শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির আলোচনা ও চর্চা

মহাকবি কালিদাসকৃত মেঘদূতের বাংলা ভাবানুবাদ (পর্ব-২)

পূর্বকথনঃ-

ধনপতি কুবের। কৈলাসে তার আবাস। নগরীর নাম অলকা। পরিপূর্ণ সৌন্দর্যের ধাম। সুউচ্চ প্রাসাদ ভবন নগরীর আকাশকে স্পর্শ করছে। ভবনের ছাদ শিখীর নৃত্যে ছন্দিত। মধুপ গুঞ্জরিত শতশতদলে সরোবরগুলি সদা আন্দোলিত। রাত্রি নিত্য জ্যোৎস্নাজড়িত। আনন্দাশ্রুছাড়া নয়নসলিল সেখানে বিরল। আর বয়স তো যৌবনেই আবদ্ধ। কুবেরের কর্মসচিব যক্ষ। তরুণবয়স সদ্যপরিণীত। সুন্দরী বধূটি। তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা, তন্বী, শিখরীদশনা,পাকা বিম্বফলের মতো অধর। হরিণনয়না, ক্ষীণকটি, নিম্ননাভি। যক্ষের কাজে ঘটে প্রমাদ। মন চলে যায় নিজ কক্ষের বাতায়নপথে। তার কর্মশৈথিল্যে ক্রুদ্ধ কুবের ধৈর্য হারালেন। নির্বাসন দিলেন অলকা থেকে রামগিরি আশ্রমে ।একাকী যক্ষ চলে এলেন সেই আশ্রমে। ক্ষীণদেহ, প্রিয়াবিযুক্ত। কণকবলয় হাত থেকে যাচ্ছে খুলে। ঘনিয়ে এল নীল নব মেঘমালা নিয়ে আষাঢ় মাস।

মেঘদূত

ধূম্রকিরণজলবায়ুযোগে পুষ্ট
কোথা মেঘমালা কোথা মানবের সৃষ্ট
বিরহবারতা রাগ অনুরাগে ভরা
এ সকল ভেদ হল কোনখানে হারা
পাগলপরাণ হিসাব না করি তার
মেঘের দৌত্য যাচিল বারংবার।
এ জগতে যারা প্রিয়াবিরহেতে রয়
চেতনাচেতনে মূঢ় তারা অতিশয়।।

কামরূপী তুমি পুষ্করকুলে জাত
ইন্দ্রের সখা নিখিল ভুবনে খ্যাত,
বিধির বিধানে প্রিয়া হতে বহুদূরে
আমি মাগি তব সহায় করুণ সুরে,
ব্যর্থবাসনা হোক মহতের কাছে
বরং সে ভাল সফলতা কভু নয় অধমের কাছে।।

ওহে জলধর তাপিত শরণ তুমি
ধনপতিক্রোধে প্রিয়াবিরহিত আমি
কুবের আলয়ে অলকা পুরীতে আমার বারতাখানি
মম অনুরোধে পৌঁছিয়ে দেবে জানি,
বহিরঙ্গনে সেথা হরশিরোধৃত চন্দ্রকিরণমালা
সেথাকার যত ভবনের চূড়া আলোয় করেছে আলা।

পথিকবনিতা সরায়ে অলক উদ্ধত উড়ে পড়া
আকাশপথেতে হেরি যে তোমারে প্রাণ আশ্বাসে ভরা,
প্রভুর শাপেতে আমারই মতন নয় যারা পদানত
নিশ্চয় তারা প্রিয়ার নিকট হইবে প্রত্যাগত।
মন্থরগতি অনুকূল বায়ু পথের ঠিকানা কবে
তব বাম পাশে চাতকের দল গুঞ্জিবে মধুরবে,
বলাকার তুমি গর্ভধারণকাল,
সেই আনন্দে নয়নলোভন ঘেরিবে বলাকাদল।

[ছবি-কৃতজ্ঞতাঃ readbengalibooks.com, আন্তর্জাল]

Facebook Comments Box

আপনি এই পত্রিকা পড়ছেন জেনে ভাল লাগল।

নতুন লেখা বা ভিডিও সংযোজন, অথবা রবিচক্রের অন্যান্য খবরাখবর সম্পর্কে জানতে, ইমেল নথিভুক্ত করতে পারেন।

We don’t spam! Read our privacy policy for more information.