন গ্রাস করে নিয়েছে নীল,সবু্‌জ,হলু্‌দ,গেরুয়া। সব রঙই আমাদের আপ্লুত করে। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে সবুজের আত্মীয়তাকে অস্বীকার করার স্পর্ধা কারই বা আছে ? কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের শিরায় শিরায় যা নিত্য প্রবাহিত তার রং কীভাবে পরিবর্তন সম্ভব বুঝি না!

অনুপ হোমরায়।
অনুপ হোমরায়।
3 months ago

নাগ মহাশয়’কে রক্তিম অভিনন্দন। লাল সেলাম। করোনা কালে রেড জোনের উল্লেখের সাথে রেড ভলান্টিয়ারদের স্বতঃস্ফূর্ততা অনুল্লিখিত রইলো। কৃষ্ণচূড়া, পলাশ না থাকলে বসন্ত লাল বসন্ত হতো না। বসন্তে প্রেম দিবসে উঠতি যুগলপ্রেমের রক্তিম মুখমণ্ডল বিচ্ছেদ হলেও আজীবন তাঁদের মনে থাকে। রাই সর্ষে ক্ষেতের হলুদ হরষিত আভরণ মোহিত করে।

Chandan Sen Gupta
Chandan Sen Gupta
3 months ago

লাল রংয়ের মাহাত্ম্য বর্ণনা পড়ে মোহিত হলাম।আপনার লেখার অনন্যতার মুগ্ধ পাঠক আমি।

Somen Dey
Somen Dey
3 months ago

দারুণ লেখা । একটা লাল সেলাম জানাতেই হচ্ছে ।যদিও সংযোজনের কোন জায়গাই আপনি রাখেন নি । তাও একটু বলি । লাল রঙ দেখলে ষাঁড়েরা খেপে যায় । ( যদিও প্রাণীতত্ববিদেরা অবশ্য অন্য কথা বলে ) । স্পেনের ম্যাটাডোররা তাই লাল  কাপড় দেখিয়ে ষাঁড়কে  খেপিয়ে  তোলে ।  Red rag to a bull তো ইংরেজিতে একটি ইডিয়মই হয়ে গেছে । অবশ্য এ দেশে কিছু  কিছু ষাঁড়ের ভক্তরাও লাল রঙ দেখে ক্ষেপে যায় । কিন্তু কিছুই তো করার নেই । লাল তো  সূর্যোদয়ের রঙ  । আর ওটা তো কোনো দিন বদলে দেওয়া যাবেনা ।