শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

মহাকবি কালিদাসকৃত মেঘদূতের বাংলা ভাবানুবাদ (পর্ব-৪)

পূর্বকথনঃ-

ধনপতি কুবের। কৈলাসে তার আবাস। নগরীর নাম অলকা। পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের ধাম। সুউচ্চ প্রাসাদ ভবন নগরীর আকাশকে স্পর্শ করছে। ভবনের ছাদ শিখীর নৃত্যে ছন্দিত। মধুপ গুঞ্জরিত শতশতদলে সরোবরগুলি সদা আন্দোলিত। রাত্রি নিত্য জ্যোৎস্নাজড়িত। আনন্দাশ্রুছাড়া নয়নসলিল সেখানে বিরল। আর বয়স তো যৌবনেই আবদ্ধ। কুবেরের কর্মসচিব যক্ষ। তরুণবয়স সদ্যপরিণীত। সুন্দরী বধূটি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা, তন্বী, শিখরীদশনা,পাকা বিম্বফলের মতো অধর। হরিণনয়না, ক্ষীণকটি, নিম্ননাভি। যক্ষের কাজে ঘটে প্রমাদ। মন চলে যায় নিজ কক্ষের বাতায়নপথে। তার কর্মশৈথিল্যে ক্রুদ্ধ কুবের ধৈর্য হারালেন। নির্বাসন দিলেন অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে ।একাকী যক্ষ চলে এলেন সেই আশ্রমে। ক্ষীণদেহ, প্রিয়াবিযুক্ত। কণকবলয় হাত থেকে যাচ্ছে খুলে। ঘনিয়ে এল নীল নব মেঘমালা নিয়ে আষাঢ় মাস।

চিত্র-কৃতজ্ঞতাঃ anandabazar.com, আন্তর্জাল-সংগ্রহ

বল্মীকাগ্র থেকে উত্থিত ইন্দ্রধনুর শোভা
হে জলদ, তব শ্যাম তনুঘেরি দেখাইবে মনোলোভা।
গোপবেশধারী শিখীবর্হতে বিষ্ণুর মতো সাজি,
উজল আভায় তব তনূখানি উজ্জ্বলতর আজি।
তব বর্ষণে ভালো কর্ষণ জনপদবধূ জানে,
ভ্রূবিলাসহীন সেই রমণীরা সরল দৃষ্টিদানে,
হেরিবে তোমারে স্নেহে উৎসুক প্রাণে।
পশ্চাৎ গিয়ে পশ্চিমমুখী আগে যেও মালভূমি,
পরে ধীরে ধীরে উত্তরগামী যাবে অলকায় তুমি।
প্রশমিততাপ সে আম্রকূট তব ধারাবর্ষণে,
ধারণ করিয়া রাখিবে তোমারে সুনিবিড় হর্ষণে।
প্রথমপ্রীতির স্মৃতিরে রাখিয়া মনে
ক্ষুদ্রও কভু করে না বিমুখ তার আশ্রিতজনে।
পর্বতসম যারা উন্নত হয়
তাহাদের কথা বলে কি বোঝানো যায়?
গগনবিহারী দেবদেবীগণ যবে,
হেরিবে তোমারে, দূর হতে মনে হবে,
এই পর্বত, ধরণীমাতার স্তন্য,
দেখিয়া তোমার রূপ মনোহর নয়ন করিবে ধন্য।
বনচরবধূব্রজিতকুঞ্জে থেকো ক্ষণেকের জন্য
জলধারাদানে লঘু হে জলদ, পথ হবে উত্তীর্ণ।
উপলবিশারি বিন্ধ্যপাহাড় তাহারই চরণপ্রান্তে
শীর্ণা তটিনী রেবা অনাদৃতা শায়িতা যেন একান্তে।

(ক্রমশ)

(পর্ব-৩)

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.